যীশুর অহেতুক নিরহ গাছকে অভিশাপ দিয়ে মেরে ফেলেন মথি (২১:১৮-২১)।তিনি কি পাপী নয়?
সমস্ত পৃথিবীতে যীশু একমাত্র পাপহীন ও নিষ্পাপ ব্যাক্তি ।প্রথমে অভিযোগের পদ দুটি বাইবেল হতে দেখি এবং বিবেচনা করি যীশু পাপ করেছেন কিনা ।
তাই আসুন উক্ত রেফারেন্স আগে দেখি -
"পরদিন সকালে শহরে ফিরে আসবার সময় যীশুর খিদে পেল। পথের পাশে একটা ডুমুর গাছ দেখে তিনি গাছটার কাছে গেলেন, কিন্তু তাতে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তিনি গাছটাকে বললেন, "আর কখনও তোমার মধ্যে ফল না ধরুক।" আর তখনই ডুমুর গাছটা শুকিয়ে গেল। শিষ্যরা তা দেখে আশ্চর্য হয়ে বললেন, "ডুমুর গাছটা এত তাড়াতাড়ি কেমন করে শুকিয়ে গেল?" জবাবে যীশু তাঁদের বললেন, "আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা সন্দেহ না করে যদি বিশ্বাস কর তবে ডুমুর গাছের উপরে আমি যা করেছি তোমরাও তা করতে পারবে। কেবল তা নয়, কিন্তু যদি এই পাহাড়কে বল, 'উঠে সাগরে গিয়ে পড়,' তবে তাও হবে। তোমরা যদি বিশ্বাস করে প্রার্থনা কর তবে তোমরা যা চাইবে তা-ই পাবে।"(মথি ২১:১৮-২১)
সমালোচকগণ যীশুকে পাপী প্রমাণ করতে যে অভিযোগটি এনেছেন তা একেবারেই কান্ডজ্ঞানহীন একটি অভিযোগ, গাছকে অভিষাপ দিয়ে শুকিয়ে ফেলা কোন আইনেই পাপ বলে প্রতীয়মান হয় না ।
পবিত্র শাস্ত্র বাইবেল অনুযায়ী পাপের সংজ্ঞা হলোঃ
"যে কেহ পাপাচরণ করে, সে বিধি-ব্যবস্থাও লঙ্ঘন করে, আর বিধি -ব্যবস্থা লঙ্ঘনই পাপ "(১ যোহন ৩:৪)
অর্থাত বাইবেলের পুরাতন নিয়মে সদাপ্রভু ঈশ্বর মোশীর মাধ্যমে যে দশ আজ্ঞা দিয়েছেন এই দশ আজ্ঞা যদি কেউ লঙ্ঘন করে তা হলে সে পাপি বলে বিবেচিত হব।
ঈশ্বরের দশটি আজ্ঞা হল:
১. আমার জায়গায় কোন দেবতাকে দাড় করাবে না।
২.প্রার্থনার উদ্দেশ্য কোন মূর্তি তৈরী করবে না।
৩. কোন বাজে উদ্দেশ্য ঈশ্বরের নাম নিবে না।
৪. বিশ্রামবার পবিত্র করবে।
৫. পিতা ও মাতাকে সম্মান করবে।
৬. খুন করো না।
৭. চুরি করো না।
৮. ব্যভিচার করো না।
৯. কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না।
১০. লোভ করো না।
খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এটি পরিস্কার হয়- এই গাছ হত্যা কোন ভাবেই দশ আজ্ঞার লঙ্ঘন না।
এখন প্রশ্ন হল যীশু যে গাছকে অভিষাপ দিয়েছেন এটি কি ৬ নম্বর আদেশের লঙ্ঘন বলা যাবে? মোটেই না কেননা গাছ মানুষ নিজ প্রয়োজনে গাছ কর্তন করছে এবং নতুন করে গাছ উৎপাদন করছে।
যীশু কি ডুমর গাছকে কোন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছেন? না তিনি গাছে কোন কুঠার বা অস্ত্র ব্যবহার করেন নি। তিনি শুধু মুখের বাক্য ব্যবহার করেছেন, এতেই গাছ শুকিয়ে গেছে, এখন ধরুন বর্তমান বিশ্বে কোন ব্যক্তির কথা দ্বারা গাছ মারা গেল আবার তাঁর কথা দ্বারা মৃতরা জীবিত হচ্ছে, কোন আইনে আপনি উক্ত ব্যক্তিকে দোষী করবেন? কোন আইনে তাঁকে দোষী বলে প্রমাণ করতে পারবে না বরং তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার প্রশংসা করবেন।
যীশুর নিকট কোন ব্যক্তি গাছ হত্যার বিচার নিয়ে আসেনি। যীশুকে গাছ হত্যাকারী বলে অভিযোগ করে নি। বরং যীশুর ক্ষমতায় ঈশ্বরের গৌরব করেছেন।
যীশু এই গাছকে অভিষাপ দিয়ে শিষ্যদের প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন যে প্রার্থনার শক্তি এমন হতে পারে । যীশু যেমন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন, শিষ্যরাও প্রকৃত বিশ্বাসে প্রার্থনার শক্তি দ্বারা এমন করতে পারবেন।
সত্যি কি এটা যীশুর চারিত্রিক দোষ হিসেবে ধরা হচ্ছে? যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষার মধ্যে তিনি প্রায়ই গাছের উদাহরণ দিতেন ও "মাঠের ফুলগুলোর কথা ভেবে" দেখতে বললেন (মথি ৬:২৮), তাই গাছের প্রতি তার কোনো খারাপ চিন্তা নেই। কিন্তু এখানে তিনি শিষ্যদেরকে বিশ্বাস সম্বন্ধে একটি শিক্ষা দিতে চাচ্ছিলেন।
অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের উপর মিথ্যা, খুন, ব্যাভিচার , ডাকাতি এমন অভিযোগ তোলা যায়, কিন্তু একটি গাছ শুকানো কি সত্যিই একটি দোষ ধরা যায়?
এমনকি কোরআন ও বাইবেল উভয়ই একমাত্র যীশুখ্রীষ্টকে নিষ্পাপ ঘোষণা দিচ্ছে:
,"যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।"(সূরা আল ইমরান:৪৫)
"সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।"(সূরা মারইয়াম:১৯)
" যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের সহিত ধার্ম্মিকতা-স্বরূপ হই।"(২ করিন্থীয় ৫:২১)
" আমরা এক মহান মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি।কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন,কিন্তু পাপ করেননাই" (ইব্রীয় ৪:১৪-১৫)
অতএব বাইবেলের উক্ত পদের উপর ভিত্তি করে মিথ্যা অভিযোগ করা এবং যীশুকে পাপি প্রমাণ করার প্রচেষ্টা একেবারেই মিথ্যা ও হিংসাত্মক একটি কাজ। কোন ব্যবস্থাতেই গাছ শুকিয়ে যাওয়ার জন্য যীশুকে পাপী বলে বিবেচনা করা যায় না। বরং যীশু একজন মহান মানুষ তাই তাঁর কর্মে প্রমাণিত হয় তিনি সকল অভিযোগের উর্দ্ধে - একমাত্র নিষ্পাপ ও পবিত্র।
“যীশু মানুষদেরকে গালিগালাজ করতেন” মথি (১৬:২৩) এটাকি পাপ নয়?
বিশ্বের কোন লোক, জাতি ও গোষ্ঠী এমনকি বিধি -ব্যাবস্থার কোন শক্তি নেই যে যীশুকে পাপী প্রমাণ করতে পারে । তবে মিথ্যাচার, নোংরামি, হিংসা না বুঝে করতে পারে যা অনেক সমালোচক করছেন
কিন্তু প্রভু যীশু তাঁদের বলছেন -
"পিতা ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছ তাহা জানে না"(লুক ২৩:৩৪ )
আসুন পবিত্র শাস্ত্র বাইবেলের মথি ১৬:২৩ অনুযায়ী যীশু পাপি কিনা তা দেখি?
পুরো অনুচ্ছেদ এমন:
সেই সময় থেকে যীশু জানাতে লাগলেন যে, তাঁকে জেরুজালেমে যেতে হবে এবং বৃদ্ধ নেতাদের, প্রধান যাজকদের ও ধর্মনেতাদের হাতে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। পরে তাঁকে হত্যা করা হবে এবং তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। তখন পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করে বললেন, "প্রভু , এ দূর হোক। আপনার উপর কখনও এমন হবে না।" যীশু ফিরে পিতরকে বললেন, "আমার কাছ থেকে দূর হও, শয়তান। তুমি আমার পথের বাধা। যা ঈশ্বরের তা তুমি ভাবছ না কিন্তু যা মানুষের তা-ই ভাবছ।" (মথি ১৬:২১-২৩)
প্রথমে বুঝতে হবে যীশু কেন এই পৃথিবীতে এসেছেন?
মার্ক ১০:৪৫ অনুযায়ী:
"কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।"(মার্ক ১০:৪৫)
অর্থাত যীশুর আগমন ঈশ্বরের পরিকল্পনার দ্বারা নিবেদিত স্বর্গীয় কাজ, যা ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত। ঈশ্বরের পরিকল্পনা হল আদমের ব্যর্থতা ,শয়তান, পাপ, মৃত্যুকে পরাজিত করে, সকল পাপিদের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উদ্ধার কাজ বাস্তবায়ন করা।
যীশু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিভাবে হবে সেই বিষয় মথি ১৬:২১ পদে শিষ্যদের বলছেন -
" সেই সময় থেকে যীশু জানাতে লাগলেন যে, তাঁকে জেরুজালেমে যেতে হবে এবং বৃদ্ধ নেতাদের, প্রধান যাজকদের ও ধর্মনেতাদের হাতে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। পরে তাঁকে হত্যা করা হবে এবং তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে।"
কিন্তু পিতর যীশুর এই কষ্টের পথে, মুক্তির মূল্য দেওয়ার পথে না যেতে এবং এই নির্যাতন না ভোগ করতে অনুরোধ করেন এবং বলেন ইহা আপনার প্রতি না ঘটুক।
পিতরের অনুরোধ নিঃসন্দেহে ঈশ্বরের স্বর্গীয় উদ্ধারজনক কাজের বাধা, আর ঈশ্বরের পরিকল্পনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলত শয়তান যে বাধা শয়তান এদন বাগান হইতে শুরু করেছেন, যেমন করে আদম ও হবাকে মিথ্যা কথার দ্বারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপে পতিত করেছিল, একইভাবে আজ শয়তান পিতরকে ব্যবহার করছেন।
যীশু তখনই পিতরের ভিতরে শয়তানের প্রভাব দেখে নিজ ক্ষমতায় বলেছিলেন দূর হও শয়তান। এই তিরস্কার ও আদেশ শয়তানের ধ্বংস কে সূচনা করেছিল।
যীশু কেন পিতরকে ধমক দিলেন?
যীশু বলেছেন পিতরের এই কথা যীশুর জন্য বিঘ্নস্বরুপ, হ্যা কেবল ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ শয়তান এই স্বর্গীয় কাজে বাধা দিতে পারে, যীশু নিশ্চিত ছিলেন এই কথা পিতরের নয় কিন্তু শয়তানের, সেই জন্য বলেছেন দূর হও শয়তান।
যে পিতর ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়ে যীশুকে জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র বলেছিলেন কিন্তু সেই পিতর এখন ঈশ্বরের বিষয় চিন্তা করা বাদ দিয়ে, স্বর্গীয় চিন্তা না করে মানবীয় চিন্তায় ঈশ্বরের পরিকল্পনার প্রতিরোধ করছেন যা কেবল শয়তান করতে পারে, যীশুর তিরস্কার পিতরকে নয় কিন্তু শয়তানকে।
এখানে যীশু পরিস্কার পিতরের জন্য দুটি অভিযোগ আনছেন -
১. পিতর যীশুর পথে বিঘ্ন স্বরুপ
২. পিতরের ভাবনা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে
২. পিতরের ভাবনা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে
যীশু ঈশ্বরের পরিকল্পনা ও ঈশ্বরের অধীন সকল কার্যক্রম সমাপ্ত করেছেন, এখানে তিনি ঈশ্বরের বাধ্যতার চিত্র পরিস্কার তুলে ধরেছেন।
এটা কোনো গালিগালাজ না, তিনি তার প্রিয় শিষ্যকে শয়তানের প্রভাব কাটাতে ধমক দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে তিনি পিতরকে বলেছিলেন "আমি তোমাকে বলছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের [পিতরের] উপরেই আমি আমার মন্ডলী গড়ে তুলব" (১৮ পদ)। গ্রিক ও হিব্রু ভাষায় 'শয়তান' এর অর্থ "প্রতিপক্ষ' অর্থাৎ ভালোর প্রতিপক্ষ।
ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ শয়তানকে মোকাবেলা করা পাপ নয় বরং প্রশংসনীয় বিষয়, তাই তো আমরা চার্চে এই গান গাই -
" সকল ধন্যবাদ মহিমা গৌরব তোমার জয় হোক যীশু জয় হোক তোমার ।"
" সকল ধন্যবাদ মহিমা গৌরব তোমার জয় হোক যীশু জয় হোক তোমার ।"
যীশু অহেতুক কিছু অবুঝ প্রাণীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারেন। মার্ক (৫:১০-১৩)-এটাকি পাপ নয়?
এই ঘটনার সময় যীশু একজন অত্যাচারিত ব্যক্তিকে সুস্থ করেছে যাকে অনেক বছর ধরে মন্দ-আত্মা নির্যাতন করছিল:
যীশু তাকে [মন্দ-আত্মাকে] জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার নাম কি?"
সে বলল, "আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।" সে যীশুকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন। সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। ভূতেরা যীশুকে মিনতি করে বলল, "ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।" যীশু অনুমতি দিলে পর সেই ভূতেরা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পাের মধ্যে প্রায় দু'হাজার শূকর ছিল। (মার্ক ৫:৯-১৩)
সে বলল, "আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।" সে যীশুকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন। সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। ভূতেরা যীশুকে মিনতি করে বলল, "ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।" যীশু অনুমতি দিলে পর সেই ভূতেরা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পাের মধ্যে প্রায় দু'হাজার শূকর ছিল। (মার্ক ৫:৯-১৩)
প্রভু যীশু এই পৃথিবীতে এসেছেন শয়তানের সমস্ত বাহিনীকে ধ্বংস করতে। শয়তানের বাহিনী একটি লোকের মধ্যে বাস করছিল, তারা স্বেচ্ছায় শুকরের পালের মধ্যে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছেন এখানে যীশুর কোন দোষ নেই, কেননা যীশু এসেছেন পাপিদের পরিত্রাণ করতে। একজন মানুষকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। আর শুকুরের মালিক যীশুর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন নি, সুতরাং যীশু দোষী নন।
হাদিস অনুযায়ী ঈসা মসীহ পৃথিবীতে আবার ফিরে এসে শূকরকে হত্যা করবে - সেটাও কি পাপ হবে? শূকরের প্রতি হঠাৎ এতো মায়া-মমতা কিসের? আবার এখানে যীশু সেই শূকরদের মেরে ফেলে নি বরং মন্দ-আত্মাকে তাদের কাছে যেতে অনুমতি দিলেন, শুকরগুলো নিজে থেকেই পানিতে ঝাপিয়ে পড়লো তাই যীশু নিজে কোনো প্রাণীকে মেরে ফেলেনি ।
যীশু পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের চোর-ডাকাত বলতেন ৷ (যোহন ১০/৭-৮)সুতরাং তিনি পাপি?
আমার আগে যারা এসেছিল তারা সবাই চোর আর ডাকাত, কিন্তু মেষগুলো তাদের কথা শোনে নি।" (যোহন ১০:৮)
এখানে "নবী" বা "রাসূল" কথার উল্লেখ আছে? এই আয়াতের কন্টেক্সট থেকে আমরা বুঝতে পারি যে "আমার আগে যারা এসেছিল" বলতে ভণ্ড নবী ও স্বার্থপর নেতাদের বোঝায়। ভাববাদী হেজকিলও তাদের কথা বলতেন (হেজকিল ৩৪:২৩)। হেজকিলের পরে যে ৬০০ বছর পার হয়ে গেল সেই সময় বেশ কয়েকজন ভণ্ড 'মসীহ' ও নেতা এসেছে যারা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু শুধু যুদ্ধ ও কষ্ট শুরু করেছে
প্রভু যীশুর উপর যে অভিযোগ আনছেন তা খুবই দুর্বল। বাইবেলের বেশকয়েকটি পদ আছে যা পড়লে খুব সহজে বোঝা যায় যে যীশু খ্রিস্ট আগেকার নবীদের খুব সম্মান করতেন
আসুন পবিত্র শাস্ত্র বাইবেলের পদগুলো দেখি -
" মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদিগ্রন্থ লোপ করিতে আসিয়াছি; আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি"(মথি ৫:১৭)
" তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই?",(মথি ১২:৩)
সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে; তখন তোমরা দেখিবে, অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোব এবং ভাববাদী সকলেই ঈশ্বরের রাজ্যে রহিয়াছেন, আর তোমাদিগকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া হইতেছে।(লূক ১৩:২৮)
যোহন ৮:৩৯ - ৪০ তাহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিল, আমাদের পিতা অব্রাহাম। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা যদি অব্রাহামের সন্তান হইতে, তবে অব্রাহামের কর্ম্ম করিতে। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্য শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইয়াছি যে আমি, আমাকেই বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ; অব্রাহাম এরূপ করেন নাই।
অতএব বাইবেল হতে এটি পরিস্কার বোঝা যায় যে যীশু খ্রিস্ট এখানে প্রকৃত নবীদের “চোর ও ডাকাত” বলেন নি, বরং ভণ্ড নবী ও ভণ্ড ‘মসীহ’দের “চোর ও ডাকাত” বলেছিলেন (যারা নবীদের যুগের পরে এসে নিজেকে নবী বা মসীহ্ বলে মানুষকে ঠকিয়েছে)। তেমনভাবেও নবী ইহিষ্কেল তাদের সমালোচনা করেছিলেন, যারা নিজেকে ইহুদীদের নেতা বা নবী বলে কিন্তু শুধু নিজেকে সেবা করে। যীশু খ্রিস্ট তাদের ‘চোর’ বলেছিলেন কারণ তারা অনেক সময় কৌশলে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন এবং ‘ডাকাত’ বলতেন কারণ ভণ্ড নেতারা হিংস্রতার ব্যবহার ও শিক্ষা দেন।
অতএব যীশু সমালোচনার উর্ধ্বে, তিনি সিদ্ধ ও পবিত্র, বিধি-ব্যবস্থার পূর্ণতাদানকারী, সুতরাং বিধি -ব্যবস্থার সাদ্ধ নেই যীশুকে পাপী বলার । যীশু আমাদের পরিত্রাতা, যীশুতে বিশ্বাস করে নিজ পাপের ক্ষমা গ্রহন করুন, ইহাই স্বর্গীয়র সুসংবাদ।'
"নিরপরাধ মানুষকে অভিশাপ দিতেন ৷ (মথি ২৩/৩৫-৩৬)"
পুরো অনুচ্ছেদ এমন:
ভণ্ড আলেম ও ফরীশীরা, ঘৃ্ণ্য আপনারা! আপনারা নবীদের কবর নতুন করে গাঁথেন এবং ঈশ্বর ভক্ত লোকদের কবর সাজান। আপনারা বলেন, 'আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় বেঁচে থাকতাম তবে নবীদের খুন করবার জন্য তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতাম না।' এতে আপনারা নিজেদের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবীদের যারা খুন করেছে আপনারা তাদেরই বংশধর। তাহলে আপনাদের পূর্বপুরুষেরা যা শুরু করে গেছেন তার বাকী অংশ আপনারা শেষ করুন। "সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা! কেমন করে আপনারা নরকের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবেন? এইজন্যই আমি আপনাদের কাছে নবী, জ্ঞানী লোক এবং আলেমদের পাঠাচ্ছি। আপনারা তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে খুন করবেন ও কয়েকজনকে ক্রুশের উপরে হত্যা করবেন। কয়েকজনকে আপনাদের মজলিস-খানায় চাবুক মারবেন এবং এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে তাড়া করে বেড়াবেন। এইজন্য নির্দোষ হাবিলের খুন থেকে শুরু করে আপনারা যে বরখিয়ের ছেলে জাকারিয়াকে পবিত্র স্থান আর কোরবানগাহের মাঝখানে খুন করেছিলেন, সেই জাকারিয়ার খুন পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নির্দোষ লোক খুন হয়েছে আপনারা সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবেন। আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, এই কালের লোকেরাই সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবে।
জেরুজালেমের জন্য দুঃখ প্রকাশ "জেরুজালেম! হায় জেরুজালেম! তুমি নবীদের খুন করে থাক এবং তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয় তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন বাচ্চাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা রাজী হয় নি। হে জেরুজালেমের লোকেরা, তোমাদের বাড়ী তোমাদের সামনে খালি হয়ে পড়ে থাকবে।" (মথি ২৩:২৯-৩৮)
অভিযোগ হল যে যীশু 'নিরপরাধ মানুষকে অভিশাপ দিতেন'। নিরপরাধ? ঈশ্বরের পাঠানো নবীদের হত্যা করা কি অপরাধ হয় না?
সমালোচকগণ যাদের নিষ্পাপ বলছেন, তারা ঈশ্বরের পবিত্র মন্দিরে প্রার্থনা না করে এটিকে ব্যবসার কেন্দ্র করেছেন যা পাপ, যীশু প্রার্থনার স্থানকে যথাযথ রক্ষা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটি অভিশাপ নয়, সংশোধনের জন্য চেতনা দান।
"তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন? যদি কেহ ঈশ্বরের মন্দির নষ্ট করে, তবে ঈশ্বর তাহাকে নষ্ট করিবেন, কেননা ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তোমরাই"(১ করি ৩:১৬-১৭)
মিথ্যা ওয়াদা ও মিথ্যা ভবিষৎবাণী করতেন ৷ (মথি ১৬/২৭-২৮, ১৯/২৮),
পদটি এই রকম:
"আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাদের কাছে মনুষ্যপুত্রকে রাজা হিসাবে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনমতেই মারা যাবে না।" (মথি ১৬:২৮)
'মনুষ্যপুত্রকে রাজা হিসাবে দেখা দেওয়া' মানে যীশুর দ্বিতীয় আগমন নয় বরং তার পুনরুত্থান, যখন তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে রাজা হিসেবে প্রমানিত হলেন। অবশ্যই দ্বিতীয় আগমনে তার রাজত্ব আরও পরিস্কার ভাবে প্রকাশিত হবে (যেমন মথি ১৯:২৮)।
যে সকল ভবিষ্যদ্বাণী এখনো পূর্ণতা পায় নি তা পূর্ণ করতে যীশু দ্বিতীয়বার আবার আসছেন, ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন।
#৭ মদ পান করে মাতাল হতেন - (লূক ৭:৩৪-৩৫)
অনুচ্ছেদ এমন:
"বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি বা আংগুর-রস খেলেন না বলে আপনারা বলছেন, 'তাকে ভূতে পেয়েছে।' আর মনুষ্যপুত্র এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, 'দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর, খাজনা-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের বন্ধু।' কিন্তু জ্ঞানের অধীনে যারা চলে তাদের জীবনই প্রমাণ করে যে, জ্ঞান খাঁটি। (৩৩-৩৫)
যীশুর শত্রুরা বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে যেমন মিথ্যা নিন্দা করতেন, তেমনও যীশু খ্রীষ্টকেও মিথ্যা নিন্দা করছিলেন, সেটা এখান থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়। এবং আমরা যোগ করতে পারি --- যেমন করে এই সমালোচকগণও যীশুকে মিথ্যা নিন্দা করছে। হ্যাঁ, যীশু তখনকার সংস্কৃতি অনুযায়ী খাবারের সঙ্গে আঙ্গুর রস খেতেন, যার মধ্যে অল্প অ্যালকহল থাকত। কিন্তু মোশীর বিধি ব্যবস্থায় আঙুর রস খাওয়া নিষেধ নয় বরং মাতাল হওয়া নিষেধ, এবং যারা মাতাল হতে চায় তারা সেই ধরণের আঙ্গুর-রস খেতেন না বরং মদ খেতেন। ইঞ্জিলে কোথাও বলা হয়নি যে যীশু মাতাল হয়েছে।
বেশ্যা মেয়েদের তাঁকে স্পর্শ করতে এবং চুম্বন করতে দিতেন৷ (লূক ৭/৩৪-৫০) (যোহন ১০/৭-৮)"
শুধু এটুকু বললে উদ্দেশ্যমূলক ভুল উপস্থাপনা করা হবে। পুরো অনুচ্ছে দিচ্ছি এখানে:
একজন ফরীশী যীশুকে তাঁর সংগে খাবার দাওয়াত করলেন। তখন যীশু তাঁর বাড়ীতে গিয়ে ভোজে যোগ দিলেন। সেই গ্রামে একজন খারাপ স্ত্রীলোক ছিল। সেই ফরীশীর ঘরে যীশু ভোজে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে সে একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর নিয়ে আসল। পরে সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের পানিতে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের পানিতে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল এবং তাঁর পায়ের উপর চুমু দিয়ে সেই আতর ঢেলে দিল। যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি এ দেখে মনে মনে বলতে লাগলেন, "যদি এই লোকটা নবী হত তবে জানতে পারত, কে এবং কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে; স্ত্রীলোকটা তো খারাপ।" যীশু সেই ফরীশীকে বললেন, "শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলবার আছে।"
শিমোন বললেন, "প্রভু , বলুন।" যীশু বললেন, "কোন এক মহাজনের কাছে দু'জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচশো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার। তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু'জনকেই মাফ করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু'জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?শিমোন বললেন, "আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ মাফ করা হল সে-ই।"
যীশু তাঁকে বললেন, "তুমি ঠিক বলেছ।" তারপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, "তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার পানি দাও নি, কিন্তু সে চোখের পানিতে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে। তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে। তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে। যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।" পরে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, "তোমার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।" যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, "এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?" যীশু তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, "তুমি বিশ্বাস এনেছ বলে পরিত্রাণ পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।" (লূক ৭:৩৬-৫০)
শিমোন বললেন, "প্রভু , বলুন।" যীশু বললেন, "কোন এক মহাজনের কাছে দু'জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচশো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার। তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু'জনকেই মাফ করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু'জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?শিমোন বললেন, "আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ মাফ করা হল সে-ই।"
যীশু তাঁকে বললেন, "তুমি ঠিক বলেছ।" তারপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, "তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার পানি দাও নি, কিন্তু সে চোখের পানিতে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে। তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে। তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে। যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।" পরে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, "তোমার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।" যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, "এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?" যীশু তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, "তুমি বিশ্বাস এনেছ বলে পরিত্রাণ পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।" (লূক ৭:৩৬-৫০)
এটা পড়ার পরে কারও মধ্যে বিন্দুমাত্র দয়া থাকলে সে কি যীশুর ব্যবহারের মধ্যে কোনো দোষ ধরতে পারে? গোপনে প্রেমের চুম্বন ও সত্যিকারের অনুতাপের পা-চুম্বন তো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
যীশু এসেছেন পাপীদের জন্য, সুতরাং যারা বেশ্যা ও পাপী তারাও যীশুতে বিশ্বাস করে মন পরিবর্তন করে পরিত্রান পেতে পারে।
"যীশু তাহা শুনিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে; আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি।"
(মার্ক ২:১৭)
(মার্ক ২:১৭)
কারণ যাহা হারাইয়া গিয়াছিল, তাহার অন্বেষণ ও পরিত্রাণ করিতে মনুষ্যপুত্র আসিয়াছেন।(লুক ১৯:১০)
আজ পাপীরা - যীশুতে পরিত্রাণ পেয়ে স্বর্গে প্রবেশ করছে কিন্তু বিধি ব্যবস্থার অহংকারীরা তা দেখতে পাচ্ছে না।
"যীশু ছিলেন পৃথিবীর অশান্তি (মথি ১০/৩৪-৩৫)"
এখানে যীশু বিশ্বাসীদের অত্যাচারের কথা বলছে, যে কউ তার পথে গেলে তার আত্মীয়-স্বজন তাকে ভুল বুঝে কষ্ট দিবে ও বিরোধিতা করবে। এটা কি খারাপ কিছু? তাই যীশু পৃথিবীতে এই অর্থে 'অশান্তি' নিয়ে আসলেন যে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা আসবে।
সমালোচকর যীশুর এই কথার ভিন্ন অর্থ করতে জোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না, তাই আপনাকে বলছি একটি উপায় আছে, তা হল যদি আপনি মুসলিম হন তাহলে তর্কের খাতিরে কিছুদিন নিজেকে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করুন। এবং যীশুকে ক্রুশে হত প্রভু বলুন - তা হলে যীশুর কথার পরিস্কার তাৎপর্য কি তা আপনি বুঝতে পারবেন।
পরিবারের শুধু একজন সদস্য ঈশ্বরের মনোনিত পথে [ যীশুতে - খ্রিস্টান হয়ে ] গেলে অবশ্যই অনেক দূঃখজনক অমিল সৃষ্ট হয় এবং অনান্য সদস্য সেই ব্যক্তির উপর অনেক চাপ এবং জুলুম ও নির্যাতন করে।
খরুগ বা “তলোয়ার” দিয়ে যীশু খ্রিস্ট রূপকভাবে এই অমিল বোঝাচ্ছে। লূক ১২:৫১ থেকে বোঝা যায় যে এই কথার অর্থ শুধু অমিল। একই ভাবে হিব্রু ৪:১২ পদে খরুগ বা ‘তলোয়ার’ শব্দ রূপকভাবে শুধু ‘অমিল’ বোঝাচ্ছে। যীশু খ্রিস্ট যে তলোয়ারের হিংস্রতা উৎসাহিত করছেন তার কোন প্রশ্নই আসে না—যীশু কোনদিন তলোয়ার ব্যবহার করেন নি এবং তার শিষ্যদের হিংস্রতা থেকে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছিলেন:
“ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার আঘাতেই মরে।“ মথি ২৬:৫২।
এমনকি, খ্রীস্টীয় মন্ডলী ও মিশন প্রথম দুই শতাব্দী ধরে তারা সব রকম হিংস্রতার এতো বিপক্ষে ছিলেন যে রোমীয় সমাজ তাদেরকে এইজন্য তুচ্ছ করতেন। তারা অত্যাচারিত হলেও অনেক বৃদ্ধিলাভ করলেন এবং কখনও প্রতিশোধ নেননি বা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন করেন নি।
যীশু নিজেই বললেন -
“আমার রাজ্য এই দুনিয়ার নয়। যদি আমার রাজ্য এই দুনিয়ার হত তবে আমি যাতে ইহুদী নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয়।”(যোহন ১৮:৩৬)
“তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছে, ‘চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো।” (মথি ৫:৩৯-৪০)
মূলকথা হল যদি কোন পরিবারের একজন সদস্য খ্রিস্টান হয়, সেখানে এক নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু হয়। একজনের খ্রিস্টান হওয়ার কারণে পুরো পরিবার সমাজ চ্যুত হয়, এই যাতনার মধ্যে দিয়েই একজন নতুন খ্রিস্টানকে বিশ্বাসে বেড়ে উঠতে হয়। যীশু পরিষ্কার বলেছেন আমার জন্য তোমাদের, নির্যাতিত হতে হবে, দুঃখ ও কষ্ট ভোগ করতে হবে, সুতরাং পৃথিবীতে যীশুর শিষ্যদের শান্তি নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিকে গ্রহন করেই যীশুর শিষ্য হতে হবে।
যীশু আপনাকে পাপের ক্ষমা দেন, ঈশ্বরের সাথে পূর্ণমিলন করেন, ঈশ্বরের জন্য নির্যাতন ভোগ করতে বলেন, অন্যর জন্য কাজ করতে বলেন নিজের জন্য নয়। সুতরাং যারা জাগতিক সুখ ও শান্তি অন্বেষণ করেন তারা যীশুর শিষ্য হতে পারবেন না।
অন্য অনেক পদে তাঁর শান্তি সম্বন্ধে বলা হয়েছে:
যীশু বললেন, "আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; দুনিয়া যেভাবে দেয় আমি সেইভাবে দিই না। তোমাদের মন যেন অস্থির না হয় এবং মনে ভয়ও না থাকে।" (যোহন ১৪:২৭)
আমি তোমাদের এই সব বললাম যেন তোমরা আমার সংগে যুক্ত আছ বলে মনে শান্তি পাও। এই দুনিয়াতে তোমরা কষ্ট ও চাপের মুখে আছ, কিন্তু সাহস হারায়ো না; আমিই দুনিয়াকে জয় করেছি।" (যোহন ১৬:৩৩)
" ধন্য তারা, যারা লোকদের জীবনে শান্তি আনবার জন্য পরিশ্রম করে,
কারণ ঈশ্বর তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন" (মথি ৫:৯)
কারণ ঈশ্বর তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন" (মথি ৫:৯)
"...তিনি জাতিদের কাছে শান্তি ঘোষণা করবেন।" (সখরিয় ৯:১০)
"তোমরা যারা দূরে ছিলে এবং তারা যারা কাছে ছিল, সকলের কাছেই তিনি এসে শান্তির সুসংবাদ প্রচার করেছিলেন।" (ইফিষীয় ২:১৭)
যীশু তার মাকে সাক্ষাৎ কালে অস্বীকার করতেন ৷ (মথি ১২:৪৬-৫০), (মার্ক ৩:৩১-৩৫)"
অনুচ্ছেদ এমন :
যীশু যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন তখন তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোন একজন লোক তাঁকে বলল, "দেখুন, আপনার মা ও ভাইয়েরা আপনার সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।" তখন যীশু তাকে বললেন, "কে আমার মা, আর আমার ভাইয়েরাই বা কারা?" পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের দেখিয়ে বললেন, "এই দেখ, আমার মা ও আমার ভাইয়েরা; কারণ যারা আমার স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করে তারা-ই আমার ভাই, বোন আর মা।"
এখানে বলা হয়নি যে যীশু পরে তার মা ও ভাইদের কাছে যান নি, বরং তিনি সরাসরি যান নি। তিনি তাদের তুচ্ছ করলেন না বরং তার শ্রোতাদের কাছে একটি শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে ঈশ্বরের বাধ্য থাকা সবচেয়ে বড় বিষয়। যীশু তার বাবা-মায়ের "বাধ্য হয়ে রইলেন" (লূক ২:৫১); তিনি পিতা-মাতাকে সম্মান করার বিষয়ে শিক্ষা দিতেন (মথি ১৫:১-৬) এবং মৃত্যুর সময়ে তার মায়ের দেখাশোনার ভার তার প্রিয় শিষ্যকে দিলেন (যোহন ১৯:২৬,২৭)।
খ্রীষ্টের চরিত্রকে সমালোচনা করার এতো প্রচেষ্টার পরে কিছুই প্রমাণ করা গেল না, কারণ কোরআন ও বাইবেলে একমাত্র যীশুকে নিষ্পাপ বলা হয়।অতএব জীবন আপনার সিদ্ধান্তও আপনার - অপপ্রচার নয় বরং যীশুতে সত্য অনুসন্ধান করুন।
আমেন।।
Comments
Post a Comment