ক্রশের উপরে যীশুর ৪র্থ বাণী
ক্রশের উপরে যীশুর ৪র্থ বাণী :
‘‘ঈশ্বর আমার ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ-?’’ (মার্ক ১৫ঃ৩৪; মথি ২৭ঃ৪৬)
ভূমিকা : ক্রশের উপর প্রভু যীশুর মৃতু ̈ পৃথিবীর ইতিহাসে অবি ̄স্নরনীয় সত্য ঘটনা। প্রভ‚ যীশুর ক্রশের বলিদান খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদের জীবনে মহা আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। ক্রশের বলিদান ̄স্নরণরণ করিয়ে দেয়ঃ- আমাদের পরিত্রাণের কথা, অনন্ত ক্ষমার কথা, অনন্ত জীবনের কথা, ঈশ্বরের মানুষের প্রতি ঈশ্বরের সর্বোচ্চ ভালবাসার কথা। গেৎসিমানী বাগান থেকে শুরু করে যীশুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত চলে প্রভ‚ যীশুর উপরে অকথ ̈ নির্যাতন, হাসি-ঠাট্টা, বিদ্রপ, ঘৃণা ও চাবুকের কশাঘাত, সর্বোপরি প্রহসনের বিচার। প্রভূ যীশু ক্রশের থাকাকালীন সময়ে তিনি সাতটি বাণী উচ্চারণ করেন যা চারটি সুসমাচারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি বাণীই অতন্ত ̈ তাৎপর্যপূর্ণ অর্থবোধক। প্রতিটি বাকে ̈ই প্রভ‚ যীশু অনন্তকালীন ইচ্ছা, আকাক্সখা, ভাববাণীর পূর্ণতা ও তাঁর মিলনের পরিসমাপ্তির কথা ফুটে উঠে। এই লেখায় আমরা প্রভূও চতুর্থ বাণী নিয়ে আলোচনা করব।
শাস্রাংশ : (মার্ক ১৫ঃ৩৪; মথি ২৭ঃ৪৫)
‘‘আর নয় ঘটিকার সময়ে যীশু উচ্চরবে ডাকিয়া কহিলেন, এলোই, এলোই, লামা শব৩ানী, অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ এই, ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছ? (মার্ক ১৫ঃ৩৪)।
পর্যবেক্ষণ:
(১) মথি ও মার্ক দুজনেই প্রভ‚র বাণী রেকর্ড করেছেন। মার্ক এলোই, এলোই, লামা শব৩ানী অরামীয় ভাষা থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করেন, গ্রীক পাঠকদের সুবিধার জনে ̈। অন ̈দিকে মথির রেকর্ড মনে হয় এলি এলি লামা শব৩ানী শব্দ ̧লো হিবধæ ও অরামীয় ভাষায় সংমিশ্রণ ( R.N.Nixon : The new bible commentary, pg- ৮৫০)
(২) সময় তখন ছয় ঘটিকা অর্থাৎ বিকাল ৩ঃ০০ টা, তখন প্রায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। কারণ ছিল অদ ̈ই অতিপ্রাক...তিক। ঈশ্বরের হ ̄Íক্ষেপেই ঐ এলাকায় ভরা পূর্ণিমার সময় থাকতেও অন্ধকার নেমে আসে (Nixon -pg .৮৮৪)। অন্ধকার সাধারনতঃ বাইবেলে ঈশ্বরের ক্রে।ধের (যাত্রাপুস্তক ১০ঃ২১)।
(৩) প্রভু‚ যীশু প্রথম বারের মত ঈশ্বরকে পিতা বলে সম্মোধন করেনি। কারণ ছিলো তিনি পাপী মানুষের সমস্ত পাপ বহন করেছিলেন।
(৪) প্রভ‚ যীশু গীতসংহিতার ২২ঃ১ পদ ভাববাণীর পূর্ণতা হিসাবে উচ্চারন করেছেন। সাধু দায়ূদ প্রভ‚ যীশুর প্রায় ১০০০ বা পূর্বে এই গান রচনা করেন। এই গানে প্রভূ যীশুর ক্রশীয় মৃত্যুর সম্পর্কে ভাববাণী করেছিলেন, যখন ক্রশীয় শাস্তির বিধান আবিষ্কৃত হয়নি (গীত ২২ঃ১৬)।
(৪) প্রভ‚ যীশু গীতসংহিতার ২২ঃ১ পদ ভাববাণীর পূর্ণতা হিসাবে উচ্চারন করেছেন। সাধু দায়ূদ প্রভ‚ যীশুর প্রায় ১০০০ বা পূর্বে এই গান রচনা করেন। এই গানে প্রভূ যীশুর ক্রশীয় মৃত্যুর সম্পর্কে ভাববাণী করেছিলেন, যখন ক্রশীয় শাস্তির বিধান আবিষ্কৃত হয়নি (গীত ২২ঃ১৬)।
(৫) এলোই এলোই (ঈশ্বর আমার) বলা সত্তে¡ও যীশুর
ক্রশারোপনের যারা আশে পাশে ছিল তারা ইচ্ছাক...ত ভাবে যীশুর ইচ্চারিত শব্দ ̧ গুলো ভিন্নভাবে ব্যক্ত করেছে। আমাদের জানা দরকার যারা যীশুর আশে পাশে ছিল তারা অনেকেই যিহূদী ও প ̈ালেষ্টাইন বাসী ছিল যারা যিহূদী শাস্র(পুরাতন নিয়ম) ও সাহিত্য ̈ সর্ম্পকে জানত। পরবর্তীতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, সময়ের যিহূদীদের জনপ্রিয় ধারণা ছিল যে, ভাববাদী এলিয় এসে নিষ্পাপ ও ধার্মিকদের রক্ষা করবেন (William L. Lari : The gospel of Mark, 573 )। মার্ক 15 : ৩৬ পদে যদি লক্ষ ̈ করি তাহলে দেখতে পাই যীশুর বাণী উচ্চারণের সাথে সাথে সির্কা পান করার জন ̈ দেন। পুরাতন নিয়মে বলা আছে সিরকা রিফ্রেশমেন্ট পানীয় হিসাবে ব্যবহার ̈ হতো (রূত ২ঃ১৪) গ্রীক ও রোমান সাহিত্যেও ̈ সিরকার বাবহার হতো অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পিপাসা মেটাত এবং সূলোভ মূল্যে ̈ পাওয়া যেত। প্রভু যীশুর সিরকা দেওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ যীশুকে যত বেশি সময় ধরে সজাগ রাখা যায় যেন এই কথা বলা হয়, ‘‘থাক, দেখি, এলিয় উহাকে নামাইতে আইসেন কি না,’’ (মার্ক ১৫ঃ৩৬খ) ((Lare: Mark,571))। প্রভ‚ যীশুকে তিরস্কার ও কষ্ট দেওয়ার জন ̈ এই সকল করা হয় (গীত ৬৯ঃ২১)।
৪র্থ বাণীর তাৎপর্য ঃ
প্রথমতঃ ঈশ্বরের মনোরথ সিদ্ধ করার জন্যে ̈। প্রভু যীশু যখন এই বাণী উচ্চারণ করছিলেন তখন তাঁর উপর সব ধরনের নির্যাতন হয়েছে। সতি ̈ই শত্রুরা যীশুর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেংগে ফেলার চেষ্টা করছে। তাঁর যাতনার বর্ণণা করার কোন ভাষা নেই। চারদিক থেকে যীশুকে নিন্দা করা হচ্ছে। মার্ক ১৫ঃ৩২ পদে যীশুকে ইস্রায়েলর রাজা হিসাবে ঘোষণা দিয়ে তিরস্কার করেছে। তখন সতি ̈ই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বর তুমি কোথায়? প্রভু‚ কিভাবে তাঁর প্রিয় পুত্রকে এমনিভাবে যেতে দিলেন? ঈশ্বরের কী উচিত ছিলনা ̄স্বর্গ থেকে নেমে এসে সেই সময় নরপশুদের হাত থেকে রক্ষা করা? কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষ থেকে উত্তর এলো ‘‘না’’। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে সেই নিন্দাকারীদের ও শাস্তি দাতাদের কাছ থেকে বাঁচাতে আসেনি। তাঁর কারণ যা ভাববাদী যিশাইয় বলে গেছেন, ‘‘তথাপি তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভ‚রই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনা গ্রস্ত’ করিলেন;। প্রভু যীশু যখন এই বাণী উচ্চারণ করেছিলেন তিনি কী সেখানে ছিলেন না? ঈশ্বর অবশ্যই ̈ ছিলেন। কিন্ত সেই মূর্হুতে যীশু পিতা ঈশ্বরের অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন। কিšু‘ ঈশ্বরের ইচ্ছাই তিনি যেন চূর্ণ ও বিদ্ধ হন।
দ্বিতীয়ত : আমাদের পাপের জন ̈ যীশু সমর্পিত হইলেন।
যীশুর এই বিচ্ছেদ : প্রভ‚ যীশু এই মূহূর্তে জগতের পাপে পাপসরূপ হয়েছেন। হবক্ক‚ক ভাববাদী ঈশ্বরের পাপ সর্ম্পকে ঈশ্বরের দৃষ্টিভংগি বলেন,‘‘তুমি এমন নির্মল চক্ষু যে মন্দ দেখিতে পারনা,’’ (হবক্ক‚ক ১ঃ১৩)। ঈশ্বর সত্যি ̈ই তাঁর মুখ সরিয়ে নিয়েছিলেন কারণ তিনি পাপ দেখতে পারেন না। সে কারণে যীশু বিলাপ করছিলেন কেননা ঈশ্বর তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন। আমাদের মনে রাখা উচিত যীশু কোন সাক্ষ্যমর হিসাবে মরেননি। তিনি আমাদের পাপের জন ̈, আমাদের বদলে প্রায়শ্চিত্ত বলি উৎস্বর্গ করছিলেন। সে কারণে পিতা ঈশ্বরকে সেই পাপের কারণে খ্রীষ্টকে পূর্ণভাবে বিচার করেছেন। যিশাইয় ৫৩ঃ৫ বলে,‘‘ কিন্তু তিনি আমাদের অধর্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চ‚র্ণ হইলেন।’’ তাছাড়া সাধু পৌল বলেন,‘‘সেই যীশু আমাদের অপরাধের নিমিত্ত সমর্পিত হইলেন’’ (রোমীয় ৪ঃ২৫)। এবং ‘‘শাস্রাংশনুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জনে ̈ মরিলেন,’’ (১করি ১৫ঃ৩)। শুধু তাই নয়, সাধু পৌল আরও বলেন,‘‘যিনি পাপ জানেন নাই তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ হইলেন,’’ (গালাতীয় ৩ঃ১০)। সাধু পিতর বলেন, ‘‘ তিনি আমাদের ‘‘পাপভার তুলিয়া লইয়া’’ আপনি নিজ দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, (১পিতর ২ঃ২৪)। এবং আমাদের ‘‘পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত’’ হলেন, (যোহন ৪ঃ১০)। তাহলে উপরো৩ ঈশ্বরের বাণী আমাদের পরিষ্কার করে, আমাদের পাপের জনে ̈ খ্রীষ্টের এই ক্ষণিকের বিচ্ছেদ যেন তিনি আমাদের চিরতরে রক্ষা করতে পারেন। ইবধীয় লেখক বলেন, ‘ছাগল ও বাছুরের রক্ত নিয়ে খ্রীষ্ট সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেন নি। তিনি নিজের রক্ত নিয়ে একবারই সেখানে ঢুকেছিলেন। এইভাবে তিনি চিরকালের জন্য পাপ থেকে মুক্তির উপায় করলেন।" (ইব্রীয় ৯:১২)
আমেন ।।
আমেন ।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment