খ্রীষ্টে বলিদান প্রথার আদিঅন্ত - শুরুশেষ
ভূমিকা:
বহুদিন পূর্ব থেকেই বিভিন্ন বলিদান প্রথার প্রচলন আছে। আজকে আমরা দেখব পবিত্র বাইবেলের শিক্ষার ভিত্তিতে , ঈশ্বর একসময় নিজে এই বলিদান শুরু করেছিলেন এবং নিজেই খ্রীষ্টের ক্রুশীয় বলিদানের মধ্য দিয়ে সমস্ত বলিদান প্রথার সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন যেন ঈশ্বর প্রদত্ত পথে যেন তাঁর প্রজারা সত্যে ও আত্মায় তাঁর আরাধনা করতে পারে।।
🔴আলোচনার ঐতিহাসিক ভিত্তি:
আদম হবা পাপে পতিত হওয়ার পরে তারা নিজেদের লজ্জা ঢাকার জন্য ডুমুর গাছের পাতা দিয়ে ঘাগড়া বানিয়েছিলেন তাদের লজ্জা ঢাকার জন্য, যা ছিল তাদের নিজ কর্মের দ্বারা লজ্জা ঢাকার প্রচেষ্টা বা ধার্মিকতা লাভের প্রচেষ্টা । কিন্তু তাদের স্হায়ীভাবে লজ্জা ঢাকার জন্য ঈশ্বর নিজেই পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে উক্ত পশুর চামড়া দিয়ে বস্ত্র পড়িয়ে দিয়েছিলেন যা ভবিষ্যত তাঁর পুত্র যীশুর বলিদানের মধ্য দিয়ে ধার্মিকতা প্রদানের অংগীকার করে
(আদি ৩:৭, ২১)।
(আদি ৩:৭, ২১)।
পরবর্তীতেতে নোহ (আদি
৮:২০),বিশ্বাসের আদিপিতা অব্রাহাম বলিদান দিয়েছেন (আদি
২২ অধ্যায়) ।
বিশেষ করে ইসহাককে বলিদানের ঈশ্বরের আদেশ ঈশ্বর পুত্র যীশুর বলিদানের দৃষ্টান্ত দান করে। ঈশ্বর একটি মেষের বিনিময়ে ইসহাককে রক্ষা করেছিলেন কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুর বলিদানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর প্রজাদের রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন ।
অব্রাহামের পরে ভাববাদী মোশির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বলিদানের শাস্ত্রীয় নিয়ম দিয়েছেন যা যাত্রা ,লেবীয়, গণনা ও দ্বিতীয় বিবরণে বিস্তারিত লেখা আছে ।
প্রতিটি বলিদানই খ্রীষ্টের বলিদানের ছায়াস্বরূপ (ইব্রীয় ১০ :১-৬)।
➡️যিশাইয় ভাববাদী খ্রীষ্টের বলিদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ৫৩ অধ্যায়ে যার মধ্য দিয়ে পাপী মানুষ ধার্মিক গণিত হবে ( ১১ পদ)
প্রতিটি বলিদানই খ্রীষ্টের বলিদানের ছায়াস্বরূপ (ইব্রীয় ১০ :১-৬)।
➡️যিশাইয় ভাববাদী খ্রীষ্টের বলিদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ৫৩ অধ্যায়ে যার মধ্য দিয়ে পাপী মানুষ ধার্মিক গণিত হবে ( ১১ পদ)
🔴সর্বশেষ বলিদান : পবিত্র বাইবেল শেষ বলিদানের কথা এভাবে বলেছেন : ইব্রীয় লেখক বিস্তারিত ভাবে পুরাতন নিয়মের বলির সাথে খ্রীষ্টের বলিদানের তুলনা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন । খ্রীষ্ট নিজেই মসীহ হিসাবে যাজকীয় দায়িত্ব পালন করেছেন অর্থাৎ নিজ রক্ত নিয়ে তিনি স্বর্গীয় মন্দিরে বলিদানের নিয়মের পূর্ণতা দিয়েছেন ।
ইব্রীয় লেখক খ্রীষ্টের বলিদান সম্পর্কে বলেছেন এভাবে ,
➡️"
কেননা খ্রীষ্ট হস্তকৃত পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন নাই- এ
ত প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপ মাত্র- কিন্তু স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন
তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন। ২৫ আর মহাযাজক যেমন বৎসর বৎসর পরের রক্ত লইয়া পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন, তদ্রূপ খ্রীষ্ট যে অনেক বার আপনাকে উৎসর্গ করিবেন, তাহাও নয়; ২৬ কেননা তাহা হইলে জগতের পত্তনাবধি অনেক বার তাহাকে মৃত্যু ভোগ করিতে হইত। কিন্তু বাস্তবিক তিনি একবার, যুগপর্যায়ের পরিণামে, আত্মযজ্ঞ দ্বারা পাপ নাশ করিবার নিমিত্ত, প্রকাশিত হইয়াছেন। ২৭ আর যেমন মনুষ্যের নিমিত্ত একবার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে, ২৮ তেমনি খ্রীষ্টও ‘অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার’ নিমিত্ত ॥( ৯:২৮ * যিশাইয় ৫৩:১২।) * একবার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন; তিনি দ্বিতীয় বার, বিনা পাপে, তাহাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে।"
(ইব্রীয় ৯:২৪-২৮)।
➡️প্রেরিত পিতর তদ্রূপ বলেন ,
"কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন- সেই ধার্মিক ব্যক্তি অধার্মিকদের নিমিত্ত- যেন
আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান। তিনি মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।"( ১ পিতর ৩:১৮)
খ্রীষ্টের বলিদান পুরাতন নিয়মের সীমাবদ্ধতা দূর করেছেন । যেখানে পুরাতন নিয়মে শুধু যাজকগণ মন্দিরের পবিত্র স্হানে যেতে পারত এখন নতুন নিয়মে স্বর্গীয় পবিত্র স্হানে খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদেল যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন ।
➡️অতএব, হে
ভ্রাতৃগণ, যীশু আমাদের জন্য ‘তিরস্করিণী’ দিয়া, অর্থাৎ আপন মাংস দিয়া, যে
পথ সংস্কার করিয়াছেন,আমরা সেই নূতন ও জীবন্ত পথে, যীশুর রক্তের গুণে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিতে সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি;
এবং ঈশ্বরের গৃহের উপরে নিযুক্ত মহান এক যাজকও আমাদের আছেন;এই জন্য আইস, আমরা সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তায় [ঈশ্বরের] নিকটে উপস্থিত হই; আমরা ত হৃদয়প্রোক্ষণ-পূর্বক মন্দ হইতে মুক্ত, এবং
শুচি জলে স্নাত দেহবিশিষ্ট হইয়াছি;"
(ইব্রীয় ১০:১৯-২২)
🌎 এর অর্থ কি ? খ্রীষ্টের বলিদানের পর আর কোন বলিদান প্রয়োজন নেই কারণ খ্রীষ্টের বলিদান ঈশ্বরের কাছে আসার পথ উন্মোচন করেছেন ।
🔴খ্রীষ্ট পুরাতন নিয়মের সমস্ত কিছুর পূর্ণতা দিয়েছেন ( মথি ৫:১৭)। সেটা কিভাবে ?
ব্যবস্থার একটা দাবী আছে যেন মানুষ পূর্ণাঙ্গ ভাবে পালন করে । তা না হলে মানুষ হয় অভিশপ্ত । সেই কারণে প্রতিটি মানুষই ব্যবস্থার দাবী পূর্ণ না করতে পারায় অভিশপ্ত । কিন্তু খ্রীষ্ট যীশু ব্যবস্থার দাবী দাওয়া পূর্ণ করে নিজের জীবনের বিনিময়ে সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন যেমন শাস্ত্রীয় বচন বলে ,"খ্রীষ্টই মূল্য দিয়া আমাদিগকে ব্যবস্থার শাপ হইতে মুক্ত করিয়াছেন, কারণ তিনি আমাদের নিমিত্তে শাপস্বরূপ হইলেন; কেননা লেখা আছে, ‘‘যে ব্যক্তিকে গাছে টাঙ্গান যায়, সে শাপগ্রস্ত” ;"
( দেখুন গালাতীয় ৩:১০-১৪)।
🔴খ্রীষ্টতে পরিত্রাণ কার্য সম্পন্ন হয়েছে :
খ্রীষ্টের ক্রুশীয় বাণী "সমাপ্ত হইল" বলার সাথে সাথেই মানুষের পরিত্রাণের জন্য যা প্রয়োজন তার সমাপ্তি ঘটেছে । (যোহন ১৯:৩০)। তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই যিরুশালেম মন্দিরের পর্দা ছিড়ে গেল । যার অর্থ এখন থেকে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা বিনা বাধায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ
সিংহাসনের সাক্ষাতে সাহস পূর্বক যেতে পারে যা পূর্বে সম্ভব ছিল না । (ইব্রীয় ৪:১৪-১৬)।
সিংহাসনের সাক্ষাতে সাহস পূর্বক যেতে পারে যা পূর্বে সম্ভব ছিল না । (ইব্রীয় ৪:১৪-১৬)।
লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, পুরাতন নিয়মের বলিদান বার বার বছরে বছরে দিতে হত যা কখনো পাপ হরণ করতে পারে না (ইব্রীয় ১০:১, ৯:২৫-২৬ ও ১০:৪)।
কিন্তু খ্রীষ্টের বলিদান সর্ব সময়ের জন্য সম্পন্ন হয়েছে যার পরে আর কোন বলিদান প্রয়োজন নেই । (ইব্রীয় ৭:২৭,৯:১৪,২৮, ১০:১০১১২,১৪, ১
পিতর ৩:১৮)।
🔴খ্রীষ্টের বলিদানে স্বর্গীয় পথ উন্মোচন :
খ্রীষ্টের বলিদান ছাড়া আর কোন পথ নেই যার মধ্য দিয়ে মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারেন ।
খ্রীষ্টের নিজের দাবী , " যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।"
(যোহন ১৪:৬)। খ্রীষ্টের এই দাবীর অর্থ এই নয় যে , আদমের সময় আদম একমাত্র পথ ছিল , মোশির সময় মোশি একমাত্র পথ ছিল , দায়ুদের সময় দায়ুদ একমাত্র পথ ছিল কিন্তু খ্রীষ্ট সর্ব সময়ের জন্য একমাত্র পথ। সমস্ত জগতে একটি মাত্র নাম আছে যে নামে মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারে। যীশু খ্রীষ্টের নামের গুণে মানুষ পাপ থেকে মুক্তি পায়। (প্রেরিত ৪:১২ তুলনীয় রোমীয় ৩:২০,১০:৪)
(যোহন ১৪:৬)। খ্রীষ্টের এই দাবীর অর্থ এই নয় যে , আদমের সময় আদম একমাত্র পথ ছিল , মোশির সময় মোশি একমাত্র পথ ছিল , দায়ুদের সময় দায়ুদ একমাত্র পথ ছিল কিন্তু খ্রীষ্ট সর্ব সময়ের জন্য একমাত্র পথ। সমস্ত জগতে একটি মাত্র নাম আছে যে নামে মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারে। যীশু খ্রীষ্টের নামের গুণে মানুষ পাপ থেকে মুক্তি পায়। (প্রেরিত ৪:১২ তুলনীয় রোমীয় ৩:২০,১০:৪)
এখন নতুন নিয়মের যুগে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা রাজকীয় যাজক যারা ঈশ্বরের কাছে আত্মিক বলি ও স্তববলি উৎসর্গ করবে । প্রভুর বাক্য এই কথা বলে ,
"আসিয়া জীবন্ত প্রস্তরের ন্যায় আত্মিক গৃহস্বরূপে গাঁথিয়া তোলা যাইতেছ, যেন পবিত্র যাজকবর্গ হইয়া যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ করিতে পার। (১ পিতর ২:৯ ,২:৫)
➡️"অতএব আইস, আমরা তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।"
(ইব্রীয় ১৩:১৫)
🔴এখন পুরাতন নিয়মের পশু বলিদানের প্রভাব কি ?
খ্রীষ্টীয় শিক্ষানুসারে এখন বলিদানের ভিত্তি ও কার্যকারীতাও নেই । এখন তা মৃত কাজ হিসাবে স্বীকৃত। (ইব্রীয় ৯:১৪)।
🌎উপসংহার:
ঈশ্বর তাঁর করুণায় আদমকে পাপের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পশুর চামড়া দিয়ে ধার্মিকতার প্রতীকী বস্ত্র পরিয়ে ছিলেন এই জন্যই যে একদিন তাঁর পুত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর নিজের ক্রুশীয় বলিদানের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রজাদের ধার্মিকতার বস্ত্র পরিধানের ব্যবস্থা করবেন যেন তাঁর প্রজারা যোগ্যভাবে জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারে। ঈশ্বর আমাদের সেই জ্ঞান দান করুণ যেন খ্রীষ্টের শেষ বলিদানের মাহাত্ম্য বুঝে সে অনুযায়ী চলতে পারি।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment