প্রভু যীশুর কবর প্রাপ্তির তাৎপর্য
ভূমিকা: প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কথা শুনতে শুনতে হয়ত প্রভু যীশুর কবর প্রাপ্তির তাৎপর্যের কথা ভুলে যাই। কবর বা সমাধি প্রতিটি মানুষের প্রাপ্তির অধিকার রাখে। তাই আমি এই লেখায় প্রভু যীশুর কবর প্রাপ্তির তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা করব ।
প্রথমতঃ কবর প্রাপ্তি প্রভু যীশুর মৃত্যু নিশ্চিত করে : প্রভু যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন । এখন তাঁর সমাধি প্রয়োজন । প্রভু যীশু তাঁর প্রাপ্য ছিল । তাঁর কবর প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রভু মৃত্যু চুড়ান্তভাবে নিশ্চিত করে । প্রভুর বাক্য এই কথা বলে ,
"কিন্তু তাহারা যখন যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল যে, তিনি মরিয়া গিয়াছেন, তখন তাঁহার পা ভাঙ্গিল না। তখন তাঁহারা যীশুর দেহ লইয়া যিহূদীদের কবর দিবার রীতি অনুযায়ী ঐ সুগন্ধি দ্রব্যের সহিত মসীনার কাপড় দিয়া বাঁধিলেন। আর যে স্থানে তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়, সেই স্থানে এক উদ্যান ছিল, সেই উদ্যানের মধ্যে এমন এক নূতন কবর ছিল, যাহার মধ্যে কাহাকেও কখনও রাখা হয় নাই। অতএব ঐ দিন যিহূদীদের আয়োজন দিন বলিয়া, তাঁহারা সেই কবর মধ্যে যীশুকে রাখিলেন, কেননা সেই কবর নিকটেই ছিল।" (যোহন 19:33, 40-42 ROVU)
দ্বিতীয়তঃ ব্যবস্থার দাবী : একজন যিহূদী যখন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত হোন তখন রাত পর্যন্ত মৃত দেহ রাখা যাবে না। প্রভু যীশুর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে ।
ঈশ্বর মোশির মধ্য দিয়ে বলেছিলেন ,
"যদি কোন মনুষ্য প্রাণদণ্ডের যোগ্য পাপ করে, আর তাহার প্রাণদণ্ড হয়, এবং তুমি তাহাকে গাছে টাঙ্গাইয়া দেও, তবে তাহার শব রাত্রিতে গাছের উপরে থাকিতে দিবে না, কিন্তু নিশ্চয় সেই দিনই তাহাকে কবর দিবে; কেননা যে ব্যক্তিকে টাঙ্গান যায়, সে ঈশ্বরের শাপগ্রস্ত; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে ভূমি তোমাকে দিতেছেন, তুমি তোমার সেই ভূমি অশুচি করিবে না।" (দ্বিতীয় বিবরণ 21:22-23)
যিহুদীরা ঈশ্বর নিন্দার দোষ দেখিয়ে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের কাছে প্রভু যীশুর মৃত্যু দন্ড দাবী করে "ক্রুশে দাও , ক্রুশে দাও " বলেছিল।
তাদের দাবী মেনে নিয়েই পীলাত সেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর মৃতদেহ রাত্রি পর্যন্ত রাখার ব্যবস্থা ছিল না। তাই ব্যবস্থানুসারেই প্রভু যীশুর কবর প্রাপ্তি ঘটেছে।
তৃতীয়ত : যিহুদীদের নিয়ম নীতি ( Custom ):
যিহুদী ইতিহাসবিদ যোশিফাস তাঁর পুস্তক War উল্লেখ করেছেন ,
"We consider it a duty to bury even our enemies" অর্থ দাঁড়ায় যিহুদীদের শত্রুদেরও কবর দান করার কথা চিন্তা করত। কিন্তু যারা Criminal তাদের কবর যিরুশালেম নগরের বাইরে দিত।
চতুর্থতঃ: ভাববাণীর পূর্ণতা :
ভাববাদী যিশাইয় প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৮০০ বৎসর আগে প্রভু যীশুর কবরপ্রাপ্তি সম্পর্কে বলেছিলেন ,
"আর লোকে দুষ্টগণের সহিত তাঁহার কবর নিরূপণ করিল, এবং মৃত্যুতে তিনি ধনবানের সঙ্গী হইলেন, যদিও তিনি দৌরাত্ম্য করেন নাই, আর তাঁহার মুখে ছল ছিল না।" (যিশাইয় 53:9 ROVU)
এই ভাববাণীর পূর্ণতা দেখতে পাই এভাবে।
প্রভুর দাস যোহন মার্ক এভাবে বলেছিলেন ,
"পরে সন্ধ্যা হইলে, সেই দিন আয়োজন দিন অর্থাৎ বিশ্রামবারের পূর্বদিন বলিয়া, অরিমাথিয়ার যোষেফ নামক একজন সম্ভ্রান্ত মন্ত্রী আসিলেন, তিনি নিজেও ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেন; তিনি সাহসপূর্বক পিলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন। কিন্তু যীশু যে এত শীঘ্র মরিয়া গিয়াছেন, ইহাতে পীলাত আশ্চর্য জ্ঞান করিলেন, এবং সেই শতপতিকে ডাকাইয়া, তিনি ইহার মধ্যেই মরিয়াছেন কি না, জিজ্ঞাসা করিলেন; পরে শতপতির নিকট হইতে জানিয়া যোষেফকে দেহটি দান করিলেন। যোষেফ একখানি চাদর কিনিয়া তাঁহাকে নামাইয়া ঐ চাদরে জড়াইলেন,এবং শৈলে ক্ষোদিত এক কবরে রাখিলেন; পরে কবরের দ্বারে একখানি পাথর গড়াইয়া দিলেন। (মার্ক 15:42-46 ROVU)
আমার মনে রাখতে হবে প্রভু যীশু জাগতিক ভাবে অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন । তিনি তার জাগতিক Status সম্পর্কে বলেছিলেন ,
"শৃগালদের গর্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষীগণের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।" (লূক 9:58 ROVU)।
কিন্তু প্রভু যীশুর জাগতিক কাজে এই রকম কিছু লোক ছিল যারা প্রভু যীশুকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে ছিলেন যারা নিজের কবর ছেড়ে দিয়েছিলেন ।
পঞ্চমতঃ সুসমাচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: প্রেরিত পৌল বলেছেন ,
"ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও 🛑কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন;
(১ করিন্থীয় 15:3-4 ROVU)
ষষ্ঠতঃ প্রভুর সমাধির মুদ্রাংক : প্রভু যীশু নিজে ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার নিজের মুখে তাঁর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের কথা বলেছিলেন যা যিহূদী ধর্মীয় নেতারা জানত। তাই তারা কবর মুদ্রাংকের কথা দেশাধ্যক্ষ পীলাতকে বলেছিলেন এ ভাবে ,
"পরদিন, অর্থাৎ আয়োজন-দিনের পরদিবস, প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা পীলাতের নিকটে একত্র হইয়া কহিল, মহাশয়, আমাদের মনে পড়িতেছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকিতে বলিয়াছিল, তিন দিনের পরে আমি উঠিব। অতএব তৃতীয় দিবস পর্যন্ত তাহার কবর চৌকি দিতে আজ্ঞা করুন; পাছে তাহার শিষ্যেরা আসিয়া তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া যায়, আর লোকদিগকে বলে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে জীবিত হইয়া উঠিয়াছেন; তাহা হইলে প্রথম ভ্রান্তি অপেক্ষা শেষ ভ্রান্তি আরও মন্দ হইবে। পীলাত তাহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের নিকটে প্রহরি-দল আছে; তোমরা গিয়া যথাসাধ্য রক্ষা কর। তাহাতে তাহারা গিয়া প্রহরি-দলের সহিত সেই পাথরে মুদ্রাঙ্ক দিয়া কবর রক্ষা করিতে লাগিল।" (মথি 27:62-66 ROVU)
আমরা পরের ঘটনা জানি প্রভু যীশু সেই রুদ্ধ কবর থেকে পুনরুত্থান করে বের হয়ে ছিলেন।
সপ্তমতঃ খ্রীষ্টের সমাধি প্রাপ্তির সাথে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা চিহ্নিত হয় :
"অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনত্বে চলি। কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব।" (রোমীয় 6:4-5 ROVU)
প্রয়োগ: আজ থেকে প্রায় দু'হাজার পূর্বের খ্রীষ্টের সমাধির সাথে খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের সমাধি হয়েছে যা আমাদের পুরাতন মানুষকে কবর দেওয়ার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয় । খ্রীষ্টের সাথে United বা একত্রিত হওয়ার যে আনন্দ তা আমরা খ্রীষ্টের সাথে পুনরুত্থিত হয়ে লাভ করি যেন ধার্মিকতার জীবন যাপন করি। আমাদের যে বর্তমান জীবন তা সমাধিপ্রাপ্ত হয়ে নতুন জীবনের কথা বলে যা প্রতিটি বিশ্বাসী ধ্যান পূর্বক চিন্তা করা উচিত । শুধু এই নির্ধারিত সময়ে না কিন্তু প্রতিদিন কারণ আমরা রক্ত দিয়ে কেনা এবং আমরা তাঁরই। সেই জন্য এই নতুন জন্ম প্রাপ্ত জীবনকে অবহেলা না করে বাকী দিনগুলো প্রভুর গৌরবের জন্য ব্যবহার করি।
আমেন ।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment