ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় উপদেশ
"তাহাতে লোকে তাঁহার উপদেশে চমৎকৃত হইল, কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, অধ্যাপকদের ন্যায় নয়।" (মার্ক। 1:22)
উক্ত পদে আমরা দুই ধরণের উপদেশ লক্ষ্য করি। প্রথমতঃ প্রভু যীশু যে উপদেশ বা সুসমাচার প্রচার করতেন তা ছিল ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় । এবং দ্বিতীয়তঃ অধ্যাপকের ন্যায় অর্থাৎ যা ছিল প্রচলিত প্রথা, আচারানুষ্ঠান, ঐতিহ্য ভিত্তিক, গতানুগতিক রীতিনীতি ভিত্তিক সাধারণ। যা লোকেদের মনে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারতো না।
বিপরীতে খ্রীষ্টের শিক্ষা ছিল অতন্ত্য আধ্যাত্মিক। প্রভু যীশু যে কেবল মাত্র সত্যের পক্ষে খুবই দৃঢ়তার সাথে ক্ষমতাপন্ন
ব্যক্তির ন্যায় উপদেশ দিতেন তা নয়। তিঁনি নিজেই ছিলেন পথ, সত্য ও জীবন। তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র পাপের লেশ বা অসত্যতা ছিলোনা। তিঁনি যেমন ভাবে আহ্বান জানিয়েছিলেন পাপ থেকে মন পরিবর্তনের এবং স্বচ্ছ পবিত্রতায় জীবন যাপনের জন্য, অর্থাৎ তিঁনি যে শুধুমাত্র উপদেশ দিতেন তা নয়, তাঁর জীবন যাপনও ছিল সেই প্রকার। তিঁনি যা উপদেশ দিতেন তা তিঁনি তার জীবনের মধ্যে দিয়ে দেখাতেন।

তোমাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলিয়া প্রমাণ করিতে পারে? যদি আমি সত্য বলি, তবে তোমরা কেন আমাকে বিশ্বাস কর না? (যোহন 8:46)
আমরা লক্ষ্য করি প্রথম শতাব্দীর মন্ডলীর ইতিহাসে, ঠিক ঐ একই পন্থায় প্রভু যীশুর শিষ্যরা ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় কর্তৃত্বের সাথে সুসমাচার প্রচার করেছিল। শুধু তাইই নয় তাঁদের জীবন যাত্রাও সেরূপ ছিল। তাঁরা এই পৃথিবীস্থ বিষয় সকলে কখনোই মনোযোগ দেয়নি, তুচ্ছজ্ঞান করেছিলো। পবিত্রতা ছিল তাঁদের জীবন যাপনের মূল বিষয়। পিতার ইচ্ছা পালনের উপরে তাঁদের মনোযোগ ছিল। মানুষ কে খুশি করার উদ্দেশ্যে নয় পিতার ইচ্ছা পালনই ছিল তাঁদের কাছে প্রধান বিষয়। যে পিতর প্রভু যীশুকে তিন তিনবার অস্বীকার করেছিল, আবার পূর্বের জীবনে ফিরে গিয়েছিল, সেই পিতর যখন পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হলেন তখন কি হয়েছিল?

এই কথা শুনে তাদের হৃদয়ে খুব আঘাত লাগল এবং তারা পিতর ও অন্য প্রেরিতদের বললেন, “ভাইয়েরা আমরা কি করব?” তখন পিতর তাদের বললেন, “আপনারা প্রত্যেকে আপনাদের পাপ ক্ষমার জন্য মন ফেরান এবং যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিষ্ম নিন, তাহলে পবিত্র আত্মার দান পাবেন। তখন যারা পিতরের কথা শুনল, তারা বাপ্তিষ্ম নিল, তারফলে সেই দিন প্রায় তিন হাজার আত্মা তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলো। (প্রেরিতদের কার্য্য 2:37-38, 41)
যে শিষ্যরা ইহুদিদের ও রোমান সৈন্যদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বদ্ধ ঘরের মধ্যে দিন যাপন করছিল, তাঁরাই আবার সেই সময় ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় কর্তৃত্বের সাথে সুসমাচার প্রচার করে সারা জগৎ ওলট পালট করে দিয়ে ছিলো।

কিন্তু তাঁহাদিগকে না পাওয়াতে তাহারা যাসোন এবং কয়েক ভ্রাতাকে নগরাধ্যক্ষদের সম্মুখে টানিয়া লইয়া গেল, ও চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, এই যে লোকেরা জগৎ-সংসারকে লণ্ডভণ্ড করিয়া ফেলিয়াছে, ইহারা এ স্থানেও উপস্থিত হইল; (প্রেরিত - 17:6)।
আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে আমরা লক্ষ্য করি এই দুই ধরণের সুসমাচার প্রচার/উপদেশ। যে সুসমাচারের দ্বারা মানুষের হৃদয়ে শেল বিদ্ধ হয়, মানুষ আশ্চর্যচকিত হয়, পাপ সমন্ধে চেতনাপ্রাপ্ত হয়, পশ্চাত্যাপ করে, মন পরিবর্তনের দিকে আকর্ষিত হয়। সেই রকম ক্ষমতাপন্ন কর্তৃত্বের সাথে সুসমাচার প্রচারক বা উপদেশক আজ খুবই কম।
বিপরীতে সেই গতানুগতিক সাধারণ প্রচার, প্রচলিত প্রথা ও আচারানুষ্ঠান এবং রীতিনীতি ঐতিহ্য ভিত্তিক উপদেশ যা বাইবেলে খুঁজে পাওয়া যায়না এই সব বিষয়ের উপর বর্তমান মণ্ডলী খুবই সচেষ্ট। এই সকল প্রচার বা উপদেশ অন্যের জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারছেনা। মন পরিবর্তন, পশ্চাতাপ এবং পবিত্রতার প্রতি আকর্ষণ আজ লুপ্তপ্রায়।
সাধুপৌল বলেছেন:-

কারণ আমি সুসমাচারের জন্য কোনো লজ্জা পাই না; কারণ এটা হলো প্রত্যেক বিশ্বাসীর পরিত্রানের জন্য ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমে ইহূদির জন্য এবং পরে গ্রীকদের জন্য। (রোমীয়1:16)

তুমি এই সকল কথা বল, এবং সম্পূর্ণ ক্ষমতার সহিত উপদেশ দেও, ও অনুযোগ কর; তোমাকে তুচ্ছ করিতে কাহাকেও দিও না।
(তীত। 2:15)
কিন্তু আজ তা ব্যর্থ হচ্ছে তার প্রধান কারণ স্বর্গস্থপিতার ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দেওয়া, মানুষ কে খুশি করার সর্বাগ্র ইচ্ছা এবং পবিত্রতা কে অবজ্ঞা করা। হ্যাঁ, আমরা যে সত্য ঈশ্বরের বাক্য প্রচারের দ্বায়িত্ব পেয়েছি ও প্রচার করছি, সেই অনুযায়ী আমাদের জীবন যাত্রা নয়। আজ 90% প্রচারক, যাজকবর্গ, মিশনারীর জীবন যাত্রা অপবিত্রতার মধ্যে ডুবে আছে/যাচ্ছে। যে সুসমাচার/উপদেশ দিচ্ছে সেই অনুযায়ী তার জীবন যাত্রা নয়। যে জগৎ থেকে দূরে থেকে ও খ্রীষ্টের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার আহ্বান/আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, কিন্তু সে নিজেই সেই জগতের অভিলাষের মধ্যে ডুবে আছে। লোভ, লালসা, ধন সম্পত্তি, ব্যাংক ব্যালেন্স, ব্যভিচারের মত্ততায় ব্যক্তি কখনোই ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় কর্তৃত্বের সাথে সুসমাচার প্রচার করতে পারেনা।
শয়তান খুব ভালো করেই জানে যদি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় কর্তৃত্বের সাথে সুসমাচার প্রচার হয়, তাহলে তার সাম্রাজ্য গেল। দিয়াবল খুবই চালাক ও চতুর এবং ছলনাকারি। সে খুব ধূর্ততার সাথে তার জাল বিছিয়ে রেখেছে। সেই জালে অর্থাৎ জাগতিক লোভ, লালসা, ধন সম্পত্তি, ব্যাংক ব্যালেন্স, ব্যভিচারের মত্ততায় আজকের বহু প্রচারক, যাজক ও মিশনারী আবদ্ধ হয়ে আছে যার ফলে আজ অনেক মানুষ সত্য কে জেনে গ্রহণ করেও আবার জগতের দিকে আকর্ষিত হয়েছে। তারা বিঘ্ন প্রাপ্ত হয়েছে। যার কাছে থেকে সে পবিত্রতা ও পাপ সম্পর্কে জেনেছে, মন পরিবর্তন ও পশ্চাতাপ শব্দ শুনেছে, কিন্তু যখন তার জীবন যাত্রার দিকে লক্ষ্য করছে, তখন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আবার জগৎ সংসারের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে/হয়েছে।
প্রভু যীশু বলেছেন:-

কিন্তু যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়, তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল। বিঘ্ন প্রযুক্ত জগৎকে ধিক্! কেননা বিঘ্ন অবশ্যই উপস্থিত হইবে; কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা বিঘ্ন উপস্থিত হইবে। (মথি। 18:6-7)
দুঃখের বিষয় আজ অনেক মণ্ডলী এই রকম কিছু বিঘ্নজনক বিষয়ে বিঘ্ন প্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের জীবন ও কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে আত্মিকতার ফল উৎপন্ন না করতে পারি, তাহলে আমরা যতই সুসমাচার প্রচার/উপদেশ দিই না কেন, তা হবে এক গতানুগতিক সাধারণ উপদেশ যা অন্যের জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। যার প্রভাব এখন বেশিরভাগ মণ্ডলীতে বিরাজমান। ফলে মণ্ডলী ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রার্থনাবিহীন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। প্রভুর আগমনের জন্য আজ বহু মণ্ডলী প্রস্তুত নয়। ভ্রান্ত শিক্ষার জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
প্রভু যীশু বলছেন:-

কোনও উচ্চ স্থান থেকে পতিত হয়েছ, তা তুমি স্মরণ করো। তুমি মন পরিবর্তন করো ও প্রথমে যে কাজগুলি করছিলে, সেগুলি করো। কিন্তু যদি মন পরিবর্তন না করো, আমি তোমার কাছে এসে তোমার দীপাধারটি স্বস্থান থেকে অপসারিত করব।
(প্রকাশিত বাক্য 2:5)

তুমি জেগে ওঠ এবং বাদবাকী যারা মরে যাবার মত হয়েছে তাদের শক্তিশালী করে তোলো; কারণ আমার ঈশ্বরের সামনে তোমার কোন কাজই আমি সিদ্ধ হতে দেখিনি। আমি তোমার সব কাজের কথা জানি, তুমি ঠান্ডাও না গরমও না, তুমি হয় ঠান্ডা, না হয় গরম হলে ভাল হত। সেইজন্য তুমি ঈষৎ গরম, না গরম, না ঠান্ডা, এই জন্য আমি নিজের মুখ থেকে তোমাকে বমি করে ফেলে দেব। যার কান আছে, সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলী গুলোকে কি বলছেন।
(প্রকাশিত বাক্য 3:2, 15-16, 22)
প্রার্থনা::- স্বর্গস্থপিতা তুমি আমার অন্তঃকরণ জানো। তোমার অনুগ্রহ দাও যেন আমি তোমার মনে মতো হয়ে উঠতে পারি এবং তোমার রাজ্য বৃদ্ধিতে যোগ্য কার্যকরী হয়ে উঠতে পারি। পবিত্রতায় যেন আমি জীবন যাপন করতে পারি এবং সর্বোপরি আমার জীবনের মধ্যে দিয়ে তোমার নাম কে উচ্চ প্রশংসা দিতে পারি। যীশু নামে এই প্রার্থনা শ্রবণ করো।
Comments
Post a Comment