ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক

কিন্তু তোমাদের অপরাধগুলিই তোমাদের পৃথক করেছে তোমাদের ঈশ্বর থেকে; তোমাদের পাপগুলি তোমাদের কাছ থেকে তাঁর শ্রীমুখকে লুকিয়েছে, তাই তিনি শোনেন না। (যিশাইয় 59:2)
আমার সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক কেমন?
প্রভু যীশু বলেছেন, ... “কেউ যদি আমার অনুসারী হয়, তাকে নিজেকে অস্বীকার করতে হবে এবং প্রতিদিন তার ক্রুশ বহন করে আমার অনুসরণ করতে হবে।" (লূক 9:23)
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্ম, আলাপ, আলোচনা ও ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় আমার সাথে আমার ঈশ্বরের সম্পর্ক কেমন।
বাপ্তিস্ম গ্রহণের মাধ্যমে আমরা যীশু কে উদ্ধারকর্তা, ত্রাণকর্তা বলে স্বীকার করে, যীশু খ্রীষ্টের অনুগামী হওয়ার সিদ্ধান্ত যেদিন থেকে আমরা নিয়েছি, তারপরে কি সত্যি আমরা যীশুর পশ্চাৎ চলছি?
না কি আমরা খ্রীষ্টান প্রমাণপত্র নিয়ে এই জগতে চলছি ?

যিশাইয় ভাববাদী যদিও তার উক্ত বাক্য (59:2) ইস্রায়েল জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন। কিন্তু আজও হয়তো আমাদেরও ঠিক ঐ একই অবস্থা।
প্রভু যীশু বলেছেন, "কেউ যদি আমার অনুসারী হয়, তাকে নিজেকে অস্বীকার করতে হবে এবং প্রতিদিন তার ক্রুশ বহন করে আমার অনুসরণ করতে হবে।"
আমরা যেদিন থেকে প্রভু যীশু কে গ্রহণের মাধ্যমে এই জগতে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেদিন থেকেই আমরা অনন্ত জীবনের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু করে দিয়েছি।
জগতের মানুষ যারা,
তারা তাদের জীবন যাত্রা জাগতিক ভোগ বিলাস, ধন দৌলত, গাড়ী বাড়ি সম্পত্তি ইত্যাদির পিছনে শুরু করে এবং তার মধ্যেই কখন শেষ হয়ে যায় তা সে নিজেই জানতে পারেনা বা বুঝতে পারেনা, কারণ দিয়াবল তাদের চোখ কান কে বন্ধ করে রেখেছে।

যীশুর পশ্চাৎ চলার সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি আমার সাথে একজন জাগতিক মানুষের কোনো পার্থক্যই না দেখা যায় তার মানে আমি এখনো যীশুর অনুগামী হতে পারিনি। আমি যদি নিজের জন্য বাস করছি, তার মানে আমি যীশু কে অনুসরণ করছি না।
নিজেকে অস্বীকার :-
আমাদের অবশ্যই নিজের আশা, ইচ্ছা ও আকাঙ্খা কে দমন করে যীশুর ইচ্ছা কে প্রথম স্থান দিতে হবে। তাঁর বাধ্য হয়ে চলতে হবে। আমাকে সর্বদা সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে যে বিষয় গুলি পিতা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে গ্রহণ যোগ্য এবং যার মধ্যে দিয়ে তাঁর নাম উচ্চিকৃত ও প্রশংসিত হয়।

একমাত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টই নিখুঁত ভাবে এই কাজটি করেছিলেন। তাই তিঁনি তাঁর অনুগামীদেরও এই বিষয়ে সচেষ্ট হতে বলেছেন।
যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জীবন কে নিজের কাছে এতটুকু প্রিয় জ্ঞান করে, তাহলে সে নিজেকে খুশি করার জন্য, নিজের ইচ্ছা সম্পন্ন করতে এবং নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির চেষ্টায় থাকবে।
আমরা যতক্ষন না নিজেকে অস্বীকার করতে সচেষ্ট হবো, ততক্ষণ আমরা তাঁর অনুগামী হতে পারবো না। যতক্ষন না আমার মধ্যে থেকে "আমি" এই মনোভাব দূর না হয়, মানুষের প্রশংসা, অনুগ্রহ, গৌরব, নাম যশ, সন্মান এই সকল বিষয় পাবার আকাঙ্খা, আগ্রহ দূর না হয়। ততক্ষণ আমি নিজেকে অস্বীকার করতে পারবো না। আর নিজেকে অস্বীকার করতে না পারলে, আমি আপন ক্রুশ কখনই বহন করতে পারবো না। এই ক্রুশই তখন আমার কাছে বিঘ্নের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ক্রুশ হলো জ্বালা, যন্ত্রনা, যাতনা, দুঃখভোগ, কষ্টভোগ, মৃত্যু এবং সম্পূর্ণ ত্যাগের চিহ্ন। আমাদের অবশ্যই যীশুর জন্য এই সকল ত্যাগের কথা স্মরণে রাখতে হবে। ক্রুশ বহন করা অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে আপনার সম্পূর্ণ জীবন প্রদান বোঝায়। ক্রুশ মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার একটি উপায় ছিল। আমাদের একজন শিষ্য হিসাবে প্রতিদিন মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে হবে, দুঃখ কষ্টভোগ কে স্বাগত জানাতে হবে। এইসব কোনো কিছুই আমাদের যেন ভীত সন্ত্রস্ত করতে না পারে তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রভু যীশু বলেছেন, "যে কেহ আমার জন্য জীবন হারায় সে তা রক্ষা করবে।"
খ্রীষ্টকে অনুসরণ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হলো তাঁকে আমাদের ধন হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
প্রভু যীশু বলেছিলেন, "কারণ যেখানে তোমার ধন, সেখানে তোমার মনও থাকিবে"। সুতরাং যখন আমি খ্রীষ্টকে আমার ধন হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হবো, তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমার মনও প্রভূতে সদা নিবিষ্ট থাকবে।
কিন্তু আমরা এই জগতের মানুষের ন্যায় সর্বদা পৃথিবীতে আমাদের জন্য ধন সঞ্চয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আর এই ব্যস্ততার মধ্যেই আমরা এই পৃথিবীর মধ্যে হারিয়ে যাই, অবশেষে একদিন সব কিছু শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ আমি সারাটা জীবন ধরে যে ধন সম্পত্তি সঞ্চয় করলাম তা এই পৃথিবীতেই ক্ষয়নিয় বস্তুর সাথে রয়ে গেল। আর যেখানে আমাদের ধন সঞ্চয়ের জন্য প্রভু আমাদের বলে গেছেন, সেখানে আমাদের কিছুই নেই। যেখানে আমার চিরস্থায়ী আবাস, সেখানকার জন্য আমি কখনোই ভেবে দেখলাম না এবং কিছু করার চেষ্টাও করলাম না। বেশ শুধুমাত্র খ্রীষ্টান প্রমান পত্র নিয়ে এই জগতের জীবন যাপন করে গেলাম। মৃত্যুর পর আমার সমাধি তে RIP বা স্বর্গীয় অমুক লিখে রেখেদিল। সারাটা জীবন স্বর্গীয় স্থানের জন্য কিছুই করলাম না। আর মৃত্যুর পরে নামের আগে স্বর্গীয় লেখা হয়ে গেল।
সাধুপৌল ও পিতর বারবার আমাদের চেতনা দিয়েছেন, "আমরা যেন এই পৃথিবীর বিষয় ভাবিত না হয়ে, স্বর্গীয় বিষয়ে ভাবিত হই, যেখানে আমাদের চিরস্থায়ী আবাস। আমরা এখানে যাযাবরের ন্যায় কিছু সময়ের জন্য আছি, আমাদের নাগরিকত্ব এখানকার নয়"। কিন্তু সে সব কথায় আমরা গুরুত্ব দিইনা। তার তাৎপর্য বুঝতে চাইনা।

সত্যি বলতে আমরা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে পরিচয় দিই। কিন্তু খ্রীষ্টের সাথে আমাদের কোনো গমনাগমন নেই। খ্রীষ্টের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক নেই। যার ফলে আমরা খ্রীষ্টের বাক্যের উপর নির্ভর ও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারিনা।
হনোক ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করতেন। আর এই গমনাগমনের মধ্যেই তিঁনি একদিন লোকান্তরে নীত হলেন। নোহ ঈশ্বরের সাথে গমনাগমন করতেন। ঈশ্বরের অজ্ঞানুযায়ী তিঁনি জাহাজে প্রবেশ করলেন। পিতা ঈশ্বর এই পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিলেন, কিন্তু নোহকে উচ্চস্থানে উঠলেন। ঠিক তেমনই যখন আমরা খ্রীষ্টের জাহাজে প্রবেশ করি বা খ্রীষ্টকে আমাদের জীবনে প্রবেশাধিকার দিই তখন খ্রীষ্টও আমাদের এই পৃথিবীর সকল ক্ষয়নীয় বস্তু হইতে ধীরে ধীরে উচ্চস্থানে উঠাবেন। আর আমরা সেই স্বর্গীয় উচ্চস্থানে খ্রীষ্টের সাথে চির মহিমাময় স্থানে প্রবেশ করবো ঈশ্বরের গৌরবের জন্য।

প্রথমতঃ আমরা যেন সর্বদা মনে রাখি যে, খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে এসে আমাদের পাপের জন্য নিজেকে ক্রুশের উপরে বলিদান করলেন যেন আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়ে অনন্তকালীন জীবনে প্রবেশ করতে পারি।
দ্বিতীয়তঃ না কি তিঁনি এই জন্য ক্রুশের উপর তাঁর বহুমূল্য রক্ত ঝড়ালেন যেন আমরা এই পৃথিবীতে খুব আরামের রোগ মুক্ত জীবন, সুখ সাচ্ছন্দ, ভোগ বিলাস, চাকরী, গাড়ি বাড়ি, সম্পত্তি, বিদেশ যাবার ভিশা পাই।
দুঃখের বিষয় আজ আমাদের অর্থাৎ অধিকাংশ বিশ্বাসীর মধ্যে এই দ্বিতীয় বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা আজ সকলে খুব ব্যস্ত এই কাজেই।
এবং অনন্তকালীন জীবনে প্রবেশ যেন আমাদের কাছে রূপকথার গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা যারা প্রথম বিষয়টির উপর বেশি প্রাধান্য দিয়ে এই পৃথিবীতে বাস করে প্রভুতে নিদ্রিত হয়েছি এবং বাস করছি ও প্রতিদিন নিজের ক্রুশ বহন করছি তাদের জন্য একটি সুখবর। আপনি প্রভুর গুপ্ত আগমনের সাক্ষী হতে চলেছেন মধ্য আকাশে।
আর যারা দ্বিতীয় বিষয়টির উপরে প্রাধান্য দিয়ে এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করছেন, পৃথিবীস্থ বিষয়ে চিন্তিত। প্রভু তাদের এই পৃথিবীতেই রেখে দেবেন তাঁর মহাক্লেশ কালের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। যে ভয়ানক ক্রোধের দিনের অপেক্ষায় এই পৃথিবী ধ্বংসের প্রতীক্ষায় আছে। আর যারা উক্ত অবস্থায় কবরস্থ হয়েছে, তারা ভয়ানক বিচারের জন্য আবার পুনরুত্থিত হবে।
সাধুপৌল তাঁর পত্র দ্বারা জানাচ্ছেন:-
"তোমাদের যেমন হওয়া উচিত, চেতনায় ফিরে এসো এবং পাপ করা থেকে ক্ষান্ত হও; কারণ এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের ঈশ্বর-জ্ঞান নেই। তোমাদের লজ্জা দেওয়ার জন্য আমি একথা বলছি। তাই, আমার প্রিয় ভাইবোনেরা, সুস্থির থাকো। কোনো কিছুই তোমাদের বিচলিত না করুক। প্রভুর কাজে তোমরা সর্বদা নিজেদের সম্পূর্ণরূপে উত্সর্গ করো, কারণ তোমরা জেনো যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হবে না।"
(1 করিন্থীয় 15:34‭, ‬58)

স্বর্গীয় মহান পিতা ঈশ্বর তাঁর এই বাক্যের দ্বারা আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করুন। 

আমেন।।
আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে Click করুন.
আপনার অনুদান পাঠানোর জন্য ক্লিক করুন নিচে দেওয়া Donate অপশানে 

Comments

  1. প্রভু আমায় ব্যবহার কর।

    ReplyDelete
  2. প্রভু আমায় ব্যবহার কর।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া

Popular Posts

একজন ভাল মা অথবা বাবা হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কিভাবে আমি নিশ্চিত জানতে পারি, মরে গেলে পর আমি স্বর্গে যাব?

প্রশ্ন: মৃত্যুর পর আপনি কোথায় যাবেন?

আমি কিভাবে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারি?

করোনা ভাইরাসের জন্য শারীরিক ও আত্মিক প্রস্তুতি

প্রশ্ন: যীশু খ্রীষ্ট কে?

পর্ণোছবি (অশ্লীল ছবি) সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে? পর্ণোছবি দেখা কী পাপ?

প্রশ্ন: বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য?

মৃত্যুর পরে কি কোন জীবন আছে?

খ্রীষ্টীয় পরিত্রাণের উদ্দেশ্য: প্রভু যীশুর প্রতিমূর্তির মত হওয়া