প্রতিজ্ঞার দেশে যাত্রা কি শুরু করেছেন?

মোশি দর্শনের মাধ্যমে পিতা ঈশ্বরের থেকে আজ্ঞা পেয়ে মিশরে যাওয়ার আগে বললেন🗣️ "মোশি উত্তরে বললেন, “কিন্তু দেখুন, তারা আমাকে বিশ্বাস করবে না ও আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে না, কারণ তারা বলবে, ‘সদাপ্রভু তোমাকে দেখা দেন নি’।” (যাত্রাপুস্তক 4:1)
সদাপ্রভু মোশিকে উৎসাহ দিলেন তিনটি আশ্চর্য কাজের মাধ্যমে যার বিবরণ আমরা দেখতে পাই যাত্রাপুস্তকে চার অধ্যায়ের তিন থেকে নয় পদের মধ্যে। মোশি সেই সকল চিহ্ন কাজের দ্বারা ও ঈশ্বরের তত্ত্বাবোধনের কথা ইস্রায়েল জাতির প্রতি ব্যক্ত করলেন এবং তা শুনে ইস্রায়েলীরা বিশ্বাস করলো। মিশরের রাজা ফৌরণের কঠিন হৃদয় কে দশ আঘাত দ্বারা চূর্ণ করে, সাগর কে দুভাগে বিভক্ত করে তার মধ্যে দিয়ে অতিআশ্চর্য্য ভাবে এই ইস্রায়েল জাতিকে মিশরের 430 বছরের দাসত্বের থেকে মুক্ত করলেন সদাপ্রভু। শুধু তাই নয় সদাপ্রভু তাদের আশ্চর্য্য ভাবে চালনা করতে লাগলেন তাদের প্রতিজ্ঞার দেশে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতো তারা, তখনই ইস্রায়েল জাতি সব কিছু মুহূর্তের মধ্যে ভুলে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কাজ করতো, সদাপ্রভু কে দোষারোপ করতো। তাঁর সমস্ত আশীর্বাদের কথা ভুলে মুহূর্তের মধ্যেই তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতো ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আচরণ করতো। ফলস্বরূপ তারা 13 দিনের পথ 40 বছর প্রান্তরে কাটিয়েছিলো। তবুও এই 40 বছর পিতা ঈশ্বর তাদের নানান ভাবে রক্ষা ছিলেন, আশীর্বাদ করেছিলেন ও চালনা করেছিলেন। এই সমস্ত ঘটনার মধ্যে প্রধান যে বিষয় লক্ষ্যনীয় তা হলো "ঈশ্বরের রব কে তুচ্ছ জ্ঞান করা ও স্বেচ্ছাচারীতা"
যার ফলস্বরূপ ছয় লাখ ইস্রায়েলী পুরুষের মধ্যে মাত্র দুই জন যিহোশূয়ো ও কালেব প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করতে পেরেছিল। এমনকি মোশি যাকে সদাপ্রভু ঈশ্বরস্বরূপ করে পাঠিয়েছিলেন ইসরায়েল জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য ও প্রতিজ্ঞার দেশে নিয়ে যাবার জন্য । সেই মোশি পর্যন্ত একটি ভুলের জন্য প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করতে পারেনি।
📖সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এই অবারীম পর্বতে ওঠ, আর যে দেশ আমি ইস্রায়েল সন্তানকে দিয়েছি, তা দেখ। দেখার পর তোমার ভাই হারোণের মত তুমিও তোমার লোকেদের সঙ্গে জড়ো হবে। এটা ঘটবে কারণ তোমরা দুজনে সীন মরুপ্রান্তে আমার আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলে। সেখানে, যখন জল শিলার মধ্যে থেকে প্রবাহিত হয়েছে, তুমি রাগে পুরো মণ্ডলীর চোখে আমাকে পবিত্র রূপে মান্য করতে ব্যর্থ হয়েছ।” এ সীন প্রান্তরের কাদেসে অবস্থিত মরীবার জল। (গণনা 27:12‭-‬14) I
এই জগৎ সংসারের মধ্যে থেকে সদাপ্রভু আমাদের তাঁর সেই প্রতিজ্ঞার দেশে যাবার/প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণ দিয়েছেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানবজাতির জন্য এই আহ্বান। যদিও কিছু সেই আহ্বান গ্রহণ করে যাত্রা শুরু করেছে, কিন্তু অনেকের কাছে তা ধর্ম, রূপকথার গল্প বলে মনে হয়েছে। ঈশ্বরের পরিকল্পনা কে যদি আমরা ধর্মের চোখ দিয়ে দেখি, তাহলে কোনদিনও আমরা সত্য জানতে পারবো না, যে যার ধর্মের বেড়াজালের মধ্যে আটকে থাকবে। আর সেটা হচ্ছে শয়তান/দিয়াবলের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় আজ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে।
আমরা যারা ঈশ্বরের পরিকল্পনা/আহ্বান কে গ্রহণ করে আমাদের যাত্রা শুরু করেছি, আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রেখে এই যাত্রায় চলতে হবে, যেন আমরা যিহোশূয়ো ও কালেবের ন্যায় যাত্রা সম্পন্ন করে প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করতে পারি। যেন কোনো ভাবেই আমরা ভ্রান্ত না হয়ে যাই।
মনে করুন খুব বড় বিপদের মাঝে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনি ছুটে চলেছেন শেষ ট্রেন বা প্লেন টি ধরতেই হবে আপনাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু হায়! মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনি মিস্ করলেন আপনার শেষ রক্ষার ট্রেন বা প্লেন টি। তখন আর কোনো কিছুই করার থাকবে না শুধু আফসোস ছাড়া। ঠিক তেমনই আমরা যাত্রা শুরু করে যখন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছাব তখন যদি দেখি আমার ট্রেন মিস্ হয়ে গিয়েছে, তাহলে কি লাভ আফসোস ছাড়া যার পরিণাম স্বরূপ আমাকে অনন্তকালের নিমিত্ত প্রতিজ্ঞার দেশের বাইরে থাকতে হবে। সুতরাং আমরা যেন এখন থেকেই সচেতন হই।
🤔আমাদের কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন হতে হবে?
প্রধান লক্ষ্যণীয় বিষয় :-
১. আমরা কি পিতা ঈশ্বর কে পবিত্ররূপে মান্য করছি?
২. আমরা আমাদের জীবন ও কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করছি না তো? প্রভু যীশু বলেছেন, "অতএব তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও তেমনি সিদ্ধ হও" (মথি 5:48)
প্রভু যীশু পরিচর্যার কাজ শুরু করার সময় তাঁর মুখ থেকে নির্গত প্রথম শব্দ ছিল "মন ফিরাও" এই আহ্বান দিয়ে। এছাড়াও আমরা দেখি যে তিঁনি স্বর্গরাজ্যের প্রজা নির্ণয় এই বিষয়ে পাহাড়ী উপদেশের মাধ্যমে তিঁনি তাঁর সুসমাচার পরিচর্যার কাজ শুরু করেন, যেন আমরা কোনো ভাবেই সেই প্রতিজ্ঞার দেশ স্বর্গরাজ্য থেকে দূরে থেকে না যাই। মথি তাঁর সুসমাচারের পাঁচ থেকে সাত অধ্যায়ে তা খুব সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। প্রভু যীশু তাঁর সাড়ে তিন বছরের সুসমাচার পরিচর্যার জীবন কালে শুধু মাত্র এই বিষয়টির উপরে জোর দিয়েছেন যেন কোনো ভাবেই তাঁর কোনো সন্তান ভ্রান্ত হয়ে প্রতিজ্ঞার দেশ থেকে বিচ্ছেদ হয়ে না যায়। যেন সঠিকভাবে আমরা সেই উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারি। প্রভু যীশু বার বার আমাদের সচেতন করে রেখেছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসী সেই ইস্রায়েল জাতির ন্যায় তাদের হৃদয় কে কঠিন করে ঈশ্বরের বাক্য কে তুচ্ছজ্ঞান করছে। জীবন ও কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে পবিত্র ঈশ্বরের পবিত্রতা কে হেয় জ্ঞান করছে। নিজেদের ইচ্ছাকে আজ আমরা বেশি প্রাধান্য দিই। শুধু তাই নয় আমরা আমাদের ইচ্ছা, কামনাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা ও আজ্ঞা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রভু যীশুর শিষ্যরা যখন একান্তে প্রভুর কাছে শেষ সময়ের বিষয় জানতে আগ্রহী হয়, তখন প্রভু যীশু একটি বিষয়ের উপরে জোর দিয়ে তাঁর শিষ্যদের সচেতন করেছিলেন।
তোমরা ভ্রান্ত হইও না, কেহ যেন তোমাদের না ভুলায়
এছাড়াও প্রভু যীশু একবার বলেছিলেন
আহুত অনেকেই কিন্তু অল্পই মনোনীত 
ছয় লাখ পুরুষের মধ্যে মাত্র দুজন প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করেছিল। আজ আমাদের প্রস্তুতি কি প্রকার তা ভালো করে যাঁচাই করে দেখে নেওয়ার সময় এখনই। আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো স্কুল বা কলেজে ভর্তির সময় ভালো করে দেখে নিই সেই স্কুল বা কলেজ খুব ভালো কি না। আমরা বাজার থেকে সবজি ফল মূল কেনার সময় ভালো করে বেচে দেখে নিই। খারাপ, পঁচা ও ভালো সব একসাথে নিয়ে চলে আসিনা। আমরা আমাদের বাড়ি ঘর জমি কেনার সময় খুব ভালো করে যাঁচাই করে দেখে নিই। সুতরাং আমরা যখন প্রতিজ্ঞার দেশে যাবো, যেখানে আমাদের চিরন্তন আবাস, সে বিষয়ে আমাদের কতই না সচেতন হতে হবে। আমরা আজ সচেতন বেশি সেই সব বিষয়ে যা কিছু এই পৃথিবীর। যা আমার কোনো কাজেই লাগবে না। যা আমাকে ছেড়ে যেতে হবে। আর যেখানে আমার চিরন্তন আবাস, সে বিষয়ে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। সেই বিষয় কে আমরা তুচ্ছজ্ঞান করছি। অবজ্ঞা করছি প্রতি নিয়ত। কারণ এই সংসারের ঈশ্বর দিয়াবল সে তার নানান ছল চাতুরীর মধ্যে আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে। সে কখনোই চায়না আমরা প্রতিজ্ঞার দেশে প্রবেশ করি।
প্রভু যীশু বলেছেন, " দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়"।
তিঁনি আজও বলে চলেছেন:-
"মন ফিরাও ও প্রথম কর্ম করো, তুমি মরণ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকবে/থাকো, তোমার যা আছে তা আমার আগমন পর্যন্ত দৃঢ় রূপে ধারণ করে রাখো, ভ্রান্ত শিক্ষা থেকে মন ফিরাও, তুমি মৃত, জাগ্রত হও, তুমি না শীতল না তপ্ত, তুমি কদুষ্ণ তাই তোমাকে আমি নিজের মুখ থেকে বমি করে ফেলে দেব।"
সময় থাকতে থাকতে আমরা নিজেদের সঠিক ভাবে ঈশ্বরের বাক্য থেকে যাঁচাই করে দেখি আমি কি সঠিক ভাবে আমার যাত্রা পথে চলছি?
আমি আমার কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে পিতা ঈশ্বর কে পবিত্র রূপে মান্য করতে ব্যর্থ হচ্ছি না তো ?
তাঁর বাক্যকে তুচ্ছজ্ঞান, অবহেলা করছি না তো ?
মহান ঈশ্বর পিতা তাঁর এই বাক্যের দ্বারা আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করুন।
আমেন।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
আপনার অনুদান পাঠানোর জন্য ক্লিক করুন নিচে দেওয়া Donate অপশানে 

Comments

Popular posts from this blog

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া

Popular Posts

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া