পুনরুত্থান : কে কি বলে এবং তাৎপর্য

ভূমিকা: খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের অন্যতম স্তম্ভ। সাধু পৌল বলেন, “ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সর্মপণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন;” ( ১করি ১৫:৩-৪ পদ)। অবশ্য খ্রীষ্টিয় শিক্ষার পূর্বে পৌত্তলিকদেরও পুনরুত্থান সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা ছিল। কিন্তু যিহুদীদের পুরাতন নিয়ম ও এ্যাপোক্রাইফার শিক্ষায় দৈহিক পুনরুত্থানের ধারণা প্রচলিত ছিল। এই প্রবন্ধে বিশেষ করে পৌত্তলিক, যিহুদী ও খ্রীষ্টিয় শিক্ষার পুনরুত্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।
১) পৌত্তলিকদের ধারণা: প্রথমত: খ্রীষ্টপূর্ব ও খ্রীষ্টিয় সমসাময়িক গ্রীক বিশ্বে পুনরুত্থান বিশ্বাস করত না। গ্রীক লেখকদের মধ্যে Homer অন্যতম লেখক। তাঁর পুস্তক The Iliad উল্লেখ করেছেন, “ÒBear up, and don’t give way to angry grief; Nothing will come of sorrowing for your son, nor will raise Him up before you die.” ( Homer, The Iliad, 24.549-51) অর্থাৎ তিনি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর আরেকটি পুস্তক Odyssy- -তে তাঁর পাঠকদের কোন আশা দেন নি যে মৃত্যু তাদের অন্য কোন ভাল বিশ্বে স্থানান্তর করবে।| (N.T.Wright)|
(1) অন্যদিকে গ্রীক লেখক Aeschylus তাঁর নাটক Eumenides উল্লেখ করেছেন , “Once a man has died, and the dust has soaked up his blood there is no resurrection” (Aeschylus, Eumenides, 647) প্রকৃতপক্ষে প্রথম শতাব্দীর পরজাতীয়দের ধারণা ছিল, Ò I wasn’t , I was, I am not, I didn’t care” (প্রচলিত গ্রীক ও ল্যাটিন প্রবাদ)। তাই এতে প্রতীয়মান হয় যে পরজাতীয়রা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না।
দ্বিতীয়ত: মৃতদের নিয়ে বিকল্প বিশ্বাসগুলো হচ্ছে:
(ক) হোমারের ধারণা ছিল পাতাল হচ্ছে মৃত আত্মাদের ছায়ার মত স্থান। তিনি বিশ্বাস করতেন জীবনের চলন আছে কিন্তু তা দৈহিক নয়।
(খ) পিথানোরাস এর ধারনা ছিল, অনেক হিন্দু ধর্মের শিক্ষা পুর্নজন্মের মতো। এক দেহ থেকে অন্য দেহে প্রাণের স্থানান্তর(Transmigration of soul). হতে পারে তা কোন মানুষে, প্রাণী, জন্তু বা জড় পদার্থে ।
(গ) প্লেটো মনে করতেন কিছু ব্যক্তি হয়ত মৃত্যুর পরে আনন্দক্ষণ মূহুর্ত অনুভব করার সুযোগ আছে। তবুও তিনি দেহের পুনরুত্থানে নেতিবাচক ছিলেন। তিনি বলেন , “ÒThe soul is imprisoned in the body like an oyster in a shell” (Plato, Phaedrus 250c)
ঘ) নিউ প্লেটোনিজম(Neoplatonism) বিশ্বাস করত এই পৃথিবীতেই শুদ্ধতা ও সুখী হওয়া সম্ভব। তারা আরও বিশ্বাস করত আত্মার পূর্ব অস্তিত্ব এবং অমরত্বে। এই আত্মা বাহক হিসাবে কাজ করে অন্য ব্যক্তির মধ্যে প্রবশ করতে। (ঙ) প্রাচীন মিশরীয় ধারনা ছিল অদ্ভুত। প্রাচীন গ্রন্থ “ÒBook of the dead” এ মৃতদের সম্পর্কে জানা যায়। মিশরীয়রা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করত। তারা বিশ্বাস করত যদি মৃত দেহের রক্ষণা-বেক্ষণ না করা হয় তাহলে আত্মা শান্তি পায় না। তাই তারা সময় নিয়ে দেহ রক্ষার ব্যবস্থা করত। যা করতে সাধারণত ৭০ দিন সময় লেগে যেত। পীরামিডগুলো কবরস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হতো যা মিশরীয় মৃতদের সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, পৌত্তলিক ও পরজাতীয় শিক্ষায় দেহের পুনরুত্থানে কোন বিশেষ ধারণা নেই। ঐ কারণে গ্রীস এর র্দাশনকিরা সাধু পৌলকে উপহাস করছেলি , “তখন মৃতগণরে পুনরুত্থানরে কথা শুনয়িা কহে কহে উপহাস করতিে লাগলি ( Acts ১৭:৩২).এ প্রসংগে N.T.Wright বলেন, “Christianity was born into a world where it’s central claim was known to be false. Many believed that dead were man existent; outside Judaism, nobody believed in resurrection,” (N.T. Wright, Resurrection. 35).
(২) যিহুদী ধর্মে পুনরুত্থানের ধারণা:
প্রথমত: পুরাতন নিয়মে আমরা পাতালের (Sheol) ধারণা পাই। হিব্রু ধারণা পাতাল বা (Sheol) সাথে গ্রীক লেখক হোমারের পাতাল ধারনার সাথে অনেকটা মিল আছে। মৃত ব্যক্তিরা সেখানে ঘুমায়। মাঝে মাঝে তারা সেখান থেকে উঠতে পারতো যেমন: শৌল ও শমূয়েলের ক্ষেত্রে হয়েছিল কিন্তু তা নিষিদ্ধ ছিল। ( ১শমূয়েল ২৮:৩-২৫ পদ)। পরবর্তীতে গীতসংহিতায় মৃত্যুর পরে নতুন জীবনের কথা প্রকাশ করে। (গীত ১৬:১০ পদ)
দ্বিতীয়ত: পুরাতন নিয়মে মৃতদের দৈহিক পুনরুত্থানের উদাহরহণ রয়েছে ভাববাদী এলিয় ও ইলিশায় দু’জনেই মৃতদের জীবন দান করেছিলেন। ( ১ম রাজাবলি ১৭:৭-২৪, ২ রাজাবলি ৪:৮-৩৭ পদ)। দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পরাক্রম ও ভবিষ্যত দৈহিক পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেয়। যদিও তারা পুনঃজীবন পেয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তারা মারা যায়।
তৃতীয়ত: পুরাতন নিয়মে দৈহিক পুনরুত্থানের ভাববাণী বেশকয়েকটি জায়গায় ভবিষ্যত পুনরুত্থানের কথা পুরাতন নিয়ম আমাদের শক্ত করে। যেমন: ইয়োব ১৯:২৩-২৭, যিশাইয় ২৫:৬-৭; ২৬:১৯, যিহিষ্কেল ৩৭:১-১৪, দানিয়েল ১২:১-২, ১৩ পদ
(৩) পুরাতন নিয়ম পরবর্তী পুনরুত্থানের ধারণা এটা স্পষ্ট যে, মাক্কাবীদের সময়ে ফরীশী যিহুদী ধর্মীয় সম্প্রদায় পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত। তারা সৎ ও অসৎ উভয়ই শেষকালে পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত। ( প্রেরিত ২৩:৬-৮ ;২ মাক্কাবী ৭ ). ইতিহাসবিদ যোশিফাস তাঁর গ্রন্থ Antiquities এ পুনরুত্থানের কথা উল্লেখ করেন( Josephus, Antiquities ১৮.১১-২৫)। প্রভু যীশু যখন মৃত লাসারকে জীবিত করতে গেলেন তখন আমরা মার্থার পুনরুত্থানের ধারণা স্পষ্ট হয়ে দেখতে পাই। তিনি ষ্পষ্টত: শেষ সময়ে পুনরুত্থানের কথা যীশুকে বলেছিলেন (যোহন ১১:২৩-২৪ পদ)
*এসিনি সম্প্রদায় (যারা কামরান গোহায় বসবাস করত, এরা সমাজ থেকে আলাদা বসবাস করত) তারাও শেষকালে দৈহিক পুনরুত্থান বিশ্বাস করত। “The Dead Sea scroll”–এ লেখা আছে “see all the Lord has made :………… he who give life to the dead of his people.” (4 Q 521)
(*) সদ্দূকীরা: যীশুর সমসাময়িক যিহুদী সম্প্রদায় পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না। (মথি ২২:২৩-৩৩; প্রেরিত ২৩:৬-৮; ২৪:১৫-১৬)
(৪) যীশু ও পুনরুত্থান: প্রভু যীশুর পুনরুত্থান সম্পর্কে শিক্ষা: সুসমাচারগুলোতে বিভিন্ন ঘটনা ও শিক্ষা দেওয়ার সময় তিনি পুনরুত্থান সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন: (*) সদ্দূকীরা যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না। তারপরে তারা শুধু পুরাতন নিয়মের শুধু তৌরাৎ বা প্রথম পাঁচটি পুস্তক বিশ্বাস করত। যীশু তৌরাৎ থেকেই প্রমাণ করেছিলেন পুনরুত্থানের অস্তিত্ব। যীশু তাদের ভ্রান্তির জন্য অনুযোগ করেছিলেন। যীশু বলেন, “কিন্তু মৃতদের বিষয়ে, তাহারা যে উত্থিত হয়, এই বিষয়ে মোশির গ্রন্থে ঝোপের বৃত্তান্তে ঈশ্বর তাঁহাকে কিরূপ বলিয়াছিলেন, “আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর। তিনি মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের। তোমরা বড়ই ভ্রান্তিতে পড়িয়াছ।” (মার্ক ১২:২৬-২৭)
* প্রভু যীশু নিজেই পুনরুত্থানের কর্তা: যীশু শুধু মৃতদের পুনরুত্থান সম্পর্কে শিক্ষা দেননি বরং তিনি নিজেই পুনরুত্থান ও জীবন (যোহন ১১:২৫)। তিনি নিজেই সকলের পুনরুত্থান দিবেন। প্রভুর বাণী এ কথা বলে, “সত্য, সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এমন সময় আসিতেছে, বরং এখন উপস্থিত, যখন মৃতেরা ঈশ্বরের পুত্রের রব শুনিবে, এবং যাহারা শুনিবে তাহারা জীবিত হইবে। ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিবে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে এবং যাহারা সৎকার্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহিন হইয়া আসিবে। ( যোহন ৫:২৫,২৭)। ’
* যীশুর মৃতদের জীবনদান: প্রভু যীশু পুনরুত্থান বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁর রবেই মৃতদের জীবিত করা হবে। তা তিনি জগতে থাকতে থাকতে তিনি প্রমাণ দিয়েছেন। সুসমাচার লেখকগণ যীশুর বেশ কয়েকটি মৃতদের জীবন দানের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। যেমন: (১) যায়ীর নামে অধ্যক্ষের মেয়েকে জীবন দান (মার্ক ৫:৩৫-৪৩, মথি ৯:২৩-২৬, লূক ৮:৪৯-৫৬)। (২) নায়িন নগরের বিধবার একমাত্র পুত্রকে জীবন দান ( লূক ৭:১১-১৭)। (৩) মৃত লাসারকে জীবন দান ( যোহন ১১:১-১৪)। প্রভু যীশুর নিজের পুনরুত্থান: চারটি সুসমাচারেই প্রভু যীশুর পুনরুত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ( মথি ২৮, মার্ক ১৬, লূক ২৪, যোহন ২০, ২১)
খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের তাৎপর্য:-
======================
খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রীষ্টিয়ান ধর্মতত্ত্ব ও বিশ্বাসের মূল শিক্ষা। আদি মন্ডলীতে এই শিক্ষা যেমন সত্য ছিল, আজও সেই সত্য বহন করে। নানা কারণে খ্রীষ্টের পুনরুত্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
প্রথমত: খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বের প্রমান”: ত্রিত্ব ঈশ্বরের দ্বিতীয় ব্যক্তি পুত্র ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে মুদ্রাঙ্কিত হয়। সাধু পৌল বলেন; “যিনি পবিত্রতার আত্মার সম্বন্ধে মৃতগণের পুনরুত্থান দ্বারা সপরাক্রমে ঈশ্বরের পুত্র বলিয়া র্নিদিষ্ট; (রোমীয় ১:৪)। যীশু ঈশ্বরের পুত্র: তাঁর জন্মের সময় স্বর্গদূত বলেছেন; (লূক ১:৩৫); পিতা ঈশ্বর যীশুর বাপ্তিস্ম ও রূপান্তরের সময় তাঁর অনন্য পুত্র সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছিলেন (মার্ক ১:১১, ৯:৭)। এছাড়াও তাঁর উপাধি “প্রভু” তাঁর ঈশ্বরত্বের প্রমাণ। তিনি কোন কৃতদাসের প্রভু না, তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রভু। খ্রীষ্টের মৃত্যুর পূর্বে যেমন তাঁর প্রভুত্ব প্রকাশিত হয়েছে তাঁর পুনরুত্থানের পরে তার ব্যবহার আদি মন্ডলীতে আরও বেশি দেখা যায় (প্রেরিত ২:৩২-৩৬; ফিলি ২:১১)। শিষ্যেরা যীশুর কাছে প্রার্থনা করেছে যেমনি পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে (প্রেরিত ৭:৫৯-৬০; ১ করি ১:২, তুলনীয় প্রকাশিতবাক্য ৩:১৪,২১; ২২:১৬)। তাঁর প্রতি প্রদত্ত উপাধি “প্রভু” ঈশ্বরের নামের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত (১করি ১:৩; ২করি ১:২; তুলনীয় প্রকাশিতবাক্য ১৭:১৪; ১৯”১৬’ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭)। পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরত্ত্বের প্রতিজ্ঞা ও গুণাবলী যীশু খ্রীষ্টের উপর বর্তায় (প্রেরিত ২:২১,৩৮; রোমীয়১০:৩, যোয়েল ২:৩২,৩৮; ১থিষল ৫:২, আমোষ ৫:১৮; ফিলীপিয় ২:১০-১১ ও যিশাইয় ৪৫:২৩)। যীশুকে ঈশ্বর হিসাবে বাইবেলের বিভিন্ন অংশে শক্তিশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন যোহন ১:১,১৮, ২০:২৮; ২থিষল ১:১২, ১ তীম ৩:১৬; তীত ২:১৩ এবং ২ পিতর ১:১ পদ
দ্বিতীয়ত: পাপ ও মৃত্যুর উপরে বিজয়। সাধু পৌল বলেন, “আমরা জানি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন বলিয়া খ্রীষ্ট আর কখনো মরিবেন না, তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্তৃত্ত্ব নাই।” ( রোমীয় ৬:৯)। যীশুর মৃত্যুর পূর্বের দেহ ছিল মৃত্যুর অধীন। তিনি জন্মেছিলেন যেন তাঁর দেহ দ্বারা আমাদের জন্য ক্রুশে বলিকৃত হতে পারেন (ইব্রীয় ১০:৫-১৪)।” কিন্তু তাঁর পুনরুত্থিত দেহ অবিনশ্বর। এদেহের উপরে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারবে না। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসাবে আমরা পাপের অধীনে মৃত ছিলাম। যখন আমরা প্রভুকে গ্রহণ করি এবং তাঁর সাথে মিলিত হই তখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের উপরে পাপ ও মৃত্যু (অনন্ত নরক) রাজত্ব করতে পারে না। সেই জন্য খ্রীষ্টের পুনরুত্থান যীশু ও তাঁর অনুসারীদের বিজয় এনে দিয়েছেন।
তৃতীয়ত: খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা ধার্মিক গণিত হয়। সাধু পৌল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন যে খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের সাথে আমাদের ধার্মিকতা (ঈশ্বর পাপীকে খ্রীষ্টের কৃত কার্য্যের দ্বারা ধার্মিক হিসাবে গণনা করেন)। সাধু পৌল বলেন, “সেই যীশু আমাদের পাপের নিমিত্ত সমর্পিত হইলেন এবং আমাদের ধার্মিক গণনার নিমিত্ত উত্থাপিত হইলেন।” ( রোমীয় ৪:২৫)। যখন খ্রীষ্ট পুনরুত্থান করেন তখন ঈশ্বর খ্রীষ্টের কৃত প্রায়শ্চিত্ত বলিদান গ্রহণের প্রমান দেন। কারণ খ্রীষ্ট নিজেকে নত করেছেন, এমনকি ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত (ফিলীপিয় ২:৮)। সে কারণে ঈশ্বর তাঁকে উচ্চ পদান্বিত করেছেন (ফিলীপিয় ২:৯)।” খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর এই ঘোষণা দেন যে, মানুষের পরিত্রাণের কার্য সুসম্পন্ন হয়েছে। খ্রীষ্টকে আর কবরে পড়ে থাকতে হবে না। পাপের দেনা-পাওনায় সমস্ত মূল্য শোধ হয়েছে। সেইজন্য একজন পাপী খ্রীষ্টকে বিশ্বাস ও গ্রহণ করে, তখন ঈশ্বর তাকে ধার্মিক হিসাবে গ্রহণ করেন। এভাবে খ্রীষ্টের পুনরুত্থান আমাদের শেষ প্রমাণ দেয় যে তিনি আমাদের জন্যে ধার্মিকতা অর্জন করেছেন।
চতুর্থত: বিশ্বাসীদের দৈহিক পুনরুত্থানের ও অনন্তজীবনের নিশ্চয়তা দেয়। করিন্থীয় মন্ডলী ভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিল। অনেকেই গ্রীক শিক্ষা মৃতদের দৈহিক পুনরুত্থান নাই বিশ্বাসের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল। সেই কারণে সাধু পৌল ১ম করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে মৃতদের পুনরুত্থান সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। সাধু পৌল বলেন, “ভাল, খ্রীষ্ট যখন এই বলিয়া প্রচারিত হইতেছেন যে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন তখন তোমাদের কেহ কেহ কেমন করিয়া বলিতেছ যে, মৃতদের পুনরুত্থান নাই? মৃতগণের পুনরুত্থান যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও উত্থাপিত হন নাই।” ১ম করি ১৫:১২-১৩। তিনি আরও বলেন, “কিন্তু বাস্তবিক খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ (১ম করি ১৫:২০)।” অন্যদিকে, অনন্তজীবনের জন্য বিশ্বাসীদের পুনরুত্থান প্রয়োজন। এ প্রসংগে সাধু পৌল বলেন, “আমি এই বলি, ভ্রাতৃগণ, রক্ত মাংস ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হইতে পারে না; ’’’এবং ক্ষয় অক্ষয়তার অধিকারী হয় না।” (১ম করি ১৫:৫০)। বিশেষ বিষয় হলো যে, যারা খ্রীষ্টের আগমনে জীবিত থাকবে তারা না মরে তাদের দেহের পরিবর্তন হবে পুনরুত্থিত দেহের মত (১ম থিষল ৪:১৩-১৭)। সেইজন্য খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসীদের পুনরুত্থান ও অনন্তজীবনের পথে প্রবেশ করে। (খ্রীষ্টকে যারা বিশ্বাস করে তখনই তাদের অনন্তজীবন শুরু হয় কিন্তু এখানে অনন্তজীবনকে দ্বিতীয় আগমনের পরের সময়কে বুঝানো হয়েছে।)
পঞ্চমত: খ্রীষ্টের পুনরুত্থানে বর্তমান বিশ্বাসীদের জীবনে তাৎপর্যময়:
সাধু পৌল ১করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে পুনরুত্থানের তাৎপর্য বর্ণনা করে এই পরামর্শ দিয়েছেন, “অতএব, হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্যে সর্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।” ( ১ করি ১৫:৫৮)। ইহা ছাড়াও সাধু পৌল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়েছেন। “অতএব তোমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত উত্থাপিত হইয়াছে তখন সেই উর্ধ্বস্থানের বিষয় চেষ্টা কর যেখানে খ্রীষ্ট আছেন। উর্ধ্বস্থ বিষয় ভাব, পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না। কেননা তোমরা মরিয়াছ, এবং তোমাদের জীবন খ্রীষ্টের সহিত ঈশ্বরে গুপ্ত রহিয়াছে। আমাদের জীবনস্বরূপ খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন তোমরা তাঁহার সহিত সপ্রতাপে প্রকাশিত হইবে।” (কলসীয় ৩:১-১৪)। সেইজন্য খ্রীষ্টের পুনরুত্থান বিশ্বাসীদের বাধ্য করে যেন সৎ জীবন যাপন করে। সাধু পৌল বলেন, “অতএব পাপ তোমাদের মর্তদেহে রাজত্ব না করুক- করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে; আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর।” (রোমীয় ৬:১২-১৩)। সেইজন্য খ্রীষ্টিয় জীবন পাপহীন জীবনের পরামর্শ দেয়।
উপসংহার:
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা বিশেষ করে পরজাতীয় বা পৌত্তলিকদের মৃতদের পুনরুত্থান সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষা দেখলাম, যাতে প্রতীয়মান হয়, তাদের প্রকৃত পুনরুত্থানের শিক্ষার কোন প্রমান নেই। তার কারণ তাদের কোন ঈশ্বর প্রকাশিত কোন প্রত্যক্ষ কোন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছিল না। অন্যদিকে ঈশ্বর তাঁর মনোনীত ভাববাদীও তাঁর ভক্ত দাসদের কাছে পুনরুত্থানের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরেছেন যা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের শুধু সান্তবনাই দেয় না বরং অনন্তজীবনের নিশ্চয়তা দেয়। খ্রীষ্ট যেমনটি বলেছেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন” তিনি তাঁর দাবী তাঁর নিজের জীবন দিয়ে প্রমান করেছেন। যারা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পিতা ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হয় তাদের ভয় নাই। তারা খ্রীষ্টের সাথে বিজয়ী ও রাজত্ব করবে। এই ইস্টার সময়ে ঈশ্বর আমাদের প্রকৃত পুনরুত্থিত জীবন যাপনের তাৎপর্য অনুযায়ী চলার সামর্থ্য দান করুন।
আমেন।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Resurrection-Who-says-what-and-means

Comments

Popular posts from this blog

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া

Popular Posts

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া