খ্রীষ্টই শেষ বিচারের বিচারকঃ খ্রীষ্টের পুনরুত্থানই তার বড় প্রমাণ
ভূমিকা :
সাধু পৌল তাঁর দ্বিতীয় প্রচার যাত্রায় গ্রীসের এথেন্সে প্রচার করার সময় বিশেষতঃ ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয় দার্শনিকসহ অনান্য লোকদের কাছে খ্রীষ্ট বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করেন। প্রচারের শুরু থেকেই তিনি সমস্ত মানুষের কাছে ঈশ্বরের দয়া বর্ণনা করেছেন। প্রচারের শেষে যখন মন পরিবর্তনের, বিচার ও পুনরুত্থানের কথা বলেছেন, তখন বিশেষতঃ পুনরুত্থানের কথা শুনে, এথেন্সের অধিকাংশ দার্শনিক উপহাস করেছিল। কিন্তু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান, শেষ বিচার ও মনের পরিবর্তন সুসমাচারের অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে এই তিনটি বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হবে।
গ্রীক দর্শন ও পৌত্তলিকদের পুনরুত্থান সম্পর্কে ধারণা : N.T Wright প্রথম শতকের গ্রীকদের পুনরুত্থান সর্ম্পকে বলেছিলেন, " Christianity was born into a world where its central claim was known to be false. Many believed that the dead were non-existent; outside judiasm, nobody believed in resurrection.” ( N.T Wright, Resurrection,35)অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে বুঝায় যিহূদী ধর্ম ছাড়া মৃতদের পুনরুত্থান শিক্ষা বিশ্বাস করত না। তাহলে তারা কী ধরনের শিক্ষা বিশ্বাস করত? দার্শনিক প্লেটো মনে করত,‘‘ The soul is imprisoned in the body like an other in a shell’’ (Plato, Phaecdrus 250c)| " অর্থাৎ তিনি বিশ্বাস করতেন আত্মার অমরত্ত্বে যা দেহে জেল খানার মত বন্দি থাকে। তাছাড়া, Aeschyluবলেছিলেন , "Once a man has died, and the dust has soaked up his blood, there is no resurrection.’’ (Aeschylus, Eumejides,)
সেই সময়ে গ্রীক ল্যাটিন বিশ্বে জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্য ছিল, " I wasn’t, I was, I am not, I don’t care’’। তাই উপরোক্ত কয়েকটি উদাহরণ থেকে বুঝা যায়, গ্রীক বা পৌত্তলিক বিশ্বে দৈহিক পুনরুত্থানের কোন গুরুত্ব বা বিশ্বাস ছিল না। যে কারণে গ্রীক দার্শনিকগণ পৌলের পুনরুত্থানের কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।
সেই সময়ে গ্রীক ল্যাটিন বিশ্বে জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্য ছিল, " I wasn’t, I was, I am not, I don’t care’’। তাই উপরোক্ত কয়েকটি উদাহরণ থেকে বুঝা যায়, গ্রীক বা পৌত্তলিক বিশ্বে দৈহিক পুনরুত্থানের কোন গুরুত্ব বা বিশ্বাস ছিল না। যে কারণে গ্রীক দার্শনিকগণ পৌলের পুনরুত্থানের কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।
🛑🌏🛑খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের সাথে শেষ বিচার ও মন পরিবর্তনের সম্পর্ক ঃ
#প্রথমত ঃ খ্রীষ্টের পুনরুত্থান ছাড়া ধার্মিক গণিত হওয়া সম্ভব না ঃ প্রভুর বাক্য বলে, ‘‘যীশু আমাদের পাপের নিমিত্ত সমর্পিত হইলেন, এবং আমাদের ধার্মিকগণনার নিমিত্ত উত্থাপিত হইলেন’’ (রোমীয় ৪ঃ২৫)। খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা তিনি পাপিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন, (রোমীয় ৩ঃ২৫)। খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা প্রভু যীশুর কৃত প্রায়শ্চিত্ত বলিদান কে পিতা ঈশ্বরের কাছে গৃহীত হয়েছে যে কারণে তিনি প্রভু যীশুকে উচ্চ পদান্বিত করেছেন (ফিলিপীয় ২ঃ৭)। তাছাড়া খ্রীষ্টই মূল্য দিয়ে সমস্ত পাপের দেনা পাওনা শোধ করেছেন। পাপীকে ধার্মিক গণণা করার জন্যে আর কোন কিছু বাকী নেই তাঁর প্রমাণ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বর মানুষকে খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান বিশ্বাস করার আদেশ দিচ্ছেন। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, মানুষের কোন ধার্মিকতার কাজ দিয়ে ঈশ্বরের সাক্ষাতে কেউ ধার্মিক বলে গণিত হবে না (রোমীয় ৩ঃ২০; গালা ২ঃ১৬)। অতএব খ্রীষ্টের পুনরুত্থানকে বাদ দিয়ে কেউই ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক গণিত হয় না। তা অবিশ্বাসের পরিণাম পাপে জীবন যাপন করা অর্থাৎ ক্ষমাহীন জীবন। সাধু পৌল বলেন,‘‘আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তোমাদের বিশ্বাস অলীক, এখনও তোমরা আপন আপন পাপে রহিয়াছ,’’ (১করিন্থীয় ১৫ঃ১৭)। তাই খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের অবিশ্বাসে পাপী মানুষের শেষ বিচার এড়ানো অসম্ভব।
দ্বিতীয়ত : খ্রীষ্টই শেষ বিচারের বিচারকঃ
সাধু পৌল এস্থেসবাসীকে বলেছিলেন,‘‘ কেননা তিনি একটি দিন স্থির করিয়াছেন যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ের জগত সংসারের বিচার করিবেন,’’ (প্রেরিত ১৭ঃ৩১)। প্রভু যীশু ব্যাক্তিগতভাবে তাঁর বিচার করার ক্ষমতার কথা বলেছেন, কেননা তিনি মনুষ্যপুত্র (যোহন ৫ঃ২৭)। ইহাতে আশ্চর্য মনে করিওনা; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, (যোহন ৫ঃ২৭-২৮)। আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে, সাধু পৌল এথেন্সবাসীর কাছে কোন সাধারণ বিচারের কথা বলেনি বরং শেষ বিচারের কথা বলেছেন। যেদিন মানুষ দু ভাগে বিভক্ত হবেঃ অনন্ত জীবন ও অনন্ত নরকের জন্যে। প্রকৃত পক্ষে, ঈশ্বর সব সময়ই ন্যায্য বিচার করেন। সে যাই হোক, মানুষ এখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে না, কারণ বিচার সন্নিকট। পিতা ঈশ্বর প্রমাণ দিয়েছেন খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা। যারা বলে‘‘ আইস, আমরা ভোজন করি, কেননা কল্য মরিব (১করিন্থীয় ১৫ঃ৩২)। অথবা মানুষের জীবন কবরে শেষ হয়ে যায় তাদের জন্য ‘‘পুনরুত্থান’’ সাবধান বাণী। শেষ কালে প্রভু যখন পুনরায় আসবেন যারা মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সুসমাচারকে যে বিশ্বাস করেনি তাদের সর্ম্পকে সাধু পৌল বলেন, যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে তাঁহার পরাক্রমশালী দূতগণের সহিত জলন্ত অগ্নিবেদনে প্রকাশিত হইবেন এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দন্ড দিবেন,’’ (২থিষলনীকীয় ১ঃ৭-৮)। সামনে এই বিচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ঈশ্বরকে জানতে হবে (যোহন ১৭ঃ৩) এবং খ্রীষ্টকে বিশ্বাস ও তাঁর সুসমাচারের (মৃত্যু ও পুনরুত্থান), আজ্ঞাবহ হওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। খ্রীষ্ট যীশু শেষ বিচারের বিচারক (যিহূদা ১৪) । খ্রীষ্টের পুনরুত্থানই খ্রীষ্টকে বিচারক হিসাবে স্বীকৃত দেয়॥
তৃতীয়ত : খ্রীষ্টের পুনরুত্থান মন পরিবর্তনের আজ্ঞা দেয় :
প্রভুর বাক্য এই কথা বলে, পাপের বেতন মৃত্যু (রোমীয় ৬ঃ২৩)। যিহিষ্কেল ভাববাদী বলেন, ‘‘যে প্রাণী পাপ করে সে মরিবে;’’(যিহিষ্কেল ১৮ঃ২)। পাপই ঈশ্বরের সাথে বিচ্ছেদ জন্মায় (যিশাইয় ৫৯ঃ২)। আদমের পাপে সবাই পতিত (রোমীয় ৩ঃ২৩; ৫ঃ১২)। শুধু তা নয়, সাধু পৌল বলেন,‘‘ তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরেক পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা বুনে তাহাই কাঁটিবে, (গালাতীয় ৬ঃ৭)। ফলশ্রুতে প্রতিটি মানুষের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ বর্তমান (রোমীয় ১ঃ১৮)। তাই ঈশ্বর পাপী মানুষের জন্য নির্দিষ্ট বিচারদিন ধার্য্য করেছেন। সেইদিন খ্রীষ্ট বিচারক হিসাবে ন্যায় বিচার করবেন। যেহেতু কেউই নিজ কর্ম দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক হবে না, সে কারণে খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করে, বিচার দন্ড থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে মন পরিবর্তনের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কারণ ‘‘আর অন্য কাহারও কাছে পরির্ত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নিচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরির্ত্রাণ পাইতে হইবে,
(প্রেরিত ৪ঃ১২)।
(প্রেরিত ৪ঃ১২)।
সেই অনুতাপ ও বিশ্বাসে প্রভু যীশুকে গ্রহন করা আবশ্যক কেননা,
‘‘The resurrection is true, then judgement is a certainty; if judgement is a certainty then repentance is a necessary.
( Steven J. Cole. www.bible.org)।
‘‘The resurrection is true, then judgement is a certainty; if judgement is a certainty then repentance is a necessary.
( Steven J. Cole. www.bible.org)।
সেই জন্য মন পরিবর্তন বা অনুতাপের বিকল্প নেই। মন পরিবর্তন অর্থ হচ্ছে পাপ থেকে ঈশ্বরের দিকে ফেরা ।এটা বিবেচ্য বিষয় যে, বিচারের দিনে নিজের সামর্থ বা নিজ ধর্ম-কর্ম দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক হওয়া সম্ভব না। কিন্তু মন পরিবর্তন করে খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করতে হবে যিনি আমাদের পাপের দেনা শোধ করেছেন, সে অনুগ্রহ দানকে গ্রহন করতে হবে। এখন আমাদের দায়িত্ব ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে তাঁর জন্য বেচে থাকা। প্রকৃত মন পরিবর্তন জীবন পরিবর্তনের কথা বলে, খ্রীষ্টে বিশ্বাসের কথা বলে, খ্রীষ্টের কাছে সর্মপন ও নতুন জীবনে চলার কথা বলে। তাই সবাইকে ঈশ্বরের অনুগ্রহে মন পরিবর্তন করে খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে পুনরুত্থিত জীবন যাপনে মনোযোগী হতে হবে (কলসীয় ৩ঃ১-১১ পদ)। যার ফলশ্রুতিতে পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ফলবান জীবন আসবে ও ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালনের, লালনে , ধ্যানে ও শ্রদ্ধায় জীবন কাটাতে স্বর্গীয় ইচ্ছা জাগরিত হবে।
উপসংহার :
সাধু পৌলের সুসমাচার শুনে বিশেষতঃ পুনরুত্থানের কথা শুনে হাসি-ঠাট্টা করেছিল, কিছু লোক প্রভুকে গ্রহন করেছিল। আজকে প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর মানুষকে মন পরিবর্তনের আজ্ঞা দিচ্ছে। কারণ সদাপ্রভু বলেন, ‘‘কারণ যে মরে, তাহার মরণে আমার কিছু সন্তোষ নাই, ইহা প্রভু বলেন, অতএব তোমরা মন ফিরাইয়া বাঁচ, (যিহিষ্কেল ১৮ঃ২)। ঈশ্বর চায় প্রতিটি মানুষ মন পরিবর্তন করে বাঁচুক (২পিতর ৩ঃ৯)। তাই উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, এই প্রতীয়মান হয় যে, বিচার আসন্ন; যীশু খ্রীষ্টই শেষ বিচারের বিচারকর্তা, তিনি যে বিচারকর্তা, তাঁর পুনরুত্থান তা প্রমাণ করে। তাই আসুন প্রভুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে ধ্যান করে সেভাবে খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করার চেষ্টা করি এবং মানুষকে এই শিক্ষা গ্রহনের নিমন্ত্রন পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
আমেন॥
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন
আমেন॥
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন
Comments
Post a Comment