ক্রুশের উপর প্রভু যীশুর শেষ বাণী : সপ্তম বাণী লূক ২৩:৪৬
"আর যীশু উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া কহিলেন, পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।"(লূক ২৩:৪৬)
ভূমিকা :ক্রুশে সপ্তম বাণীটি প্রভু যীশুর শেষ বাণী। ক্রুশে প্রভু যীশু সাতবার পবিত্র বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে "সাত" সংখ্যার মাহাত্ম্যের পূর্ণতা দিয়েছেন । কারণ পবিত্র বাইবেলে সাত সংখ্যাটি পূর্ণতার অর্থ বহন করে যেমনঃঈশ্বর ছয়দিনে সৃষ্টি সম্পন্ন করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। এই ক্রুশীয় বাণীর মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু পিতার কাছে তাঁর আত্মা সমর্পণের মধ্য দিয়ে দৈহিক জীবনের সমাপ্তি করেন। সমাপ্তি হয়য়েছে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান, স্বর্গারোহণ ও পুনরায় আগমনের উদ্দেশ্যে । প্রভু যীশু তাঁর প্রথম আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন ,"কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।" (মার্ক ১০:৪৫)। এই বাণী আমাদের সৃষ্টির শুরুতে নিয়ে যায়, সৃষ্টির প্রথমে যখন ঈশ্বর আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন তখন তিনি নিঃশ্বাস দিয়ে আদমকে সজীব করেছিলেন এখানে দেখি শেষ আদম প্রভু যীশুর নিঃশ্বাস নিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে । প্রথম আদমের পাপের ফলাফল ছিল মৃত্যু কিন্তু শেষ আদম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নতুন জীবনের সূচনা করেন।
(Pate-Endouring Word)। আসুন আমরা সংক্ষেপে প্রভু যীশুর এই বাণীর মাহাত্ম্য আলোচনা করি। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রভুর শেষ বাণীটি প্রভু যীশুর শেষ প্রার্থনা যার মধ্য দিয়ে ক্রুশে তাঁর প্রায়শ্চিত্ত বলিদান সমাপ্ত করে পিতা ঈশ্বরের কাছে নিজ আত্মা সমর্পণ করেন। প্রভুর এই বাণী আমাদের জানায় , তিনি উপযুক্ত সময়ে তাঁর নিজ ইচ্ছায় তিনি যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেইভাবেই তাঁর জীবন সমর্পণ করেছেন। তিনি সেই সময়েই তাঁর আত্মা সমর্পণ করেছেন যখন পবিত্র বলিদান সুসম্পন্ন হয়েছে । আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে প্রভু যীশু মৃত্যুর শিকার না কিন্তু মৃত্যু থেকে বিজয়ী। তাঁর মৃত্যু দিয়ে মৃত্যুর হুলকে ধবংশ করেছেন। তাই খ্রীষ্টের ক্রুশ লজ্জার বিষয় না কিন্তু সুসমাচারের মূল বিষয় যা প্রভু যীশুর শেষ বাণীর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ।
বাণীর অর্থ:
খ্রীষ্টীয় লেখক Arthur W. Pink সপ্তম বাণীর সাতটি তাৎপর্য উল্লেখ করেছেন । আসুন তা সংক্ষেপে আলোচনা করি।
প্রথমতঃ এই বাণীর মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু পিতা ঈশ্বরের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্হাপণ করেন।প্রভু যীশু ক্রুশ পাপী মানুষের জন্য শেষ প্রায়শ্চিত্ত্ব বলিদান উৎসর্গ করতে ছিলেন । তিনি তখন তিক্ততার পানপাত্র পান করতে ছিলেন । যখন খ্রীষ্ট এই পবিত্র কাজ করতে ছিলেন তখন পিতার সাথে তাঁর সম্পর্কের অস্হায়ীভাবে বিচ্ছেদ হয়। তখন তিনি বলেছিলেন , ‘‘এলী এলী লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?” (মথি ২৭:৪৬)। প্রকৃতিও তখন সেই সাক্ষ্য বহন করেছে যখন সমস্ত পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে এসেছিল।পিতার সাথে পুত্র যীশুর যে মধুর সম্পর্ক তা প্রভু যীশুর শিক্ষা, জীবন ও কাজ থেকে জানতে পাই । "পিতা" শব্দটি বার বার উচ্চারিত হয়েছে প্রভু যীশুর ওষ্ঠ দেখে। সত্যিকার অর্থে "পিতা" শব্দটি সান্ত্বনার ও আরামের প্রতিশব্দ । আমরা প্রভু যীশুর বার বছর বয়সেই তাঁর মা ও পালক পিতা যোষেফকে বলেছিলেন তাঁর পিতার কাজের কথা (লূক ২:৪৯)। পিতার মহিমা প্রদর্শন ও পিতার ইচ্ছা পালনের জন্যেই ছিল প্রভু যীশুর সম্পূর্ণ জীবন। পিতার সাথে কখনও সম্পর্কের কখনও বিচ্ছেদ ঘটে নাই কিন্তু আমাদের জন্যই ক্ষণকালের বিচ্ছেদ যেন পরিত্রাণ সম্পন্ন হয়।এই বাণীর মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু পিতার কাছে নিজের আত্মা সমর্পণের মধ্য দিয়ে পনরায সম্পর্কের মিলন ঘটান। প্রভু যীশু নিজের পিতাকে আমাদেরও পিতা বলে ডাকার সুযোগ দিয়েছেন যা সত্যিই মহান আশীর্বাদ । প্রতিটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ঈশ্বরের সন্তান যে অধিকার প্রভু তাঁর জীবন দানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করেছেন। পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রের প্রতি প্রেম তাও দেখিয়েছেন পুত্রকে জগতে প্রেরণ করে। প্রভু যীশু তাঁর পিতার প্রেম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর মহাযাজকীয় প্রার্থনায় বলেছেন ,"আমি তাহাদের মধ্যে ও তুমি আমাতে, যেন তাহারা সিদ্ধ হইয়া এক হয়; যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ।"[যোহন ১৭:২৩]. পিতার প্রেম আমাদের প্রতি তাও পবিত্র শাস্ত্র আমাদের পরিষ্কার ভাবে জানায় ,"দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই; আর আমরা তাহাই বটে। এই জন্য জগৎ আমাদিগকে জানে না, কারণ সে তাঁহাকে জানে নাই।"(১ যোহন ৩:১)।
প্রথমতঃ তিনি স্বেচ্ছায় পাপী মানুষের কাছে ও পিতার কাছে সমর্পণ করেন। পরে আমরা দেখতে পাই পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে ভবিষ্যত বাণী অনুসারে তৃতীয় দিনে পুনরুত্থান করেন, চল্লিশ দিন পরে স্বর্গারোহণ করেন, স্বর্গ-মর্ত্যের সবচেয়ে উন্নত স্হানে অধিষ্ঠিত করেন , সর্বোচ্চ উপাধি " প্রভু" দেন যেন সবাই যীশুর কাছে জানু পাতে। প্রকৃতপক্ষে, প্রভু যীশু পুনরায় পূর্বের মহিমায় ফেরত যান । আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তিনি তাঁর রাজকীয় সিংহাসনে বসে জীবিত ও মৃতদের বিচার করবেন।
তাই আমরা যখন সপ্তম বাণী পর্যালোচনা করি , তখন আমরা স্পষ্টভাবে দেখি যে , খ্রীষ্ট প্রভু বার ঘন্টার অধিক সময় পাপী মানুষের কাছে সমর্পিত থেকে পিতা ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন যেন আমরা পরবর্তী পরিত্রাণের মহা আশীর্বাদ যেন দেখতে পাই।
দ্বিতীয়তঃ মানুষের হাত থেকে পুনরায় ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ: প্রভু যীশু গেৎসিমানী বাগান থেকে শুরু করে ক্রুশে দুঃখভোগ ও মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের হাতে নির্মমভাবে ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। প্রভু যীশু পূর্বেই তাঁর শিষ্যদের ভবিষ্যত বাণী বলেছিলেন ,"গালীলে তাঁহাদের একত্র হইবার সময়ে যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, সমপ্রতি মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন;এবং তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে, আর তৃতীয় দিবসে তিনি উঠিবেন। ইহাতে তাঁহারা অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন।"(মথি ১৭:২২,২৩)। প্রভু যীশু এই রকম নির্যাতন সহজেই এড়িয়ে যেতে পারতেন কিন্তু তিনি নিজেকে শত্রুদের হাতে সমর্পণ করছেন যেন তাঁর পবিত্র দেহ স্চ্ছোয় জগতের সবচেয়ে প্রয়োজন পরিত্রাণের জন্য বলিদান উৎসর্গ করতে পারেন ( প্রেরিত ২:২৩ ; ইব্রীয় ১০:৫-১০)।
আমরা এই বাণীর মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই:
তৃতীয়ত : প্রভু যীশু এই বাণীর মধ্য দিয়ে পিতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
প্রভু যীশুর বিভিন্ন ঘটনায় পিতা ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের চিহ্ন দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রান্তরে যখন ৪০ দিন উপবাস করতে ছিলেন । অনেক সময় প্রভু যীশুর শ্রোতারা তাঁর প্রতি অগ্রাহ্যতার মনোভাব দেখাত । কিন্তু তিনি পিতার কাছেই ভার দিতেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন ,--" হে পিতঃ, হে স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের নিকট হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে প্রকাশ করিয়াছ;"(মথি ১১:২৫)।
#চতুর্থতঃ এখানে পরিত্রাণকর্তার অতুলনীয়তার দৃষ্টান্ত দেখতে পাই : প্রভু যীশুর মত কেউ তাঁর নিজের জীবন মানুষের জন্য উৎসর্গ করে নাই। তিনি এক অতুলনীয় জীবন দানের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। প্রভু যীশু নিজের ইচ্ছায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি তাঁর নিজের এই কথার দাবী এভাবে করেছেন ,"পিতা আমাকে এই জন্য প্রেম করেন, কারণ আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি, যেন পুনরায় তাহা গ্রহণ করি।কেহ আমা হইতে তাহা হরণ করে না, বরং আমি আপনা হইতেই তাহা সমর্পণ করি। তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছে; এবং পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে; এই আদেশ আমি আপন পিতা হইতে পাইয়াছি।"(যোহন ১০:১৭,১৮) এ ছাড়াও খ্রীষ্টের মৃত্যু আবশ্যক ছিল যা প্রায়শ্চিত্ত্ব সাধনের বলিদান সম্পন্ন করে। প্রভু যীশুর দুঃখভোগের পরিসমাপ্তি হয়েছে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে । তিনি ক্রুশ থেকে পালানোর জন্য কোন কিছুই করেনি বা তাঁর স্হানে অন্য কেউ মরে তাঁর প্রায়শ্চিত্ত বলিদান সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। কেননা তাঁর দেহ প্রস্তুত করা হয়েছে বলিদানের জন্যই যা জগত পত্তনের পূর্বেই পরিলিক্ষত ছিল ( ইব্রীয় ১০:৫)। এখানে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, পাপের জন্য শাস্তি আছে । খ্রীষ্ট তাঁর জীবন দানের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রজাদের পাপের শাস্তি তাঁর দেহে বহন করেছেন যেন পরিত্রাণ কার্য সম্পাদন হয় । উপরোক্ত কারণ ছাড়াও খ্রীষ্টকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হত যা মানুষের জন্য অবধারিত। কিন্ত খ্রীষ্টের জীবনে উল্টো দেখতে পাই । তিনি নিজের জন্য না কিন্তু পাপীর জন্য মৃত্যু ও বিচারিত হয়েছেন।পবিত্র শাস্ত্র আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়,"আর যেমন মনুষ্যের নিমিত্ত একবার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে,তেমনি খ্রীষ্টও ‘অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার’ নিমিত্ত একবার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন; তিনি দ্বিতীয় বার, বিনা পাপে, তাহাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে।" (ইব্রীয় ৯:২৭,২৮)। সেইজন্য খ্রীষ্টের জীবন অতুলনীয় । এ সম্পর্কে Arthur W Pink বলেছেন , “His life was unique. His death also was unique.In " laying down" His life , death, was differentiated from other deaths." তিনি যেভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন অন্য কেউ করলে হত আত্মহত্যা কিন্তু খ্রীষ্টতে তা তাঁর উত্তমতা ও অতুলনীয় ঘটনা। তিনি জীবনের অধিকর্তা হিসাবে জীবন দিয়েছেন ।( The Seven Saying , page 131)
#পঞ্চমতঃ অনন্তকালীন নিরাপত্তার প্রকৃত স্হান : এই বাণী স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রভু যীশুর প্রকৃত নিরাপদ স্হান পিতা ঈশ্বর যাঁর কাছে শুধু নিজের প্রাণ নয় কিন্তু তাঁর প্রজাদের প্রাণও গচ্ছিত রেখেছেন যেন একটি প্রাণও বিনষ্ট না হয় । প্রভু যীশু পরিচর্যা কাজের সময় বলেছিলেন ,"পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সেই সমস্ত আমারই কাছে আসিবে; এবং যে আমার কাছে আসিবে, তাহাকে আমি কোন মতে বাহিরে ফেলিয়া দিব না।" (যোহন ৬:৩৭)।আমাদের মনে রাখতে হবে প্রভু যীশু যখন ক্রুশে প্রাণ দিচ্ছিলেন তখন তাঁর নিজের জন্য না কিন্তু তাঁর প্রজাদের জন্য । এই বাণীতে দেখি খ্রীষ্ট প্রজাদের প্রতিনিধি হিসাবে পিতার কাছে নিজ প্রাণ সমর্পণ করেন।
শুধু তাই নয়, পিতার স্হানই হচ্ছে অনন্তকালীন নিরাপদের জায়গা যেখানে সবাই নিরাপদ। সেইজন্য প্রভু যীশু বলেছেন ,"আমার পিতা, যিনি তাহাদের আমাকে দিয়াছেন, তিনি সর্বাপেক্ষা মহান ; এবং কেহই পিতার হস্ত হইতে কিছুই কাড়িয়া লইতে পারে না।" (যোহন ১০:২৯)।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নোহ যখন জাহাজে ছিল তখন কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে নাই তদ্রূপ পিতার কাছে যারা আছে খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না, কেড়ে নিতে পারবে না ও ধ্বংস করতে পারবে না।আমরা হয়ত দূর্বল , ভংগুর ও পতিত কিন্তু আমাদের পিতা সবল ও তাঁর প্রজাদের অনন্তজীবন রক্ষা করতে সমর্থ ।আমাদের মনে রাখতে হবে ,” Every spirit that has been born again is eternally safe in the Father's Hand ." ( The Seven Saying , 132)
ষষ্ঠতঃ ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগই আশীর্বাদ :যে কোন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে কষ্টে , ব্যথায়, যন্ত্রণায়, মানুষের তিরস্কারে ও অত্যাচারে আনন্দ পাওয়া সম্ভব। তার প্রমাণ প্রভু যীশু এই বাণীর মধ্য দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জীবনে বর্ণনাতীত দুঃখভোগের সময় একমাত্র আশার স্হল হচ্ছে পিতার সাথে যোগাযোগ সমন্ধ। ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে বিশ্বাস ।( The Seven Saying, 132)। আমরা পবিত্র বাইবেলে অনেক উদাহরণ দেখতে পাই , যেমন দানিয়েলের তিন বন্ধু শদ্রক, মৈশক ও অবেদনগো প্রচন্ড আগুনের মধ্যেও প্রভুর সহভাগিতায় আনন্দ পেয়েছে। ঈশ্বরের নিরাপত্তার সহভাগিতার আনন্দ পেয়েছিল দানিয়েল যখন সিংহের গহ্বরে ছিল। প্রেরিত পৌল ও তাঁর সহকারী সীলও ঈশ্বরের সহভাগিতায় আনন্দ করেছিল যখন ফিলিপীয় শহরের জেলে ছিল। খ্রীষ্ট যীশু মাথায় কাঁটার মুকুট পড়েও ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েও পিতা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কে বিশ্রাম পেয়েছেন।সাধু দায়ুদও ঈশ্বরের সাথে তাঁর যোগাযোগ সম্পর্কের কারণে বলতে পেরেছিলেন ,"যখন আমি মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকা দিয়া গমন করিব, তখনও অমঙ্গলের ভয় করিব না, কেননা তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ, তোমার পাঁচনী ও তোমার যষ্টি আমাকে সান্ত্বনা করে।"(গীত ২৩:৪)। খ্রীষ্টভক্তদের জন্য তাই বাণী সমস্ত সময়ের জন্য এক আশার বাণী। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু মৃত্যুকে ধ্বংস করে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের দিয়েছেন সাহস ও বল যেন মৃত্যুকে অভিশাপ নয় কিন্তু ঈশ্বরের উপস্থিতিতে যেন যেতে পারেন। তাই আমাদের উচিত হবে , ঈশ্বরের কাছে নিজের জীবন সমর্পণ করা যেন তাঁর সহভাগিতায় আনন্দ ও অনন্তজীবনে প্রবেশ করতে পারি।।অন্যদিকে, অবিশ্বাসীদের চরম দুর্ভোগ কারণ তাদের খ্রীষ্ট ছাড়া পিতা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ সম্পর্ক সম্ভব নয়। তাদের মৃত্যুতে কোন সান্ত্বনা নেই কারণ তারা ঈশ্বর পরিকল্পিত প্রভু যীশুর রক্তের মধ্য দিয়ে যে পথে হাঁটে নি তাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ঘোরতর দন্ড।প্রভুর বাক্য তাদের সম্পর্কে বলে,"জীবন্ত ঈশ্বরের হস্তে পতিত হওয়া ভয়ানক বিষয়।"(ইব্রীয় ১০:৩১)। এ ব্যাপারে ইব্রীয় পুস্তক আমাদের আরও জ্ঞাত করে,"ভাবিয়া দেখ, যে ব্যক্তি ঈশ্বরের পুত্রকে পদতলে দলিত করিয়াছে, এবং নিয়মের যে রক্ত দ্বারা সে পবিত্রীকৃত হইয়াছিল, তাহা সামান্য জ্ঞান করিয়াছে, এবং অনুগ্রহের আত্মার অপমান করিয়াছে, সে কত অধিক নিশ্চয় ঘোরতর দণ্ডের যোগ্য না হইবে!" (ইব্রীয় ১০:২৯)। অতএব, প্রভু যীশুর মধ্য দিয়ে যারা পিতার কাছে নিজের জীবন সমর্পণ করেছে তারা অনন্ত বিশ্রামে কিন্তু যারা অগ্রাহ্য করে তারা অনন্ত বিচারের মধ্যে পড়বে।
সপ্তমতঃ এই বাণীতে আত্মার বাসস্থানের অপরূপ চিত্র ফুটে উঠেছে: মৃত্যুর আগে মানুষ তার দেহ নিয়ে অনেক কিছুই চিন্তা করে। যেমন : কোথায় কবর দিবে? অনেকে funeral insurence করে রাখে কারণ অনেক দেশে কবর দেওয়া অনেক ব্যয়বহুল । তারা চায় না তাদের মৃত্যুর পরে পরিবারের সদস্য/সদসরা যেন বিপাকে না পড়ে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত আমাদের মূল্যবান আত্মার বাসস্থান কোথায় হবে। খ্রীষ্ট তাঁর এই মহামূল্যবান বাণীর মধ্যে দিয়ে আমাদের জানিয়েছেন আত্মার বাসস্থান পিতার কাছে।তাই ত তিনি বলেছেন , " পিতা, তোমার কাছে আমার আত্মা সমর্পণ করি ।
প্রয়োগ : খ্রীষ্টের পথ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুঃখভোগ ও যন্ত্রণা দ্বারা। বিশ্বাসীদের মনে রাখতে হবে যন্ত্রণা ও কষ্ট এড়ানো কখনও সম্ভব না। মন্ডলীর ইতিহাস আমাদের জ্ঞাত করে খ্রীষ্টের শিষ্যরা ও বিশ্বাসীরা কিভাবে অন্যায়ভাবে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছেন এবং অনেকে তাঁদের খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাসের জন্য জীবন দান করেছেন। তাঁরা জানত তাদের এই অস্হায়ী জগতে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ হবার নয় । প্রভুর বাক্য এই সম্পর্কে বলে,"বিশ্বাসানুরূপে ইঁহারা সকলে মরিলেন; ইঁহারা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন। কারণ যাঁহারা এইরূপ কথা বলেন, তাঁহারা যে নিজ দেশের অন্বেষণ করিতেছেন, ইহাই স্পষ্ট ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখন তাঁহারা আরও উত্তম দেশের, অর্থাৎ স্বর্গীয় দেশের, আকাঙ্ক্ষা করিতেছেন। এই জন্য ঈশ্বর তাঁহাদের ঈশ্বর বলিয়া আখ্যাত হইতে, তাঁহাদের বিষয়ে লজ্জিত নহেন; কারণ তিনি তাঁহাদের নিমিত্ত এক নগর প্রস্তুত করিয়াছেন।"(ইব্রীয় ১১:১৩-১৪ )তাই আসুন আমাদের বিশ্বাসের জীবনে দুঃখভোগের মূহূর্তে প্রভুর দিকে দৃষ্টি রাখি যেন উপযুক্ত সময়ে তাঁর মহিমার অংশীদার হতে পারি।
উপসংহার : প্রভু যীশুর উচ্চারিত শেষ বাণী খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আশীর্বাদের বাণী। প্রভুর যীশুর এই বাণী , খ্রীষ্টভক্তদের জীবন ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করে চলতে সাহায্য করে। এই পৃথিবীর খ্রীষ্টীয় জীবন যেমন ক্ষণস্থায়ী ও দুঃখ কষ্টে পূর্ণ কিন্তু প্রভুর প্রতি সমর্পণ করা জীবনে শান্তি, বিজয় ও পিতার সাথে সম্পর্কে আনন্দ পাওয়া যায় । প্রভু যীশুর শিষ্য পিতর আমাদের দুঃখভোগ সম্পর্কে বলেছেন ,
"কিন্তু যদিও ধার্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর, তবু তোমরা ধন্য। আর তোমরা উহাদের ভয়ে ভীত হইও না, এবং উদ্বিগ্ন হইও না, বরং হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান।"(১ পিতর ৩:১৪) প্রেরিত পিতর আমাদের আরও বলেছেন ,"প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য জ্ঞান করিও না; বরং যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমাণে আনন্দ কর, যেন তাঁহার প্রতাপের প্রকাশকালে উল্লাস সহকারে আনন্দ করিতে পার। তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছেন।(১ পিতর ৪:১২-১৪) ।সেইজন্য আজকে যদি আপনার জীবনে দুঃখভোগ , কষ্ট ও অকথিত ব্যথা থেকে থাকে তাহলে এই বাণী আপনার জন্য উৎসাহজনক, সান্ত্বনা ও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে যেন আমাদের এই প্রবাস জীবন সুসম্পন্ন হয় । ঈশ্বর খ্রীষ্টের এই বাণীর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুণ ।।
উপসংহার: প্রতিটি মানুষের আশা থাকে নিজের বাড়ীতেই ফিরবে। প্রভু যীশুর নিজের ঘর পিতার বাড়ী যেখানে তিনি ফিরে গেছেন এই বাণীর মধ্য দিয়ে । প্রতিটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের একই প্রত্যাশা থাকা প্রয়োজন ঈশ্বরের সাথে বসবাস করা যা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের প্রকৃত ঘর। এই জগতের চেয়ে খ্রীষ্টের সাথে থাকা অনেক উত্তম । মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমরা সেই অনন্ত বিশ্রামে প্রবেশ করি। সেইজন্য মৃত্যুকে ঘৃণা নয় বরং ভালবাসতে হবে যা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের অর্থবোধক প্রত্যাশা। এ সম্পর্কে Spurgeon বলেছেন ,” It is greatly wise to be familiar with our resting place.It was a healthy thing for me to stand at the grave’s brink recently, and to walk amid that forest of memorial of the dead, for this is where I, too, must go. Ye living men, come and view the ground where you must shortly lie; and , as it must be so, let you are not believers welcome it.”
( Spurgeon ,Christ's Word, 120)
“আমাদের বিশ্রাম স্হানের সাথে পরিচিত হওয়া অত্যন্ত বিচক্ষণতার কাজ। এটা ইদানীং আমার জন্য সুস্বাস্থ্যকর ছিল যখন আমি কবরের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম এবং মৃতদের স্মৃতির মধ্য দিয়ে বন দিয়ে হেঁটেছি কেননা এখানেই আমাকে অবশ্যই যেতে হবে। যারা আজকে জীবিত আছেন , এসে দেখে যান যেখানে কিছুক্ষণ পরে আপনাকে শুইয়ে রাখা হবে, অবশ্যই রাখা হবে, যারা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী আসুন তাকে স্বাগতম জানাই”।
অন্যদিকে যারা প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করেনি তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে একই লেখক বলেছেন ,
“কিন্তু মৃত্যু তাদের কখনও আনন্দ হবে না যারা এখনও প্রভু যীশুকে তাদের মুক্তিদাতা হিসাবে গ্রহণ করেনি। সমস্ত প্রকৃতিই অবশ্যই ঘৃণা করবে যে ঈশ্বরকে ঘৃণা করে। নিশ্চয় সমস্ত কিছুই সেই ব্যক্তিকে যে ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করেনি। তাই আজকে যদি আপনার অবস্থা এমনই হয় তাহলে আজ প্রভুকে খুঁজুন, খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করুণ ও অনন্তজীবনের অধিকারী হোন। যদি আপনি তাই করেন তাহলে ঈশ্বরের যেমন ইচ্ছা জীবিত থাকতে বা মরতে ভয় পাবেন না”।
অতএব , প্রভু যীশু যেমন তাঁর আত্মাকে সবচেয়ে নিশ্চয়তার জায়গা পিতা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেছিলেন তদ্রূপ চলুন আমরাও সেই একই স্হানে আমাদের আত্মা সমর্পণ করি যেন অনন্ত বিশ্রামে থাকতে পারি। মৃত্যুর পূর্বে পরিচারক স্তিফান একই কাজ করেছিলেন । তাই আজকে কি ভাবে আমাদের আত্মা সমর্পণের কাজ করব ? শুধু বিশ্বাসে গ্রহণ করুণ প্রভু যীশু আপনার জন্য পাপের জন্য কালভেরীতে রক্ত দানের মধ্য দিয়ে জীবন দান করেছেন যেন আপনি পুনরায় নতুন জীবন লাভের মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মাকে পেতে পারেন। আত্মা প্রাপ্ত নতুন জীবনের পথ চলা মৃত্যুর পরে নয় কিন্তু এখনই তা শুরু হয় । তাই আজ দেরী না করে আসুন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রদত্ত এক মাত্র পথ প্রভু যীশুর রক্তের নিয়মের দ্বারা স্হাপিত নির্দেশিত পথে ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে গমন করি যেন আমাদের আত্মা সমর্পণের মধ্য দিয়ে প্রকৃত বিশ্রাম লাভ করি।
আমেন।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
Comments
Post a Comment