সাবধান
পরে তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না। (লুক। 12:15)
তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “সজাগ থেকো! সমস্ত রকম লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা কোরো; সম্পদের প্রাচুর্যের উপরে মানুষের জীবনের মানদণ্ড নির্ভর করে না।”
(লূক 12:15)
তারপর যীশু লোকদের বললেন, “সাবধান! সব রকম লোভের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন, কারণ অনেক বিষয়-সম্পত্তি থাকাই মানুষের জীবনের সবচেয়ে দরকারী বিষয় নয়।”
(লূক 12:15)
তারপর তিনি লোকদের বললেন, সাবধান হও, সর্বপ্রকার লোভ সম্বরণ কর। কারণ সম্পদের প্রাচুর্যের ওপরে মানুষের জীবনের অস্তিত্ব নিভর্র করে না।
(সাধু লুক লিখিত সুসমাচার 12:15)
পরে তিনি তাদের বললেন, “সাবধান, সমস্ত লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ মানুষের ধন সম্পত্তি অধিক হলেও তা তার জীবন হয় না।”
(লুক 12:15)
উক্ত আলাদা আলাদা ট্রান্সলেশন থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা প্রভু যীশু আমাদের বলেছেন সে বিষয়ে আজ আমরা একটু মনোযোগ দেব। কেননা এই পৃথিবীতে একমাত্র তাঁর বাক্যের মধ্যে থেকেই আমরা জীবনের আশীর্বাদ পাই। এখানে আমরা দেখতে পাই নিম্নলিখিত বাক্য গুলো:-
জীবন হয়না,
জীবনের মানদণ্ড নির্ভর করেনা,
জীবনের সবচেয়ে দরকারি বিষয় নয়,
জীবনের অস্তিত্ব নির্ভর করেনা।
উক্ত বাক্য গুলির মধ্যে দিয়ে প্রভু যীশু আমাদের সাবধান করেছেন যেন আমরা সর্বপ্রকার লোভ, সম্পদের প্রাচুর্য ও ধন সম্পত্তি বিষয় এই সকল থেকে সাবধান থাকি। কারণ তাতে জীবন নেই।
প্রভু যীশু শুধু মাত্র সাবধান করেই নীরব হয়ে যাননি। তিঁনি এই বিষয়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আরও গভীর ভাবে উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করেন। যা লেখা রয়েছে লুক 12:16-21 পদে। এখানে একজন ধনবান যে তার প্রচুর শস্য রাখার জন্য বড় গোলাঘর নির্মাণ বিষয়ে। আপনি একবার উক্ত অংশটি বাইবেল থেকে দেখে নিতে পারেন।
এরপরও প্রভু যীশু আবার তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে আরও গভীর ভাবে বোঝানোর জন্য তিঁনি আরও কিছু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং সর্বোপরি তিঁনি স্বর্গে ধন সঞ্চয়ের উপরে জোর দেন। যার বিবরণ আমরা মথি লিখিত সুসমাচার আবার লুক লিখিত সুসমাচারেও দেখতে পাই। (মথি 6:19-34 এবং লুক 12:22-34) এই বাক্যগুলো একবার পড়ে নেবেন দয়া করে এখানে প্রচুর আশীর্বাদ রয়েছে।
প্রভু যীশু জানতেন যে মানুষ এই বিষয়ে শয়তানের জালে পড়বে ও এই সুন্দর জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলবে। সেজন্য তিঁনি খুব সুন্দর ভাবে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এই বিষয়ের উপরে আলোকপাত করেছিলেন।
আমাদের শত্রু শয়তান বা দিয়াবল, যে সব সময় গর্জনকারী সিংহের মতো আমাদের গ্রাস করার জন্য খোঁজ করছে, সে খুব ভালো করেই জানে এই মানব জাতির জীবনের মানদণ্ড বা জীবনের সবচেয়ে দরকারী বিষয়ে বা মানুষের জীবনের অস্তিত্ব কে যদি ধণ সম্পদের প্রাচুর্যের উপরে স্থির করে দিতে পারি, তাহলে এই মানবজাতির জীবন শুধু মাত্র সেই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ছুটবে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে থেকেও দূরে সরে যাবে। কত ভয়ানক পরিকল্পনা দিয়াবলের একবার চিন্তা করে দেখুন। ঈশ্বরের কাছে থেকেও দূরে সরে যাবে আমাদের অন্তঃকরণ। আর শয়তান তার এই পরিকল্পনায় স্বার্থক হয়ে গেছে।
দিয়াবল কখনোই চায়না যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আপনাকে উত্তম দাস বলে সম্মোধন করুক। সে চাইবে ঈশ্বর যেন আমাদের বলেন, "হে মূর্খ বা নির্বোধ, আজ রাতেই তোমার প্রাণ তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে, তাহলে তুমি যে এত কিছুর আয়োজন করলে, জমা করলে, এইগুলি এখন কার হবে"????
প্রভু যীশু খুব ভালো ভাবে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন "তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করতে পারো না"। (লুক 16:13)
প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন:-"তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ধনীদের পক্ষে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা খুবই কঠিন।” আবার তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যে একজন ধনীর প্রবেশ করার থেকে বরং ছুঁচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সহজ।(মথি 19:23-24)
মনে রাখতে হবে যে আমাদের মল্লযুদ্ধ দিয়াবলের সাথে। আর সে কখনোই চাইবে না যে এই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করি। শয়তান কালভেরীর পাহাড়ে ক্রুশের কাছে পরাজিত হয়েছে তবুও আজ সে অনেক বিশ্বাসীদের দমন করে ফেলেছে। কারণ আজ অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসী খ্রীষ্টের সাবধান বাণীর উপর গুরুত্ব না দিয়ে ছুটে চলেছে ধন সম্পত্তি প্রাচুর্যের পিছনে যেখানে জীবন শেষ। শুধু তাইই নয় আজ অনেক খ্রিষ্টীয় যাজক, প্রচারক ও মিশনারী খ্রীষ্ট কে সামনে রেখে তাঁর আড়ালে ধন সম্পত্তি সম্পদের প্রাচুর্যে ডুবে আছে/যাচ্ছে। আজ আমরা অনেকে হয়তো প্রভুর পশ্চাদগামী হয়েছি ঠিকই কিন্তু আমরা স্বর্গে ধন সঞ্চয়ের বদলে এই পৃথিবীতেই সে বিষয়ে বেশি আগ্রহী বা মনোযোগ দিয়ে ফেলছি। অর্থাৎ দুই মনিবের দাসত্ব করছি। তাই আমার আকর্ষণ, মনোযোগ ও ভালোবাসা ধন সঞ্চয়ের প্রতি। আমরা তুচ্ছ জ্ঞান করছি ঈশ্বরের বাক্য কে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কে। জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সাথে শত্রুতা এই বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ আজ হয়তো আমাদের কাছে অর্থহীন হয়ে গিয়েছে।
আজ অনেকে যারা নিজেদের যদিও বিশ্বাসী বলে পরিচয় দেয়, তারা শুধুমাত্র যীশুর কাছে আসে এই পার্থিব জীবনের লাভ, সুযোগ ও জাগতিক অভিলাষ সকল পূরণের উদ্দেশ্যে। তারা পরিত্রাণের জন্য আসে না। আর তাদের প্রার্থনার বিষয় হলো জাগতিক অভিলাষের অভাব পূরণ। প্রভু যীশু যে লোভ থেকে এই জীবন কে রক্ষা করার জন্য সাবধান করেছেন, সেই লোভের বশবর্তী হয়ে আজ তারা তাদের অমূল্য জীবন কে নষ্ট করে ফেলছে। পরিত্রাণ তাদের কাছে বাইবেলের ছোট্ট একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাছে এই জাগতিক জীবনই সব কিছু যা খুব ক্ষনিকের। শয়তান তাদের চোখ কে অন্ধ করে দিয়েছে।
ঈশ্বর আমাদের অন্তঃকরণ জানেন। তিঁনি জানেন আমার কি প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, তিঁনি প্রতিজ্ঞাও করেছেন যে, আমাদের যা যা প্রয়োজন আছে, সে সকল তিঁনি আমাদের দেবেন। কিন্তু একটা শর্ত আছে - "তোমরা বরং তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও" (লুক 12:31)।
আমরা কি বিষয় সচেষ্ট ধন সম্পদের প্রাচুর্য লাভ না তাঁর রাজ্যের বিষয়ে ???
প্রার্থনা ::- প্রভু যীশু আমাকে অনুগ্রহ দাও যেন আমি মানুষের চোখে যা উচ্চ, প্রশংসনীয় যা তোমার কাছে ঘৃণিত সে সকল বিষয় আমার মধ্যে থেকে দূর করে যেন তোমার রাজ্যের বিষয় সচেষ্ট হয়ে স্বর্গে ধন সঞ্চয় করতে পারি।

Comments
Post a Comment