ক্রুশের উপর প্রভু যীশুর তৃতীয়ত বানী : মমতার বাণী
শাস্রাংশ : “যীশু মাতাকে দেখিয়া, এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারি, ঐ দেখ, তোমার পুত্র। পরে তিনি সেই শিষ্যকে কহিলেন, ঐ দেখ, তোমার মাতা। তাহাতে সেই দণ্ড অবধি ঐ শিষ্য তাঁহাকে আপন গৃহে লইয়া গেলেন।”
(যোহন ১৯:২৫,২৬)
ভূমিকা: ক্রুশের উপরে প্রভু যীশুর তৃতীয় বাণী মানব জাতির প্রতিটি সন্তানদের জন্য মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও সমাদরের কথা বলে । প্রভু যীশুর এই বাণী শ্রবণে ও বাধ্যতায় অনেক পিতা-মাতার জাগতিক, মানসিক ও আত্মিক সমস্যার সমাধান দিতে পারে । আসুন আমরা সংক্ষেপে এই বাণীটি অধ্যয়ন করি।
পটভূমিকা : আমরা যখন প্রভু যীশুর জীবন ও তাঁর মার জীবন পর্যালোচনা করি, তখন তাদের মধ্যে অত্যন্ত গভীর ও মধুর সম্পর্ক দেখতে পাই। এই সম্পর্ক শুরু হয়েছে প্রভু যীশুর মানব দেহ ধারণের পূর্ব থেকে যখন স্বর্গদূত গাব্রিয়েল কুমারী মরিয়মের কাছে ঈশ্বরের বাণী নিয়ে আগমন করেন (লূক ১:২৬-৩৭) । ঈশ্বরের দূত গাব্রিয়েল আগত ঈশ্বর পুত্র যিনি অনন্তকালীন রাজার কথা প্রভুর মাতা মরিয়মকে বলেছিলেন। সেই বাণী বিশ্বাসে ও বাধ্যতায় গ্রহণ করেছিলেন (লূক ১:৩৮)। পরে আমরা দেখতে পাই , প্রভু যীশুর জন্মের সময় অনেক বাধা-বিপত্তি, শত্রুদের দ্বারা হত্যার হুমকি সহ নানাবিধ কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খ্রীষ্টের জন্মের পূর্বে গালীল থেকে যিহূদা প্রদেশে বাগদত্তা স্বামী যোষেফের সাথে সম্রাট আগস্ত কৈসরের কর দানের আদেশে যিহূদায় আসেন , প্রসবের সময় উপযুক্ত স্হান না পাওয়া, রাজা হেরোদের মৃত্যুর হুমকি, শিশু যীশুকে নিয়ে মিসরে পলায়ন, পুনরায় যিহূদা রাজ্যে থাকার ভয় এবং পরে নাসারতে আগমন। সেখানেই প্রভু যীশুর বেড়ে উঠা যেখানে তিনি তাঁর ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত ছিলেন। এল মধ্যে আমরা দেখতে পাই , মরিয়ম তাঁর স্বামী যোষেফকে হারিয়েছেন( প্রভু যীশুর বার বছরের পরে যোষেফের কথা পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ নেই বিধায় ধরে নেওয়া হয় )। ফলশ্রুতিতে মরিয়ম বিধবা হিসাবে সন্তানদের বড় করেছেন , আদর -মমতায় রেখেছেন , মার দায়িত্ব পালন করাসহ প্রভু যীশুর প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু আজকে তাঁরই জঠরের ফল ক্রুশে । ক্রুশেতে প্রিয় সন্তানের কষ্টদায়ক,অপমানজনক ও দুঃখদায়ক মৃত্যু দেখতে হচ্ছে । মা হিসাবে মরিয়ম কিভাবে সন্তানের কষ্ট মসহ্য করবেন ? তিনি আবার প্রভু যীশুর ক্রুশের কাছেই অবস্থান করতে ছিলেন । প্রভুর মাতা মরিয়মের মত খুব কম মাতাই তার সন্তানদের কষ্ট দেখেছে। ঠিক সেই মূহূর্তে প্রভু যীশু তাঁর মার প্রতি তাঁর ভালবাসা, দায়িত্ব ও সমাদরের বাণী উচ্চারণ করেছেন । বিশিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ Arthur W.Pink এই বাণীর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছেন ।
আসুন তা সংক্ষেপে আলোচনা করি :
প্রথমত: এই বাণীতে ঈশ্বরের দাস শিমিয়নের ভাববাণীর পূর্ণতা পেয়েছে: প্রভু যীশুর জন্মের পরেই তাঁর পালক পিতা যোষেফ ও মাতা মরিয়ম ভাববাদী মোশির ব্যবস্থা অনুসারে তাঁদের শূচি হওয়ার জন্য যিরূশালেমের মন্দিরে আসেন ও বলি উৎসর্গ করেন। সেইসময়ে শিমিয়ন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বর ভক্ত লোক পবিত্র আত্মার আবেশে যিরূশালেম মন্দিরে আসেন ও শিশু যীশুকে কোলে নিয়ে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করেছিলেন (লূক ২:২৯-৩২) । পরে তিনি মরিয়মের কাছে বলেছিলেন ,"আর শিমিয়োন তাঁহাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন, এবং তাঁহার মাতা মরিয়মকে কহিলেন, দেখ, ইনি ইস্রায়েলের মধ্যে অনেকের পতন ও উত্থানের নিমিত্ত, এবং যাহার বিরুদ্ধে কথা বলা যাইবে, এমন চিহ্ন হইবার নিমিত্ত স্থাপিত--আর তোমার নিজের প্রাণও খড়্গে বিদ্ধ হইবে- যেন অনেক হৃদয়ের চিন্তা প্রকাশিত হয়।" ( লূক ২:৩৪,৩৫)। শিমিয়ন প্রভু যীশুর মৃত্যু সম্পর্কে পবিত্র আত্মার আবেশে পরিষ্কার ভাবে যে ভাববাণী বলেছিলেন তা মরিয়ম স্পষ্ট নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি অতি কাছ থেকেই প্রভু যীশুর কষ্টগুলো দেখতে ছিলেন যা ছিল বর্ণনাতীত । কোন মা-ই তাঁর সন্তানের এমন মৃত্যু প্রত্যাশা করে না যা প্রভুর মাতা দেখেছিলেন যা ছিল : অমানবিক,নিষ্ঠুর ও অপমানকর। কিন্তু আজকে প্রভুর মাতার সামনে প্রভু যীশু
ক্রুশারোপিত, যা আবার ভাববাণী দ্বারা নির্ধারিত । শাস্ত্রীয় বচন তো খন্ডন করা সম্ভব না।
দ্বিতীয়তঃ পিতা-মাতাকে সমাদর করার চরম দৃষ্টান্ত: ঈশ্বর-মানব হিসাবে প্রভু যীশু সমস্ত কিছুতে তাঁর প্রকৃত আদর্শের প্রমাণ দিয়েছেন । এই বাণীর মধ্য দিয়ে তিনি মানব জাতির প্রতিটি সন্তানদের কাছে পিতা-মাতার প্রতি তাদের ভালবাসা , শ্রদ্ধা ও অনুগ্রহের পরাকাষ্ঠা হয়ে রইলেন ।ঈশ্বর নিজে পুরাতন নিয়মে মোশির মধ্য দিয়ে দুটি শিলা লিপিতে দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন । পঞ্চম আজ্ঞাতে ঈশ্বর আদেশ দিয়েছেন,"তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিবেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়।" (যাত্রা ২০:১২ )। নতুন নিয়মে প্রেরিত পৌল একই আদেশ পুনরাবৃত্তি করেছেন যা প্রতিটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য প্রযোজ্য। ঈশ্বর যখন পিতা মাতাকে সমাদরের কথা বলেছেন তা বাধ্যতার উপরে যেতে গিয়ে সেবার কথা বলেছেন। সমাদর এই জন্যই কারণ পিতা মাতার ৠণ শোধ করা কোন সন্তানের পক্ষে সম্ভব না। প্রভু যীশু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রমাণ দিয়েছেন । প্রভু যীশু বার বৎসর বয়সে মা-বাবার ( পালক পিতা) সাথে নিস্তার পর্ব পালনের জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলেন । কিন্তু যখন মরিয়ম ও যোষেফ একদিনের পথ ফিরে এলেন তখন প্রভু যীশুকে খুজে না পেয়ে পুনরায় যিরূশালেমে ফিরে এসে মন্দিরে তিনদিন পরে খোঁজ পায় । মরিয়ম ও পালক পিতা যোষেফ বালক যীশুর জন্য অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন । যীশু তাদের স্পষ্ট জানিয়েছিলেন পিতার গৃহে থাকার কথা কিন্তু তা তারা বুঝতে পারে নাই কিন্তু যীশু তাঁর জাগতিক পালক পিতা ও মাতার বশীভূত হয়ে নাসরতে চলে গেলেন । এ সম্পর্কে প্রভুর বাক্য বলে ,"পরে তিনি তাঁহাদের সঙ্গে নামিয়া নাসরতে চলিয়া গেলেন, ও তাহাদের বশীভূত থাকিলেন। আর তাঁহার মাতা সমস্ত কথা আপন হৃদয়ে রাখিলেন।" (লূক ২:৫১)।এর মধ্যে দিয়ে প্রভু যীশু এক পরম আদর্শ স্হাপণ করেছেন যা প্রতিটি সন্তানদের স্মরণ করতে হবে। আজকে আমাদের সমাজে পিতা -মাতার প্রতি চরম অপমান দেখতে পাই যার কারণে সমাজ আজ অভিশপ্ত । একমাত্র খ্রীষ্টীয় অনুতাপ ও পুনরায় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এই অভিশাপ থেকে সমাজ, মন্ডলী ও পরিবার নিস্তার পেতে পারে। আরেকটি বিষয় আমাদের এই বাণীতে গুরুত্ব দিতে হবে তা হল প্রভু যীশু কেন তাঁর মাতাকে "মা " সম্বোধন না করে "নারী" হিসাবে সম্বোধন করেছেন ? এর উত্তর দিতে গিয়ে Pink বলেছেন , “ Looking down the centuries with omniscience foresight and seeing the awful system Mariolatry so soon to be erected , He refrained from using word which would in any wise countenance this idolatry - the idolatery of rendering to Mary the homage which is due alone her Son; the idolatry of worshiping her as " The Mother of GOD."
প্রভু যীশু তাঁর ঐশ্বরিক সর্বজ্ঞানের গুণাবলীর কারণে ভয়ংকর মরিয়ম পূজার কথা জানতেন সে কারণে "মা "শব্দটি ব্যবহার করতে বিরত থেকেছেন । কালের অন্তরালে তার পরিণাম দেখি প্রভু যীশুর মাতা মরিয়মকে ঈশ্বরের মাতার আখ্যা দিয়ে মূর্তি পূজার প্রচলন হয়েছে । ঈশ্বরের যে উপাসনা তাঁকে দেওয়া হয়েছে যা মূর্তিপূজা । যোহন সুসমাচার পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, প্রভু যীশু দুইবার তাঁর মাকে "নারী" হিসাবে সম্ভোধন করেছেন কারণ প্রভু যীশুকে যোহন ঈশ্বর-মানব ও ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে প্রমাণ করেছেন। সেই জন্য তিনি সমস্ত মানবিক সম্পর্কের চেয়ে উর্ধে । অতএব, নারী শব্দ ব্যবহার করে প্রভু যীশু তাঁর মাকে পুর্ণ সম্মান দিয়েছেন।
তাই এই প্রভুর মহৎ বাণী প্রতিটি সন্তানকে মা-বাবাকে সমাদর করার আজ্ঞা ও দৃষ্টান্ত দেয় । আপনি আজকে কিভাবে আপনি আপনার পিতা-মাতাকে সেবা করছেন ? কিভাবে তাদের সমাদর করছেন ? সত্যিই কি তাদের ভালবাসেন ? আপনি যদি আজকে যুবক -যুবতী হয়ে থাকেন বা বয়স্ক থাকুন না কেন মনে রাখতে হবে ঈশ্বরের এই বাক্য, "তোমার জন্মদাতা পিতার কথা শুন, তোমার মাতা বৃদ্ধা হইলে তাঁহাকে তুচ্ছ করিও না।" (হিতোপদেশ ২৩:২২) । আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন তাদের খোঁজ খবর নিন , ভিডিও কল বা অডিও কলে কথা বলেন , নিয়মিত অর্থ সাহায্য দান করুণ ও একটু সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করেদিন যা পালনে আমাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করি , "তোমার পিতা মাতাকে সমাদর করিও।"
তৃতীয়ত: শিষ্য যোহনের প্রভুর দিকে ফিরে আসা : ঈশ্বরের মন্ত্রনায় প্রভু যীশুর আজ ক্রুশীয় দুঃখভোগ ও যাতনা । সে সাথে যোগ হয়েছে প্রভু যীশুকে রেখে তাঁর শিষ্যরা গেৎসিমানী বাগান থেকে পালিয়ে যায় (মথি ২৬:৫৬)। শিষ্য পিতর অস্বীকার প্রভু যীশুকে অস্বীকার করেন। প্রভু যীশু শত্রুদের হাতে ধরা পড়ার পূর্বে শিষ্যদের বলেছিলেন ,"তখন যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই রাত্রিতে তোমরা সকলে আমাতে বিঘ্ন পাইবে; কেননা লেখা আছে, ‘‘আমি পালরক্ষককে আঘাত করিব, তাহাতে পালের মেষেরা ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে।”(মথি ২৬:৩১)। তার মানে তারা প্রভু যীশুর সংগী হওয়ার জন্য লজ্জিত হয়েছিল ।যদিও শিষ্যরা প্রভু যীশুর জন্য এই সময়ে জীবন দানের কথা বলেছিলেন কিন্তু বাস্তবিক সমস্ত শিষ্য পালিয়ে গেলেন। প্রভু যীশুর পিতা ঈশ্বরের সাথে বলিদানের উৎসর্গের কারণে বিচ্ছেদের একটা সময় পার করতে ছিলেন অন্যদিকে প্রিয় শিষ্যদের অনুপস্থিতিতে আরও কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা পরবর্তীতে দেখি , শিষ্য যোহন প্রভুর ক্রুশের কাছে ফিরে এসেছে । (পরবর্তীতে যিহূদা ইস্কারোয়োতীয় ছাড়া সব শিষ্যেরা প্রভুর কাছে ফিরে এসেছিল - মথি ২৮:১৬)। প্রভু যীশু সেই প্রিয় শিষ্যকে আশীর্বাদযুক্ত এক মহান দায়িত্ব দিলেন এবং তিনি তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করে সাথে সাথেই প্রভুর মাকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গেলেন (যোহন ১৯:২৭)। এখানে যে বিষয়টি আমাদের অনেক উৎসাহিত করে তা হলো প্রভু যীশু তাঁর পতিত শিষ্যদের বিনা অনুযোগে গ্রহণ করেছেন। শিষ্য যোহন যখন ফিরে এসেছেন তখন যীশু তাকে দূর করে দেননি বরং ভালবাসায় গ্রহণ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন । আমরা জীবন যুদ্ধে অনেক সময় হেরে যাই , প্রভুকে ত্যাগ করি, তাঁকে অস্বীকার করি ও অনেক সময় নিজের স্বার্থ দেখি । কিন্তু প্রভু যীশুর অনুগ্রহে যেন অনুতাপে ফিরে আসি। প্রভু আমাদের সেই শক্তি ও সামর্থ্য দান করুন যেন তাঁর কাছে ফিরে আসতে পারি । প্রভু এমন করুণাময় যেমন তিনি শিষ্য যোহন অনুযোগ করেননি তদ্রূপ আমাদেরও । তাই আজকে যদি পতিত হয়েও থাকেন প্রভু আপনাকে গ্রহণ করার অপেক্ষায়।
#চতুর্থতঃ প্রভু যীশু তাঁর বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন: যিশাইয় ভাববাদী প্রভু যীশুর দুঃখ-ভোগসহ অনেক বিষয়ের উপর ভাববাণী করেছেন । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খ্রীষ্টের বুদ্ধি মত্তার বিষয়ে : " দেখ, আমার দাস বুদ্ধিমানের কাজ করবে এবং সফল হবে; সে উচ্চ ও উন্নত হবেন; সে খুব মহিমান্বিত হবেন" (যিশাইয় ৫২:১৩) ( Bengali Indian Revised Version (BEN-IRV 2017 : কেরী বাইবেলের পাদটীকা লক্ষ্য করুণ)। প্রভু যীশু তাঁর অবর্তমানে মাকে শিষ্য যোহনের উপর দায়িত্ব দিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন । প্রভু যীশু অন্য কাওকে হয়ত দায়িত্ব দিতে পারতেন কিন্তু তিনি এমন একজনকে দায়িত্ব দিলেন যিনি তাঁকে বুঝেন , ভালবাসেন ও তাঁর মাকে সেইভাবেই ভালবাসবে । প্রভুর মাকে সেবা করা , ভালবাসা ও সমাদর করা এক চরম সুযোগ কিন্তু শিষ্য যোহনই সেই সুযোগ পেলেন । পরবর্তীতে যোহনও অনেক আশীর্বাদ পায় । উদাহরণ স্বরূপ তিনি একটি সুসমাচার, তিনটি পত্র ও খ্রীষ্টভক্তদের ভবিষ্যত প্রত্যাশার গ্রন্থ প্রকাশিত বাক্য তাঁর মধ্য দিয়ে আমরা পাই যা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের অনেক আত্মিক ভাবে অনেক স্বর্গীয় আশীর্বাদ দান করে।
পঞ্চমতঃ এই বাণীর মধ্য দিয়ে জাগতিক দায়িত্বকে অবহেলা করা হয় নাই :আমরা জানি প্রভু যীশু ক্রুশে পাপী মানুষের জন্য প্রায়শ্চিত্বের বলিদান করতে ছিলেন । তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ মুক্তির কার্য করতে ছিলেন যার চাক্ষুষ সাক্ষী অনেকে ছিল । যদিও তিনি ঈশ্বর ছিলেন ও মাংশে মূর্তিমান হয়েছেন তবুও তিনি জাগতিক দায়িত্বকে অবহেলা করেননি। তাই তিনি তাঁর মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত আমরা যত ধরনের আত্মত্যাগের কাজ করি না কেন পরিবারের সদস্যদের তুচ্ছ করা ঠিক নয়। প্রভু যীশু সেই সময়ের ফরীশিদের তাদের পিতামাতার প্রতি অবহেলার চিত্র এভাবে দেখিয়ে ছিলেন , "তিনি তাদেরকে আরও বললেন, ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভালো উপায় আপনাদের জানা আছে। ১০ কারণ মোশি বললেন, “তুমি নিজের বাবাকে ও নিজ মাকে সম্মান করবে,” আর “যে কেউ বাবার কি মায়ের নিন্দা করে, তার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যই হবে।” ১১ কিন্তু তোমরা বলে থাক, মানুষ যদি বাবাকে কি মাকে বলে, ‘আমি যা দিয়ে তোমার উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উত্সর্গ করা হয়েছে,’ ১২ তবে বাবা ও মার জন্য তাকে আর কিছুই করতে হয় না। ১৩ এইভাবে তোমরা নিজেদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের আদেশকে অগ্রাহ্য করছ। আর এই রকম আরও অনেক কাজ করে থাক।" (মার্ক ৭:৯-১৩)।
ধর্মের নামে কখনও মা বাবাকে অবহেলা করতে নেই। মানুষ যতই বড় বড় আসনে বসে থাকুক তাদের মহান দায়িত্ব মা বাবাকে সেবা করা। সারা দুনিয়ার মানুষকে সেবার আদর্শ দেখিয়ে মা-বাবাকে অসমাদর করে কোন ফল দর্শে না বরং থাকে ঈশ্বর ও মানুষের অভিশাপ। অতএব প্রভু যীশু ঈশ্বর পুত্র হয়ে যে আদর্শ রেখে গেছেন সেই আদর্শ যেন অনুসরণ করি।
ষষ্ঠতঃ খ্রীষ্টের এই বাণীর মধ্য দিয়ে বিশ্বজনীন প্রয়োজনের গুরুত্ব দেখান হয়েছে :প্রতিটি মানুষের প্রভু যীশুকে তাঁর মুক্তিদাতা ও প্রভু হিসাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন । প্রভু যীশুর মাতা তার বাইরে ছিলেন না । সেই প্রয়োজনকে অনুভব করেই প্রভুর মাতা মরিয়ম প্রভু যীশুর জন্মের সংবাদ স্বর্গদূত গাব্রিয়েলের কাছে পেয়ে প্রভুর প্রশংসার উদ্দেশ্য গান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ,"তখন মরিয়ম বললেন, "আমার প্রাণ প্রভুর মহিমা কীর্তন করছে, আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্তা ঈশ্বরে আনন্দিত হয়েছে।কারণ তিনি আমার মতো তুচ্ছ দাসীকে মনে করেছেন; আর এখন থেকে পুরুষ পরম্পরায় সবাই আমাকে ধন্যা বলবে।" [লূক ১:৪৬,৪৭] তিনি মুক্তিদাতার মা হিসাবে ধন্যা নারী ছিলেন তবুও মানুষ ছিলেন, পতিত মানুষের দলের একজন সদস্য ছিলেন যার কারণে তাঁরও মুক্তিদাতাকে প্রয়োজন ছিল। প্রভু মাতা তখন ক্রুশের সামনে ছিলেন তখন যীশু বললেন , হে নারী , ঐ দেখ তোমার ছেলে ( যোহন ১৯:২৬)। "ঐ দেখ" শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা আমাদের পতিত মানুষের দৃষ্টি প্রভুর দিকে দিতে সাহায্য করে কারণ ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণের যে পথ রচনা করেছেন তা সবাইকেই বিশ্বাসের বাধ্য তায় আসতে হবে কারণ সুসমাচার গ্রহণে যেমন পরিত্রাণ নিয়ে আসে অন্যদিকে তা অগ্রাহ্য করলে ক্রোধ নিয়ে আসে । সেই জন্য এই ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য প্রভু যীশুর দিকে আজ তাকাতে হবে । আমাদের মনে রাখতে হবে নিজেদের ভাল কাজ দিয়ে , নিয়ম পালন করে , ব্যবস্থা পালন করে আগত ক্রোধ থেকে বাঁচা সম্ভব না কিন্তু সেই মেষশাবকের দিকে তাকাতেই হবে । কেননা যোহন বাপ্তাইজক বলেছিলেন ,"ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।" (যোহন ১:২৯)।ইস্রায়েল জাতির ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখন তারা মরুভূমিতে বিষাক্ত সাপ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল তখন ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন যেন আক্রান্ত ব্যক্তি যেন পিতল দ্বারা নির্মিত সাপের দিকে দৃষ্টি দেয় কেননা তাতেই তারা বাঁচবে । আজকে তদ্রূপ প্রতিটি পাপী মানুষকে যীশুর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যেন অনন্তজীবন লাভ করে । প্রভু যীশু তাই বলেছেন ,"আর মোশি যেমন প্রান্তরে সেই সর্পকে উচ্চে উঠাইয়াছিলেন, সেইরূপে মনুষ্যপুত্রকেও উচ্চীকৃত হইতে হইবে,যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পায়।" (যোহন ৩:১৪,১৫)। প্রভুর দিকে তাকালেই জীবন আছে , ক্ষমা আছে , আছে অনন্তকালীন সুস্থতা । আজকে আপনার দৃষ্টি কোথায় ? নিজস্ব ধার্মিকতার উপর ? আপনার নিজের সফলতার উপর ? তাহলে আজই দৃষ্টি পরিবর্তন করে কালভেরীর সেই ক্রুশের দিকে তাকান যেখানে একজন ধার্মিক ব্যক্তি অধার্মিকদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মত পাপীদের জন্য প্রাণ দিলেন। সেইজন্য প্রভুর মাতাকেও প্রভু যীশু তাঁর দিকে তাকাতে বলেছিলেন , তদ্রূপ আমাদেরও তাকাতে বলছেন । সেইজন্য Pink এ সম্পর্কে যথার্থ বলেছেন "Then look , look unto Christ and be ye saved" অর্থাৎ আসুন প্রভুর দিকে তাকাই ও পরিত্রাণ গ্রহণ করি
( Pink , The Seven , 61)
সপ্তমতঃ এই বাণীর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর-মানব খ্রীষ্টের উত্তমতা প্রকাশ ঘটেছে : যোহন লিখিত সুসমাচার তাঁর পাঠকদের খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বকে ও মানবিকত্বকে প্রকাশ করেছেন । এই বাণীর মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের দুই প্রকৃতি বা স্বভাব প্রকাশিত হয়েছে । প্রকাশিত হয়েছে মানবিক স্নেহ, ভালবাসা ও স্বর্গীয় মহিমা । তিনি ঈশ্বর কিন্তু মাংশে প্রকাশিত হয়েছেন । তাঁর প্রায়শ্চিত্ত বলিদান এই জন্যই সিদ্ধতা ও পূর্ণতা পেয়েছে কারণ তিনি একদিকে মানুষ ও ঈশ্বর । এই ক্ষেত্রে আমরা দেখি , খ্রীষ্টের মানবিক মহানুভবতার চরম পরাকাষ্ঠা ।মৃতপ্রায় যীশু তাঁর মার জন্য রেখে গেলেন এক চুড়ান্ত অধ্যায় । তিনি ঘরে বাইরে অনেক অনেক চিহ্ন কার্য করেছেন , অনেক উত্তম কাজ করেছেন কিন্তু এই কাজ করেছেন যখন তিনি ক্রুশে । তিনি তখনই এই কাজ করলেন যখন খ্রীষ্ট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পাপী মানুষের মুক্তির জন্য প্রায়শ্চিত্ত বলিদান পিতার কাছে উৎসর্গ করতে ছিলেন । তাঁর মূল মিসন সম্পাদনের সময় প্রিয় মাকে ভুলে যাননি ।প্রভু যীশু সত্যই "আশ্চর্য মন্ত্রী" । তিনি যাই করেছেন সবই আশ্চর্য যার তুলনা তিনিই। তিনি ব্যক্তি হিসাবে আশ্চর্য, তাঁর কাজও আশ্চর্য , জীবনও আশ্চর্য ও মৃত্যুও আশ্চর্য ।( pink , The Seven , 62) তাই আসুন, খ্রীষ্ট যে পদাংক রেখে গেছেন তা অনুসরণ করি ও সমাজ ও পরিবার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখি।।
উপসংহার: আজকে মন্ডলীতে অনেক পিতা মাতা রয়ে গেছে। যারা প্রকৃতপক্ষে প্রভু যীশুকে ভালবাসে তারা কখনও তাদের পিতা -মাতাকে অবহেলা করতে পারে না। বলতে পারে না তারা পরিবারের ভার স্বরূপ । যে সব পিতা মাতার সন্তান নেই তাদের ভার মন্ডলীর নেওয়া উচিত। খ্রীষ্টের প্রতি ভালবাসা যদি থাকে মন্ডলীও বিধবাদের সাহায্য করবে। আদি মন্ডলীর এই রকম সমস্যা ছিল কিন্তু প্রেরিতরা সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন পরিচারকদের নিয়োগ দিয়ে । যাকোব তাঁর পত্রে বলেছিলেন ,
অতএব , পতিত বিশ্বে যখন পিতা-মাতা , বিধবাগণ ক্লেশাপন্ন তখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা খ্রীষ্টের আদর্শের অনুগামী হয়ে হতে পারে আলোর বর্তিকা যা দিবে প্রভু কর্তৃক মহা আশীর্বাদ ও সন্তুষ্টি ।
আমেন।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment