অনেকের অভিযোগ আছে : যীশু যদি ঈশ্বর হতেন তাহলে কেন তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন
এই প্রশ্ন টি অনেক বিশ্বাসী / অবিশ্বাসী ভাই বোন দের কাছে কমন প্রশ্ন ।
যীশু কেন প্রার্থনা করতেন না বুঝার কারণ :
১। পুরাতন নিয়ম সম্পর্কে না জানা বিশেষ করে মহাযাজকের দায়িত্ব সম্পকে । খ্রীষ্ট ছিলেন মহাযাজক (ইব্রীয় ৪:১৪-১৬) ।
২। যারা ত্রিত্ব বাদ বিশ্বাস করে না তাদের কাছে তা বুঝা কঠিন । পবিত্র ত্রিত্ববাদ বলতে আমরা বুঝি ঈশ্বর এক কিন্তু তিন ব্যক্তি :পিতা ,পুত্র ( অনন্ত কালীন বাক্য), ও পবিত্র আত্মা । পুত্র যীশুর সাথে পিতার সম্পর্ক অনন্তকালীন । তারা এই সম অস্তিত্বে ( ONE Substane) বিরাজমান । পুত্র এই পৃথিবীতে প্রবেশ করেছেন নাসরতীয যীশু হিসাবে।
পৃথিবী থাকাকালিন সময়ে তিনি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পিতা ঈশ্বরের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ করেছেন । তাই যারা ত্রিত্ববাদ বুঝে না মানতে চায় না, জানতে চায় না, তাদের কাছে যীশুর প্রাথনা বা যীশুকে একজন ভাববাদী বা অন্য কোন ব্যক্তিতে পরিনত করে । কিন্তুু আমরা যারা ত্রিত্ব ঈশ্বরের বিশ্বাস করি , তাদের কাছে যীশু প্রার্থনাা অত্যন্ত মধুর অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ন ।
৩। পবিত্র বাইবেল সঠিক ভাবে না পড়া । অনেেক আছে নাপিতের মত ফুঁড়া কাটে । জানে না কি ভাবে পবিত্র শাস্র বিভাজান করতে হয় । এ ক্ষেত্রে Systematic Theology জানা প্রয়োজন । একজন ডাক্তার ( সার্জন ) হওয়ার জন্য যেমন সঠিক training দরকার তেমনি যারা বাইবেল শিক্ষা দেবে। তা না হলে ভয়ংকর পরিণতি আছে।
4। আত্মিক অন্ধতার কারণে অনেকে বুঝতে পারে না।
"তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেবতা অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।"
2Cor/4/4
‘‘এই লোকদের নিকটে গিয়া বল, তোমরা শ্রবণে শুনিবে, কিন্তু কোন মতে বুঝিবে না, এবং চক্ষে দেখিবে, কিন্তু কোন মতে জানিবে না;কেননা এই লোকদের চিত্ত অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, এবং কর্ণে শুনে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।”
Acts/28/26-27
5। প্রার্থনাা না করা: প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর অনেক বিষয় জ্ঞান দান করেন ( দানিয়েল ২ )
এখন আমরা আলোচনা করি যীশু কেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন
===========================================
প্রথমত: অনন্তকালীন বাক্য যিনি ঈশ্বরের সাথে আছেন তিনি মানুষ হলেন (যোহন ১:১,১৪) ।
অনন্তকালীন বাক্যে কেন মানুষ( Inca-nation) হলেন ?
অন্যতম কারণ হচেছ :
"সেইজন্য যীশুকে সব দিকে থেকে তাঁর ভাইদের মত হতে হল, যেন তিনি একজন দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাপুরোহিত হিসাবে ঈশ্বরের সেবা করতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হল, তিনি যেন নিজের মৃত্যুর দ্বারা মানুষের পাপ দূর করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেন ( ইব্রীয় ২: ১৭)
মানুষ হিসেবে আমাদের যা দরকার যীশুর তা দরকার ছিল ।
তিনি পূর্বে মানুষ ছিলেন না । কিন্তুু মানুষের প্রকৃতি গ্রহণ করেছেন যেন মানব জাতির পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারেন । শুধু তাই নয় মানুষের শেষ শত্রু মৃত্যুর ভয় থেকে রক্ষা করেন ।
সেই সন্তানেরা হল রক্তমাংসের মানুষ। সেইজন্য যীশু নিজেও রক্তমাংসের মানুষ হলেন, যাতে মৃত্যুর ক্ষমতা যার হাতে আছে সেই শয়তানকে তিনি নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শক্তিহীন করেন, আর মৃত্যুর ভয়ে যারা সারা জীবন দাসের মত কাটিয়েছে তাদের মুক্ত করেন। (ইব্রীয় ২:১৪-১৫)
কি ভাবে তা করেছেন ? তারা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃত্যুর উপর জয়ী হয়েছেন পূনরুথানের মধ্য দিয়ে (যোহন ১৪:১৯) । মৃত্যু থেকে বিজয়ের মধ্যে দিয়ে শয়তান কে শক্তি হীন করেছেন । শয়তান মৃত্যুর শক্তি কে ব্যবহার করেছে যা ঈশ্বরের অধীন ( ইযোব ২: ৬) পদ ।
তার কেন দেহ দরকার ছিল ?
তার নিজের জীবন ক্রশে উৎস্বর্গ করার জন্য একটি প্রকৃত পক্ষে দেহ প্রয়োজন ছিল (ইব্রীয ১০:৫) পদ । তিনি পুত্র ঈশ্বর হযেও তিনি মনোনীত করেছেন মানুষ হবার । তিনি ইচ্ছা করলে তিনি তার ঈশ্বরত্বের শক্তি প্রয়োগ করতে পারতেন কিন্তুু তা করেননি। কারণ তিনি পিতার মিশন বাস্তবায়নের জন্য স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এসেসেন (যোহন ৬: ৩৮) পদ । তিনি মানুষ হিসেবে কাজ করেছেন । তিনি জম্ম নিলেন বড় হয়েছেন ক্ষুধার্ত হয়েছেন, তৃষার্ত হয়েছেন ; শাস্ত্র হয়েছেন । ঘুমিয়ে ছেন পিতার কাছে প্রার্থনা করেছেন ।
আমাদের মত প্রলোভিত হয়েছেন ( কিন্তুু বিনা পাপে) এবং মারা গেছেন ( কিন্তুু মৃত্যু থেকে বিজয়ী হয়েছেন) । তা সব কিছুই প্রমাণ করে তিনি মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষের মত অভিনয় করেন নি কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মানুষ হয়ে ছিলেন । একজন মানুষ হিসেবে তার সীমাবদ্ধতা ছিল । মানবিক প্রয়োজন ছিল কিন্তু আমাদের মত পতিত স্বভাব ছাড়া । এই জন্যই তাকে শেষ আদম বলা হয় । কারন তিনি প্রথম আদমের পাপে পতিত হওয়ার পূর্বের অবস্থায় হয়েছিলেন (১করি ১৫:৪৫) ।
দ্বিতীয়ত :-- যীশুর দুই স্বভাব রয়েছে । ঐশ্ব স্বভাব ও মানবিক স্বভাব । তিনি ব্যবস্থার অধীনে জন্ম গ্রহন করেছিলেন (গালা ৪: ৪) । তিনি নিজেকে স্বর্গ দূত গনের চেয়ে ও নীচু হয়েছিলেন (ইব্রীয় ২: ৯) ।
তিনি ঈশ্বর হয়েও নিজেকে শূন্য করে ছিলেন । দাসের মতো হয়ে ছিলেন এর ক্রোশীয় মৃত্যু পযরন্ত পিতর আজ্ঞাবহ ছিলেন (ফিলিপীয় ২:৫-৮) পদ । যদিও তিনি অনন্তকালীন বাক্যে ছিলেন তবুও তিনি ঈশ্বর ছিলেন এবং মাংসে আগমন করেছিলেন (যোহন ১:১-১৪) পদ । তাই প্রার্থনার প্রয়োজন ছিল।
তৃতীয়ত: মহাযাজক হিসাবে যীশুর প্রার্থনা বা অনুরোধ :
----------------------------------------------------
যীশুর প্রার্থনা বুঝতে হলে পুরাতন নিয়মের যাজকীয় কার্যক্রম সম্পর্কে জানা উচিত। পুরাতন নিয়মে বিশেষ করে লেবীয় পুস্তকে ও নতুন নিয়মে ইব্রীয় পুস্তকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। প্রভু যীশু মসীহ হিসেবে তিনটি পদ আছে : ভাববাদী বা নবী, যাজক ও রাজা। এখানে আমরা খ্রীষ্টের যাজক পদে সীমাবদ্ধ থাকবো ।
যাজক হিসেবে তিনি কি করেছেন :
ক। যীশু মহাযাজক হিসাবে তিনি নিজের রক্ত উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রজাদের মুক্ত করার জন্য।
"আসল পবিত্র স্থানের নকল হিসাবে মানুষের হাতে তৈরী কোন পবিত্র স্থানে খ্রীষ্ট ঢোকেন নি, বরং তার বদলে তিনি স্বর্গে ঢুকেছেন যেন তিনি আমাদের হয়ে ঈশ্বরের সামনে এখন উপস্থিত হতে পারেন। 25মহাপুরোহিত পশুর রক্ত নিয়ে যেমন প্রত্যেক বছর মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেন, খ্রীষ্ট নিজেকে বারবার উৎসর্গ করবার জন্য সেইভাবে স্বর্গে ঢোকেন নি। 26তা-ই যদি করতে হত তবে জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে আরম্ভ করে তাঁকে অনেকবারই কষ্টভোগ করে মরতে হত; কিন্তু এখন সমস্ত যুগের শেষে তিনি একবারই প্রকাশিত হয়েছেন যেন নিজেকে উৎসর্গ করে তিনি পাপ দূর করতে পারেন।" (ইব্রীয় ৯:২৪-২৬) ।
খ। যীশু মহাযাজক হিসাবে তাঁর প্রজাদের পিতা ঈশ্বরের কাছে এনেছেনঃ
"আসল পবিত্র স্থানের নকল হিসাবে মানুষের হাতে তৈরী কোন পবিত্র স্থানে খ্রীষ্ট ঢোকেন নি, বরং তার বদলে তিনি স্বর্গে ঢুকেছেন যেন তিনি আমাদের হয়ে ঈশ্বরের সামনে এখন উপস্থিত হতে পারেন।" (ইব্রীয় ৯:২৪) ।
"ভাইয়েরা, যীশু খ্রীষ্টের রক্তের গুণে সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢুকবার সাহস আমাদের আছে। 20খ্রীষ্ট আমাদের জন্য একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পর্দার মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ তাঁর দেহের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হতে পারি। 21এছাড়া আমাদের একজন মহান পুরোহিতও আছেন, যাঁর উপরে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের ভার দেওয়া হয়েছে। 22সেইজন্য বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে যে নিশ্চয়তা আসে, এস, আমরা সেই পরিপূর্ণ নিশ্চয়তায় খাঁটি অন্তরে ঈশ্বরের সামনে যাই; কারণ দোষী বিবেকের হাত থেকে আমাদের অন্তরকে রক্ত ছিটিয়ে শুচি করা হয়েছে এবং পরিষ্কার জল দিয়ে আমাদের দেহকে ধোওয়া হয়েছে।" (ইব্রীয় ১০:১৯-২২)
গ। যীশু মহাযাজক হিসাবে এখনও অনুরোধ করছেন:
"এইজন্য যারা তাঁর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছে আসে তাদের তিনি সম্পূর্ণ ভাবে উদ্ধার করতে পারেন, কারণ তাদের পক্ষে অনুরোধ করবার জন্য তিনি সব সময় জীবিত আছেন।" (ইব্রীয় ৭:২৫)
প্রেরিত পৌল একই ভাবে বলেন ,
"কে তাদের দোষী বলে স্থির করবে? যিনি মরেছিলেন এবং যাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করাও হয়েছে সেই খ্রীষ্ট যীশু এখন ঈশ্বরের ডান পাশে আছেন এবং আমাদের জন্য অনুরোধ করছেন। ( রোমীয় ৮:৩৪)
তাই যীশু আজও পিতা ঈশ্বরের কাছে আমাদের পক্ষে অনুরোধ করছেন। এটা খ্রীষত্বের ঈশ্বর-মানব চরিত্রের পুরনতাঁর কাজ । খ্রীষট যিনি ঈশ্বর মানব মধ্যসহটকারি হিসআবে শুধু পরিত্রান করেননি কিন্তু তিনি আমাদের জন্য প্রার্থনা করেন । (1 Tim 2: 5) .
৪র্থ : প্রভু যীশু প্রার্থনার সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। তিনি বলেছেন "আমাকে অনুসরণ কর। " তিনি যা করেননি তা করতে বলেননি।
তিনি দেখিয়েছেন খ্রীষ্টীয় জীবনে প্রার্থনার প্রয়োজন আছে । প্রার্থনা ছাড়া পিতা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন ঈশ্বরের সন্তানেরা কিভাবে প্রার্থনা করবে পিতার কাছে যেন তারা বাধ্যতা ও সমর্পণের মধ্য দিয়ে আত্মিক আশিবাদ লাভ করে। সেই জন্য যীশু সে উদাহরণ রেখে গেছেন আমরাও যেন পিতার উপর প্রার্থনার মাধ্যমে নির্ভর করি যেন প্রয়োজনীয় শক্তি ও জ্ঞান লাভ করি। ঈশ্বর-মানব হয়েও যীশুর যেমন প্রার্থনা দরকার ছিল তেমনি তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনায় স্বক্রিয় থাকা উচিত।।
ঊপরোক্ত ক্ষুদ্র আলোচনায় পরিষ্কার হয় যে যীশু কি কারনে পুত্র ঈশ্বর হয়েও তিনি পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে ছিলেন । তাই নাপিতের মত ফোঁরা না কেঁটে যোগ্যতা সমপন ডাক্তার সার্জন হিসাবে অপারেশন বা পবিত্র বাইবেল ব্যাখ্যা করি ।।
আমেন ।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment