ট্রিপল “গ”: পাপীর পরিত্রাণ স্থল
ভুমিকা: গেৎসিমানী, গব্বথা ও গলগাথা (কালভেরী) তিনটি জায়গার নাম খ্রীষ্টকৃত প্রায়শ্চিত্তের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। গেৎসিমানী বাগানে প্রভু যীশু মর্মবাণী, গব্বথায় পীলাতের কৃত প্রভূ যীশুর ক্রুশের মৃত্যুর রায় ও গলগাথায় সেই রায়ের কার্য্যকারীতা তিনটি স্থানকে দিয়েছে অর্থপুর্ণ গুরুত্ব। গব্বথা থেকে গলগাথা ছিলো ক্রুশের পথ যাকে বলা হয় ডলোরোসা (DOLOROSA) । এই রক্তঝরা পথ পেরিয়েই প্রভু যীশু আমাদের জন্য পরিত্রাণ কার্য্য সম্মন্ন করেছেন। এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে আমরা ৩টি গুরুত্বপুর্ণ “গ” যুক্ত স্থান: গেৎসিমানী, গব্বথা ও গলগাথা নিয়ে ক্ষুদ্র পরিষরে আলোচনা করব।
গেৎসিমানী:
গেৎসিমানী বাগান প্রভু যীশুর মর্মভেদী প্রার্থনার জন্যে চিরস্মরনীয় হয়ে আছে। গেৎসিমানী শব্দটি অরামীয় ভাষা থেকে এসেছে যার অর্থ তেলের ঘাঁনী। গেৎসিমানী বাগান যিরুশালেমের পুর্বদিকে কিদ্রোণ উপতক্যার পিছনে এবং জৈতুন পর্বতের কাছাকাছি ছিল (মথি ২৬:৩০;যোহন ১৮:১ পদ)। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিস্তার পর্বের ভোজ শেষ করে গেৎসিমানী বাগানে আসেন। এই জায়গা যীশুর অত্যন্ত প্রিয় জায়গা ছিল। তিনি মাঝে মাঝে এখানে শিষ্যদের নিয়ে আসতেন (যোহন ১৮:২ পদ)। এখনও এই বাগানে অতি পুরাতন জলপাই বৃক্ষ আছে। এখানেই প্রভু যীশুর শিষ্য ইস্করিয়তীয় যিহুদা শত্রুদের কাছে তাঁকে সমর্পন করেন। এই বাগানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট পিতার কাছে মর্মভেদী প্রার্থনা করেন। তার বেদনা ছিল না মানুষের প্রতি ভয় অথবা ক্রুশের দৈহিক যন্ত্রণা। তাঁর বেদনা ছিল যে তিনি যে ক্রোধের পানপাত্র পান করতে যাচ্ছেন (John MacArthur, Study Bible P-1445)। পুরাতন নিয়মে “পানপাত্র” ঈশ্বরের ক্রোধের চিহ্ন হিসেবে দেখানো হয়েছে (যিশাইয় ৫১:১৭,২২; যিরমিয় ২৫:১৫-১৭, ২৭-২৯)। কেননা যীশু পরেরদিন অর্থ্যাৎ ক্রুশোরোপনের দিন যীশু অনেকের পাপভার বহন করবেন (ইব্রীয় ৯:২৮ পদ)। তাছাড়া সম্পূর্ণ স্বর্গীয় ক্রোধ তাঁর উপরেই অবহিতি করবে (যিশাইয় ৫৩:১০,১১; ২ করিন্থীয় ৫:২১)। যীশুকে পাপের মুল্য পরিশোধ করার জন্য ক্রুশে যেতে হবে। বিশেষ করে মথি ২৭:৪৫ পদে, “আমার ইচ্ছা নয় কিন্তু তোমার ইচ্ছা পুর্ণ হউক” এই বাক্যে সেই প্রতিফলন ঘটায় যে, অত্যন্ত তিক্ত পানপাত্র যা যীশুকে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এই প্রার্থনা খ্রীষ্টের মানবিক স্বভাবের উপস্থিতি এবং পিতার কাছে সমর্পনে চরম নিষ্টা দেখা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের ইচ্ছার চেয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রাধন্য দেওয়া উচিৎ যা সুন্দর, সিদ্ধ ও আশাতীত ঈশ্বরের আর্শীবাদ নিয়ে আসে।
গব্বথা:
হিব্রু শব্দ গব্বথা অর্থ “উঁচু” যেখানে বিচারাসন ছিল। গ্রীক শব্দে বলা হয়েছে, Lithostrōtos (Greek λιθόστρωτος) অর্থ্যাৎ “শিলাস্তরণ” (যোহন ১৯:১৩ পদ) । এই বিচারাসন থেকে পীলাত প্রভু যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর ঐতিহাসিক রায় দেন। সেই কারণে গব্বথা প্রহসনমূলক বিচারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। গব্বথার বিচারাসন মোজাইক পাথরে তৈরী ছিল। অনেকে মনে করেন এই গব্বথা এন্টণীয়ার টাওয়ার কাছে ছিল যা উত্তর -পশ্চিমে যিরুশালেম মন্দিরের দিকে(J.D. DOUGLAS, The new bible dictionary, 445)। গব্বথার স্থাপনা সম্পর্কে বলতে হয় যে, হেরোদ তাঁর রাজবাড়ির সামনে এটা বানিয়েছিলেন। রাজবাড়িটি ছিল রোমান গভর্ণরদের আবাসিক ভবন, যেখানে গভর্ণর পীলাত থাকতেন (J.P. Kane, New bible dictionary-347)। একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিৎ যিহুদী মহাযাজক , ধর্মীয় নেতা ও ফরীশীরা পরজাতী পীলাতকে ব্যবহার করেছে তাদের মনের গভীরের চরম হিংসাকে চরিতার্থ করার জন্য কিন্তু তারা পীলাতের আবাসনে প্রবেশ করে। তাই প্রেরিত যোহন তাদের বাহ্যিক শক্তির নিয়ম সম্পর্কে বলেছিলেন, “পরে লোকেরা যীশুকে কায়াফার নিকট হইতে রাজবাটীতে লইয়া গেল; তখন প্রত্যুষকাল; আর তাহারা যেন অশুচি না হয়, কিন্তু নিস্তারপর্বের ভোজ ভোজন করিতে পারে, এই জন্য আপনারা রাজবাটীতে প্রবেশ করিল না” (যোহন ১৮:২৮ পদ) । যিহুদীদের পরস্পরাগত আইন-কানুন শিক্ষা দেয় যে, যে যিহুদী পরজাতীয়দের আবাস-স্থানে প্রবেশ করে সে অশুচি হয়। তাই যীশুর বিচারের সময় তারা পীলাতের প্রধান দপ্তরের বাইরে ছিল পাছে তারা কলূষিত হয়। এই ঘটনায় বোঝা যাই, যিহুদীদের আত্নিকভাবে চরম নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছিল যা যীশুর বিচারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখা যায়।
এখানে পীলাত সম্পর্কে আরও বলা উচিত যে, গব্বথায় বা বিচারাসনে বসে যে, প্রভু যীশুর বিচার করেছিলেন পিতা সমস্ত মানুষের বিচার করার ভার প্রভু যীশুকে ন্যাস্ত করেছেন (যোহন৫:২২ পদ)।
সর্বশেষে বলা যায়, গব্বথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ঈশ্বরের পুত্রের বিচারের অন্যতম স্থান হয়ে।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু তাঁর ক্রুশ বহন করে গলগাথার দিকে রওনা হন যা ছিল সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
এখানে পীলাত সম্পর্কে আরও বলা উচিত যে, গব্বথায় বা বিচারাসনে বসে যে, প্রভু যীশুর বিচার করেছিলেন পিতা সমস্ত মানুষের বিচার করার ভার প্রভু যীশুকে ন্যাস্ত করেছেন (যোহন৫:২২ পদ)।
সর্বশেষে বলা যায়, গব্বথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ঈশ্বরের পুত্রের বিচারের অন্যতম স্থান হয়ে।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু তাঁর ক্রুশ বহন করে গলগাথার দিকে রওনা হন যা ছিল সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
গলগাথা:
অরামীয় শব্দ ‘গলগাথা’ যার অর্থ “মাথার খুলি”। সাধু লূক “কালভেরী” শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা ল্যাটিন থেকে আগত (D.F. Payne, The new bible dictionary, 181) । Payne মনে করেন তিনটি কারণে গলগাথা নামটি দেওয়া হয়েছে :
(১) সেখানে মাতার খুলি পাওয়া যেত (২) বধ্য ভুমি ছিল, অথবা; (৩) মাথার খুলি এখানে জড়ো করে রাখা হতো।
শাস্ত্র থেকে আমরা জানতের পারি যে, গলগাথা যিরুশালেমের বাইরে ছিল, শহরের দরজার কাছ থেকে বেশি দূরে ছিল না। যেখানে মহসড়ক ছিল। গলগাথার কাছেই বাগান ছিল। গলগাথার কাছেই বাগান ছিল যেখানে কবর স্থান ছিল।
গলগাথা স্মরণ করিয়ে দেয়, খ্রীষ্ট যীশুর ক্রুশীয় যন্ত্রনার স্থান হিসেবে। যেখানে খ্রীষ্ট নিজের জীবন প্রায়শ্চিত্ত বলি হিসেবে উৎস্বর্গ করেন। শুধু তাই নয়, এই গলগাথায় তার নম্র্তার চরম আদর্শ দেখিয়েছেন। যেমন সাধু পৌল বলেন, “এবং আকারে প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন, মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত, আজ্ঞাবহ হইলেন” (ফিলিপীয় ২:৮ পদ)।
গলগাথায় রচিত হয়েছে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের স্তম্ভ ও প্রচারের পরিত্রাণের বাণী (১ করিন্থিয় ২:২ পদ)। এখানেই ঈশ্বর তার পুত্রের ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ভালবাসা দেখিয়েছেন (রোমীয় ৫:৮ পদ)।
শাস্ত্র থেকে আমরা জানতের পারি যে, গলগাথা যিরুশালেমের বাইরে ছিল, শহরের দরজার কাছ থেকে বেশি দূরে ছিল না। যেখানে মহসড়ক ছিল। গলগাথার কাছেই বাগান ছিল। গলগাথার কাছেই বাগান ছিল যেখানে কবর স্থান ছিল।
গলগাথা স্মরণ করিয়ে দেয়, খ্রীষ্ট যীশুর ক্রুশীয় যন্ত্রনার স্থান হিসেবে। যেখানে খ্রীষ্ট নিজের জীবন প্রায়শ্চিত্ত বলি হিসেবে উৎস্বর্গ করেন। শুধু তাই নয়, এই গলগাথায় তার নম্র্তার চরম আদর্শ দেখিয়েছেন। যেমন সাধু পৌল বলেন, “এবং আকারে প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন, মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত, আজ্ঞাবহ হইলেন” (ফিলিপীয় ২:৮ পদ)।
গলগাথায় রচিত হয়েছে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের স্তম্ভ ও প্রচারের পরিত্রাণের বাণী (১ করিন্থিয় ২:২ পদ)। এখানেই ঈশ্বর তার পুত্রের ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ভালবাসা দেখিয়েছেন (রোমীয় ৫:৮ পদ)।
উপসংহার:
‘গেৎশিমানী থেকে গলগাথা’ এক বিয়োগ যন্ত্রণা স্থানের নাম। কিন্তু এখান থেকেই ঈশ্বর মানুষের জন্য পরিত্রাণের পথ উন্মোচন করেছেন। গেৎশিমানীর প্রার্থনা যেন আমাদের জীবনে প্রার্থনার আদর্শ হয়, গব্বথায় পীলাতের বিচার আমাদের অনেক কিছু সহ্য করতে শিখায় এবং গলগাথার ক্রুশীয় মৃত্যু আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে ক্রুশ বহনের অনুপ্রেরণা যোগায় ও দু:খভোগের সময় খ্রীষ্টের প্রতি দৃষ্টি রাখতে সাহায্য করে। তাই আসুন আজকে খ্রীষ্টের ঐতিহাসিক ক্রুশীয় মৃত্যু বরনের স্থানগুলোর বাস্তবতা মেনে নিয়ে খ্রীষ্টের মৃত্যু ও ক্রুশীয় বলিদান স্মরণ করতে করতে প্রভু যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি কারণ, “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলে” (ইব্রীয় ১২:২ পদ)। আমেন !
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.

Comments
Post a Comment