মন্ডলীর ফল ও বৃদ্ধি
"যে সুসমাচার তোমাদের কাছে উপস্থিত হইয়াছে, যেমন সমস্ত জগতেও ফলবান্ ও বর্দ্ধিষ্ণু হইতেছে; তোমাদের মধ্যেও সেই দিন অবধি হইতেছে, যে দিনে তোমরা তাহা শুনিয়াছিলে, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ সত্যরূপে জ্ঞাত হইয়াছিলে"। [কলসীয়। 1:6]
60 থেকে 62 খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর বন্দীরত অবস্থায় সাধুপৌল উক্ত পত্র লিখেছিলেন। ঐ সময় তিঁনি রোমীয় সরকার দ্বারা গৃহবন্দি ছিলেন। ঠিক জেলের মতো বন্দী নয়। জেলখানা থেকে এই গৃহবন্দী একটু আলাদা ছিল। এটা ছোট একটা ভাড়া বাড়ী, যা সব সময় রোমীয় সেনাদের নজরদারির মধ্যে থাকতো। এই গৃহবন্দী থাকা কালীন পৌল কিছুটা সুবিধাও পেয়েছিলেন। তিঁনি লোকেদের সাথে দেখা করতে পারতেন। সে সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে যেমন ম্যাসিডোনিয়া, গ্রীস, এশিয়া মাইনর এবং গালাতীয় থেকে তাঁর অনেক শিষ্যরা প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। এই দুই বছর বন্দী থাকা অবস্থায় তিঁনি চারটে চিঠি লিখেছিলেন। তিনটে চিঠি তিঁনি ইফীশীয়, ফিলীপিয় ও কলিসীয় মণ্ডলীকে লিখেছিলেন এবং চর্তুর্থ চিঠিটি তিঁনি ফিলীমন নামক এক ব্যক্তি কে লিখেছিলেন। এই পত্রগুলিকে আমরা বন্দি অবস্থায় লেখা পত্র বা The Prison Epistles বলে থাকি।
যাইহোক কলসীয় মন্ডলীর প্রতি পত্রে তিঁনি প্রথম অধ্যায়ের ছয় পদে উক্ত কথা লিখেছেন। আমরা দেখি যে পৌল পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ ও আনন্দ সহকারে মণ্ডলীকে উক্ত কথা লিখেছিলেন। কারণ যে সুসমাচারের বীজ মণ্ডলীতে বপন করা হয়েছিল তা ফলবান এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো খ্রীষ্টের বিশ্বস্ত পরিচারক ইপাফ্রার পরিচালনায়।
আজ দুঃখের বিষয় এই যে তা সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে গেছে আমাদের বেশিরভাগ মণ্ডলী গুলিতে। আজ থেকে অনেক কয়েক বছর আগে মণ্ডলী যে অবস্থায় ছিল, আজও সেই অবস্থায় আছে কিংবা তা আরও হ্রাস পেয়েছে। মণ্ডলীতে কোনো ফল নেই বৃদ্ধি তো দূরের কথা। আস্তে আস্তে প্রচুর মণ্ডলী বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যদিও কিছু বিশ্বস্ত গৃহস্থ মণ্ডলী, স্বাধীন মণ্ডলী এবং কিছু মন্ডলী ও প্রচারক ও ভক্ত দাস দাসীর মাধ্যমে ঈশ্বরের রাজ্যের কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহান পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক। সেই তুলনায় আজ main line church বা মণ্ডলীতে কোনো ফল বা বৃদ্ধি প্রায় নেই বললেই চলে। প্রাণহীন দেহের ন্যায় অবস্থা। ঈশ্বরের অনুগ্রহ সত্যরূপে জ্ঞাত হবার পরেও তা প্রকাশ পাচ্ছে না বরং চাপা পড়ে আছে।
হ্যাঁ, তবে আছে বিভিন্ন দলগত সমস্যা, মতবিরোধ, দলাদলি, প্রেমের অভাব, বাইবেলের শিক্ষার অভাব, আত্মিক জ্ঞান ও বুদ্ধির অভাব।
যার ফলস্বরূপ পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারা, সৎকাজে ফলবান, প্রভু যীশুকে আরও ভালো করে জানতে পারা যেন সব কিছুতে প্রভুকে সন্তুষ্ট করবার জন্য তাঁর যোগ্য হয়ে চলতে পারা আজ মন্ডলীর মধ্যে নেই। তাই আজ মণ্ডলী ফলবান ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে পারছে না। অধর্মের বৃদ্ধি হয়ে চলেছে। প্রভুকে সন্তুষ্ট নয়, মন্ডলীর পদাধিকার কে সন্তুষ্ট রাখাই যেন মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রভু যীশু বলেছেন, "আর অধর্মের বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হয়ে যাবে।"
মণ্ডলী আজ খ্রীষ্টের দেহের নামে দিয়াবলের দ্বারা চালিত হচ্ছে। যদিও এই সত্য শুনতে খুব খারাপ লাগে কিন্তু এটাই বাস্তবিক। শয়তানের একটাই কাজ মণ্ডলীকে ধ্বংস করা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেমন সেনাদের একটাই লক্ষ্য থাকে শত্রু পক্ষের ঘাঁটি/বাংকার কে ধ্বংস করা যেন খুব সহজেই জয়লাভ করা যায়। ঠিক তেমনিই শয়তান/লুসিফারের একটাই লক্ষ্য মণ্ডলী।
পবিত্র আত্মার চালনা মণ্ডলীতে না থাকার মানেই মণ্ডলী দিয়াবল দ্বারা চালিত হচ্ছে। সুতরাং সেখানে কোনো মতেই মণ্ডলী ফলবান ও সুসমাচারের বৃদ্ধির বদলে জাগতিকতার ফলে বৃদ্ধিলাভ হবে।
মণ্ডলী আজ তার মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে।
"অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর;" মথি। 28:19
আজ মণ্ডলী নিজেই বৃদ্ধি ও ফলবান হতে পারছেনা তো কিভাবে উক্ত দ্বায়িত্ব পালন করবে? শয়তান কখনোই চাইবে না মণ্ডলী সজাগ হয়ে উক্ত দায়িত্ব পালন করে মণ্ডলী বৃদ্ধি পেয়ে ফলবান হোক।
প্রভু যীশু বলেছেন:-
"কিন্তু এটা জেনে রাখো, চোর কোন মুহূর্তে আসবে, তা যদি বাড়ির মালিক জানত, তবে জেগে থাকত, নিজের বাড়িতে সিঁধ কাটতে দিত না। এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে দিন তোমরা মনে করবে তিনি আসবেন না, সেই দিনই মনুষ্যপুত্র আসবেন।"
মথি 24:43-44
আপনি/মণ্ডলী কি প্রস্তুত???

Comments
Post a Comment