ক্রুশের উপর সপ্তবাণীর তাৎপর্য: প্রথম বাণী
ভূমিকা: ক্রুশের উপরে প্রভূ যীশুর দুঃখভোগ, মৃত্যু পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা। প্রভু যীশুর মৃত্যু কোন সাধারণ মৃত্যু নয় কিন্তু পাপীর জন্যে অর্থ্যাৎ তাঁর প্রজাদের পাপের জন্যে প্রায়শ্চিত্ত্ব বলি উৎস্বর্গ করা। ক্রুশের উপরে থাকাকালীন প্রভূ যীশু সাতটি বাণী উচ্চারণ করেন। প্রতিটি বাণীই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর অর্থ বহন করে।
প্রথম বাণীর তাৎপর্য :
“তখন যীশু কহিলেন, পিতঃ ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না,’’ (লূক ২৩ঃ৩৪)। সাধু লূক তাঁর সুসমাচারে আমাদের জন্য প্রথম বাণীটি লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রভূ যীশুর প্রথম বাণী দ্বারা ক্ষমার র্প্রাথনার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। আমরা যদি প্রভু যীশুর জীবন পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা কি দেখতে পাই? যার মধ্য দিয়ে সমস্ত কিছু সৃষ্টি হয়েছিল তাঁকে এভাবে ক্রুশে জঘন্য শাস্তি দিল। কারণ কি? কারণ জগত তাঁকে চিনে নাই। জন্ম থেকেই খ্রীষ্টের উপর চলে নির্মমতা। জন্মের সময় কোথাও স্থান পেল না কিন্তু জায়গা হলো অনাকাঙ্খিত যাবপাত্রে॥ তাঁর জন্মের পরে হেরোদ চেষ্টা করেছে তাঁকে হত্যা করার। প্রভুর পরিচর্য্যা কাজের সময় তাকে নির্যাতন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে। কিন্তু শেষে তাঁর শত্রুরা তাঁকে ক্রুশের কাছে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে তারা বার বার যীশুকে ধ্বংশ করতে চেয়েছে। শেষে তাদের অন্যায় ইচ্ছা পূর্ণ হল। পীলাত দ্বারা প্রহসনের বিচারের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে,‘‘ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও’’। তারাই সে জঘন্য কাজ করলেন। যীশুর শত্রুরা কোন সাধারণ মৃত্যু দন্ড ধার্য্য করেনি তারা করেছে সেই সময়ের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম অপমান জনক মৃত্যুদন্ড। যে মৃত্যুতে রয়েছে চরম দুঃখভোগ ও লজ্জা। পীলাতের রায়ের পর প্রভু যীশু ক্রুশ কাঁধে নিয়ে কালভেরীতে এলেন। তাঁকে সৈন্যরা পেরেক গেঁথে ক্রুশে দিলেন। এই যন্ত্রণার সময় যীশু প্রতিবাদের ভাষা উচ্চারণ করেনি, উচ্চবাক্য করেননি, নিন্দা করেননি কিন্তু তাঁর মুখ খুলেছে শত্রুদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্যে। তিনি শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করেছেন, তিনি বলেছিলেন,‘‘পিতঃ ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।“
প্রভুর এই প্রথম বাণী দ্বারা তাঁর নির্যাতন কারীর জন্যে করুনা যাঞা করেছেন। যখন যীশু এই বাণী উচ্চারণ করছিলেন তখন সৈন্যরা খ্রীষ্টের বস্ত্র নিয়ে গুলিবাঁট করে ভাগাভাগি করছিলেন। তখন প্রভু যীশুর সারা শরীর থেকে রক্তের ধারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। এই সর্ম্পকে বিশপ J.C RYLE বলেন, ‘These word were probably spoken while our Lord being railed to the cross, or as soon as the cross was reared up to land, it is worthy of remark that as soon as the blood of great sacrifice began to flow, the great high Priest began to intercede."
এখন আমরা প্রভুর উচ্চারিত বাণীর তাৎপর্য লক্ষ্য করি।
প্রথমতঃ প্রার্থনার প্রতি প্রভু যীশুর মনোভাব:
প্রভু যীশু তাঁর পরিচর্য্যা কাজ শুরু করেছিলেন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে (লূক ৩ :২১) এবং তাঁর পরিচর্য্যার কাজ শেষ করছেন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। তিনি আমাদের জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনাকারীর উদাহরন। আমাদের জন্যে কত বড় শিক্ষা! আমাদের ব্যক্তিগত দুর্দশায় সময়; হতাশার সময় বিয়োগ যন্ত্রনায়, পতনে, বিঘ্নতায় আমরা যেন আমাদের পরিত্রাতা যীশুকে স্মরণ করি যিনি প্রার্থনার এক চরম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা প্রভুর এই প্রার্থনার ফল দেখতে পাই। প্রথমে দেখি, যীশুর সাথে ক্রুশারোক্তি একজন মন পরিবর্তন করে প্রভুর পরমদেশে আশ্রয় পায়। দ্বিতীয়ত দেখি, শতপতি যিনি ক্রুশীয় মৃত্যুর চার্জে ছিলেন তিনি মন পরিবর্তন করে বলেছিলেন, ‘‘সত্য, এই ব্যক্তি ধার্মিক ছিলেন,’’ (লূক ২৩ :৪৩ এবং ৪৭)। পরবর্তীতে আমরা দেখি মন্ডলীর জন্মদিনে অর্থ্যাৎ পঞ্চাশত্তমীর দিনে তিন হাজার যিহূদী মন পরিবর্তন করে যীশুকে গ্রহন করেছিল। পরে সাধু পিতর যিহুদীদের বলেছিলেন,
‘‘ কিন্তু তোমরা জীবনের আদিকর্তাকে বধ করিয়াছিলে; তোমরা অজ্ঞানতা বশতঃ সেই কার্য করিয়াছ, যেমন তোমাদের অধ্যক্ষেরাও করিয়াছিলেন। সাধু পিতর অজ্ঞানতা শব্দটি ব্যবহার করেছেন যেমন যীশু তার প্রথম বাণীতে বলেছিলেন,‘‘কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।’’
এখানে আমরা দেখি সাধু পিতরের উপদেশের মধ্য দিয়ে ৫০০০ লোক মন্ডলীর সাথে যুক্ত হয়েছে তা প্রেরিত পিতরের প্রচারের জন্যে তার কিন্তু আমাদের প্রভু যীশুর প্রার্থনার ফল। যীশু আমাদের জন্যেও প্রার্থনা করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, আর আমি কেবল ইহাদের নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু ইহাদের বাক্য দ্বারা যাহারা আমাতে বিশ্বাস করে, তাহাদের নিমিত্ত করিতেছি,’’ (যোহন ১৭:২০)। আসুন আমরা পরিত্রাতার কাছে শিক্ষা গ্রহন করি যেন ঈশ্বরের শত্রুদের জন্যে প্রার্থনা করি তারা যেন পরিত্রাণ পায়া॥
এখানে আমরা দেখি সাধু পিতরের উপদেশের মধ্য দিয়ে ৫০০০ লোক মন্ডলীর সাথে যুক্ত হয়েছে তা প্রেরিত পিতরের প্রচারের জন্যে তার কিন্তু আমাদের প্রভু যীশুর প্রার্থনার ফল। যীশু আমাদের জন্যেও প্রার্থনা করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, আর আমি কেবল ইহাদের নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু ইহাদের বাক্য দ্বারা যাহারা আমাতে বিশ্বাস করে, তাহাদের নিমিত্ত করিতেছি,’’ (যোহন ১৭:২০)। আসুন আমরা পরিত্রাতার কাছে শিক্ষা গ্রহন করি যেন ঈশ্বরের শত্রুদের জন্যে প্রার্থনা করি তারা যেন পরিত্রাণ পায়া॥
দ্বিতীয়তঃ এই বাণী মধ্য দিয়ে ভাববাণীর পূর্ণতা পেয়েছে : যিশাইয় ভাববাদী খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে খ্রীষ্টের অধর্মাীদের জন্যে অনুরোধের করে বলেছিলেন। তিনি বলেন,‘‘এই জন্যে আমি মহানদিগের মধ্যে তাঁহাকে অংশ দিব, তিনি পরাক্রমীদের সহিত লুট বিভাগ করিবেন, কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেন, আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্ম্মীদের জন্যে অনুরোধ করিতেছেন,’’ (যিশাইয় ৫৩:১২)। এই পদে যিশাইয় আরও বলেছিলেন যে, তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেনন, আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন। তাই যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ের আলোকে আমরা দেখতে পাই খ্রীষ্টের ক্রুশের উপরে প্রথম বাণী ভাববাণীর পূর্ণতা পেয়েছে। সত্যিই প্রভু তাঁর ঘাতকদের জন্যে নিবেদন করেছিলেন। নিবেদন করেছিলেন যারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিলো যেন তারা ক্ষমা পায়।
তৃতীয়তঃ দেখব যে, এই বাণীর মধ্য দিয়ে তাঁর লোকদের সাথে চিহ্নিত হয়েছেন:
যীশু পূর্বে কারও পাপের ক্ষমার জন্যে নিবেদন করতে দেখা যায় না। বরং তিনি নিজেই অন্যদের ক্ষমা করেছিলেন। উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, পক্ষাঘাত গ্রস্থ রোগীর কথা। যীশু তাকে বলেছিলেন, ‘‘হে মনুষ্য, তোমার পাপ ক্ষমা হইল।’’ দ্বিতীয় উদাহরণ বলা যায়, "ফরীশী শিমনের বাড়ীতে সেই নারী, যে প্রভু যীশুর পা চোখের জল দিয়ে মুছে দিয়েছিলেন। যীশু সেই নারীকে বলেছিলেন, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে,’’ (লূক ৭:৪৮)। তখন যীশু কেন পিতার কাছে অন্যের ক্ষমার জন্যে নিবেদন করছেন? কেন তিনি নিজে তাদের ক্ষমা ঘোষণা করেছেন না।
আমরা জানি যে, পাপের ক্ষমা দান হচ্ছে ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রয়োগ। যিহূদী অধ্যাপক ও ফরীশীরা বুঝতে পেরে বলেছিল? একমাত্র ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে? (লূক ৫ঃ৯০)। খ্রীষ্ট সত্যিই ঈশ্বরের দাবী নিয়ে পাপ ক্ষমা করেছেন। কিন্তু তিনি ঈশ্বর মানব। এ প্রসঙ্গে ARTHUR W.PINK বলেন," He was the son of God that had become the Son of man with the express purpose of offering Himself as a Sacrifice for sin,’’ অর্থ্যাৎ খ্রীষ্ট ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র যিনি মনুষ্যে পুত্র হয়েছিলেন যেন পাপের জন্যে বলিদান করতে পারেন’’।
তিনি( Pink) আরও বলেন,‘‘যখন প্রভু যীশু বলেছিলেন,‘‘পিতা ইহাদের ক্ষমা কর,’’ তখন তিনি ক্রুশে ছিলেন তখন তিনি হয়ত ক্রুশারিক ক্ষমাদের কর্তৃত্ব অনুশীলন করেন নি। প্রভু যীশু পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোক সুস্থ করার সময় ফরীশী ও অধ্যাপকদের বলেছিলেন, ‘‘কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার,’’ (লূক ৫ঃ১৪)। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি পৃথিবীতে না, বরং তাকে পৃথিবী থেকে উচ্চে উঠান হয়েছিল (যোহন ১২ঃ৩২)। তাছাড়া খ্রীষ্ট ক্রুশে থাকাকালীন সময়ে আমাদের পাপের বলি উৎসর্গের কাজ করছিলেন। তিনি আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে ক্রুশে ঝুলে ছিলেন। Pink’র দাবি যে
“He was no longer in the place of authority when He might exercise His own Divine Progatives, there for takes he the position of a suppliant before the Father’’ সে কারণে প্রভু বলেছিলেন ‘‘পিতা, ইহাদের ক্ষমা কর। আমরা এখানে খ্রীষ্টকে দেখতে পাই তাঁর প্রজাদের সাথে গণিত হতে। সেকারণে তিনি নিবেদন করেছিলেন। আমাদের তদ্রুপভবে অন্যের প্রয়োজনের জন্য নিবেদন করা। অন্যের জন্যে দিবারাত্র প্রার্থনা করা।
“He was no longer in the place of authority when He might exercise His own Divine Progatives, there for takes he the position of a suppliant before the Father’’ সে কারণে প্রভু বলেছিলেন ‘‘পিতা, ইহাদের ক্ষমা কর। আমরা এখানে খ্রীষ্টকে দেখতে পাই তাঁর প্রজাদের সাথে গণিত হতে। সেকারণে তিনি নিবেদন করেছিলেন। আমাদের তদ্রুপভবে অন্যের প্রয়োজনের জন্য নিবেদন করা। অন্যের জন্যে দিবারাত্র প্রার্থনা করা।
উপসংহার : খ্রীষ্টের প্রথমবাণী শত্রুদের প্রতি ক্ষমার চরম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। আমারাও খ্রীষ্টের শত্রু ছিলাম (রোমীয় ৫:৯) তখনও খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিবেদন করেছেন। খ্রীষ্টের সেদিনের প্রার্থনা আজকে পাপীকে মন পরিবর্তনের ডাক দেয়, ক্ষমা করার মনোভাব তৈরী করে। সার্মথ দেয় পাপীর মঙ্গল কামনায় ভালবাসা। তাই আসুন প্রভুর প্রথম বাণীর আলোকে খ্রীষ্টিয় জীবন সাঁজাই। আমেন॥
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment