ক্রশারোপিত দস্যুর স্বীকারোক্তি ও পরিত্রাণের পথ (২য় বাণীর তাৎপর্য)

ভূমিকা: ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারে প্রভু যীশুর সাথে দুজন দস্যু কালভেরীতে ক্রুশারোপিত হয়। যিশাইয় ভাববাদী প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৭০০ বৎসর আগে এ সম্পর্কে এভাবে বলেছেন, “কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্মীদের সহিত গণিত হইলেন, আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্মীদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন ” (যিশাইয় ৫৩:১২ পদ)। দুজন দস্যুর মধ্যে একজন মন পরিবর্তন করে প্রভু যীশুর সাথে পরমদেশে নীত হন। আমরা এই প্রবন্ধে দেখব সেই দস্যুর সাতটি স্বীকারোক্তি যা প্রতিটি মানুষের পরিত্রাণের জন্য স্বীকারোক্তি হওয়া উচিৎ।
প্রথমতঃ ঈশ্বর ভয় : 
প্রথম দস্যু যখন প্রভু যীশুকে বলেন, “তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট? তাহলে আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা করুন। তখন পরিবর্তীত দস্যু প্রথম দস্যুকে অনুযোগ করে বলেছিলেন, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না?” (লুক ২৩:৩৯-৪০ পদ)। দস্যুর এই কথার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাক্ষাতে কৃত প্রতিফলের ভবিষ্যতের শাস্তি ফুটে উঠেছে। তিনি তার সাথে ক্রুশারোপিত দস্যুকে অনুযোগ করেছেন যে “তোমার কত বড় সাহস একজন নিষ্পাপ মানুষকে গালাগালী কর?” তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন, কিছুক্ষণ পরেই তোমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশিত হতে হবে এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে। সেই জন্য ঈশ্বরকে ভয় করতে হবে, কৃত পাপের জন্য ঈশ্বরের সামনে নীরব হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, পরিত্রাণ পাবার জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভয় থাকা উচিৎ। কেননা তিনি শুধু প্রেমময়ই নন, তিনি গ্রাসকারী অগ্নিস্বরপ।

দ্বিতীয়তঃ ২য় দস্যু তার পাপ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল:
তিনি বলেছিলেন, “কারণ যাহা যাহা করিয়াছি তাহারই সমুচিৎ ফল পাইতেছি” (লুক ২৩:৪১পদ)দ্বিতীয় দস্যু, তিনি যে মহাপাপী তা তিনি অন্য দস্যু ও প্রভু যীশুর সাক্ষাতে স্বীকার করেছিলেন। তার কৃত অন্যায়ের জন্য শাস্তি ভোগ করেছেন। তার মৃত্যুদন্ড অর্থ্যাৎ ক্রুশারোপন পাওয়ার যোগ্য তিনি। কিন্তু তার সহকারী দস্যু তা স্বীকার করেননি, উপলদ্বীও করেননি। আমাদের একজন পাপী হিসেবে আমাদের পাপ সম্পর্কে জানা উচিৎ ও তা প্রভুর কাছে স্বীকার করা উচিৎ যেন প্রভু আমাদের ক্ষমা করেন।

তৃতীয়তঃ দ্বিতীয় দস্যু খ্রীষ্টের নিষ্পাপ অবস্থাকে স্বীকার করেছেন :

তিনি খ্রীষ্ট সম্পর্কে ক্রুশে বলেছিলেন, “কিন্তু ইনি অপকায্য কিছুই করেননি” (লুক ২৩:৪১)। প্রভু যীশুর কোন পাপ ছিল না। সাধু পিতর যীশুর পবিত্রতা সম্পর্কে বলেন, “তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই,” (১ পিতর ২:২২)। সাধু পৌল এভাবে বলেন, “যিনি পাপ জানেন নাই তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে স্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের ধার্মীকতা স্বরূপ হই” (২ করিন্থিয় ৫:২১ পদ)। 
প্রভু যীশুর শিষ্য ইস্করিয়তীয় যিহুদা প্রভু যীশুকে ধরিয়ে দেবার পরে অনুশোচনা করে বলেছিলেন, “নির্দোষ রক্ত সমর্পন করে আমি পাপ করিয়াছি” (মথি ২৭:৩ পদ)। পীলাত যিহুদীদের বলেছিলেন, “আমি ইহার কোন দোষ খুজে পাচ্ছিনা” (মথি২৭:২৩)। পীলাতের স্ত্রী বলেছিলেন, “সেই ধার্মিকের প্রতি তুমি কিছুই করিও না,” (মথি২৭:১৯)। ঈশ্বর তাঁর পুত্রের নির্দোষ অবস্থা সম্পর্কে এই দস্যুর চোখ খুলে দিয়েছিলেন এবং তার মুখ খুলে দিয়েছিলেন যেন খ্রীষ্টের মহানুভবতার কথা স্বীকার করেন। 
তদ্রূপভাবে কেউ যদি পরিত্রাণের প্রতাশা করেন তাহলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে খ্রীষ্ট নিজেকে নির্দোষ বলি হিসেবে পাপীর পরিত্রাণের জন্য উৎস্বর্গ করেছেন।

চতুর্থত: খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব স্বীকার করা : 

-পরিবর্তিত দস্যু খ্রীষ্টের শুধু মানবিক নিষ্পাপ প্রকৃতি গ্রহন করেননি তিনি তাঁর ঈশ্বরত্বকেও গ্রহন করেছেন। তিনি খ্রীষ্টকে বলেছিলেন, “প্রভু(যীশু) আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্বরণ করিবেন।” লুক ২৩:৪২ পদে যীশুর জায়গায় (King James Version) Lord ব্যবহার করা হয়েছে। সাধু পৌল বলেন, “কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর এবং হৃদয়ে বিশ্বাস কর যে ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে,” (রোমীয় ১০:৯ পদ)। সাধু পৌল যোয়েল ভাববাদীর পুস্তক (যোয়েল ২:৩২পদ) থেকে সরাসরি উল্লেখ করেছেন যেখানে যীশুকে ‘প্রভু’ বা ‘ইয়াওয়ে’ (YAHWEH) বলেছেন। পরিবর্তিত দস্যু পরিত্রাতা যীশুর উপরে ক্রুশে পেরেক গাঁথতে দেখেছেন, যীশুর উপরে ‍যিহুদীদের ঘৃণার প্রয়োগ দেখেছেন, দেখেছেন জনতার উপহাস ও বিদ্রুপ। তিনি শুনেছেন যাজকদের নিন্দাপুর্ণ বানী, “আপনাকে রক্ষা কর; যদি ঈশ্বরের পুত্র হও ক্রুশ থেকে নেমে আইস,” (মথি ২৭:৪০ পদ)। কিন্তু খ্রীষ্ট তাদের কোন উত্তর দেননি। কিন্তু সেই দস্যু বিশ্বাস দ্বারা যীশুকে প্রভু বলে গ্রহন করে নিয়েছেন। খ্রীষ্টিয় মতবাদ অনুসারে পরিত্রাণের অন্যতম শর্ত হলো খ্রীষ্টকে ‘প্রভু’ বলে নিজের জীবনে, হৃদয়ে ও সব জায়গায় স্থান দেওয়া।

পঞ্চমত: সেই দস্যু প্রভু যীশুকে পরিত্রাণ কর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেছিলেন :

 তিনি নিজে খ্রীষ্টকে তাঁর শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করতে শুনেছেন, “পিতা ইহাদিগকে ক্ষমা কর,”। খ্রীষ্টের এই ক্ষমার বাণী দস্যুর জীবনে পরিত্রাণের উপদেশ বাণী(Sermon) হয়ে দাড়াল। তাইতো সে বলে উঠলো, “প্রভূ, আমাকে স্মরণ করবেন,” যার অর্থ হচ্ছে “প্রভু আমাকে রক্ষা করবেন”। যে কথার মধ্য দিয়ে ঈঙ্গিত দেয় দস্যু যীশুকে নিজের মুক্তিদাতা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। একজন পাপীকে মন পরিবর্তন করে যীশুকে মুক্তিদাতা হিসেবে গ্রহন করতে হবে।

ষষ্টত: সেই দস্যু খ্রীষ্টের রাজত্বকে গ্রহন করেছেন :

তিনি বলেছেন, “আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন,”। বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে মনে হবে খ্রীষ্টের কোন রাজত্ব নেই। তিনি সিংহাসনে না বসে, ক্রুশে ঝুলে আছেন। রাজ মুকুটের পরিবর্তে কাটার মুকুট পরিহিত। যেখানে তাঁর সাথে থাকবে সম্ভ্রান্ত অনুচরগণ সেখানে তিনি অপরাধীর সাথে গণিত। তারপরেও তিনি রাজা, যিহুদীদের রাজা (মথি২:২ পদ)। তিনি রাজাদের রাজা, প্রভুদের প্রভু (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৬ পদ)। খ্রীষ্টকে গ্রহন করা মানে তাঁর রাজত্বকে স্বীকার করে নেওয়া। সাধু পিতর প্রতিটি বিশ্বাসীকে বলেন, “কিন্তু তোমরা মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর” (১ পিতর ২:৯ক পদ)। 

সপ্তমত: ২য় দস্যু খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের প্রতীক্ষা করেছেন :

তিনি বলেছিলেন, “আপনি যখন আপন রাজ্যে আসবেন,”। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে ভবিষতের প্রত্যাশার কথা বলেছেন। তিনি যাতনার মধ্য থেকে খ্রীষ্টের মহিমা দেখতে পেরেছিলেন। তিনি বিশ্বাসে ক্রুশের উপরে খ্রীষ্টের রাজত্বের মুকুট দেখেছিলেন। এদিক থেকে তিনি যীশুর শিষ্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন কারণ তখনও শিষ্যেরা দস্যুর মত বুঝতে পারে নাই। তিনি খ্রীষ্টের আগমনের যে লজ্জা তার বাইরে গিয়ে দেখেছেন খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন কত শক্তিশালী ও মহিমার। 
উপসংহার:
 সত্যিই মন পরিবর্তিত দস্যুর জীবন ছিল গভীর আত্নিকতা এবং প্রজ্ঞায় পুর্ণ। ঈশ্বরের মহা করুণায় সেদিন মরতে যাওয়া দস্যু খ্রীষ্টের পরিচয় পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন, পরম দেশে আশ্রয় পেয়েছিলেন। রক্তমাংশ তা প্রকাশ করেনি কিন্তু স্বর্গীয় পিতা। এটা সত্যিই মহান যে ঈশ্বর বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের নিকট থেকে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছেন (মথি ১১:২৫ পদ) । সত্যিকার অর্থে সেইদিন সেই দস্যু ঈশ্বরের অনুগ্রহে মন পরিবর্তন করে ঈশ্বরের রাজ্যে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন। 
আজকে আপনার অবস্থান কোথায়? আপনি কি সত্যিই সেই আর্শীবাদ অর্থ্যাৎ ক্ষমা লাভ করতে চান? যদি চান তাহলে দস্যুর মত আজই প্রভু যীশুকে গ্রহন করুন তাতেই আপনি পরমদেশে যাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন।
আমেন ।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Importance-of-the-Seven-message-on-the-Cross-The-Second-Word


Comments

Popular posts from this blog

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া

Popular Posts

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া